পুলিশের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়ে ধরা

পুলিশের বিরুদ্ধে লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ‘মিথ্যা’ অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়ে ফেঁসে গেছেন চট্টগ্রামের মাছ ব্যবসায়ী এক যুবক।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 06:59 AM
Updated : 11 Oct 2020, 07:11 AM

টানা ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার বাবলা দাশ (৩০) নামের ওই যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়েছে বলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ জানিয়েছেন।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আইপিএল এর জুয়া খেলে ব্যবসায় লোকসান হয় বাবলার। পাওনাদারের হাত থেকে রক্ষা পেতে সে এ ধরনের নাটক সাজানোর কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।”

গ্রেপ্তার বাবলার বাসা লালখান বাজারের টাংকি পাহাড় লেইনে। সেখানেই তিনি মাছের ব্যবসা করেন।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পলাশ বলেন, শনিবার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা টেলিফোনে কোতোয়ালি থানার ওসিকে অভিযোগ করেন, অটোরিকশা থেকে নামিয়ে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে মাছ ব্যবসায়ী বাবলার এক লাখ ১৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

“অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়। পাশাপাশি মাছ ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বাবলাকেও থানায় আসতে বলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে দাবি করে, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ডিসি হিলের সামনে থেকে নীল রঙের একটি পুলিশের গাড়িতে তাকে তুলে নেওয়া হয়।

“সে বলে, সেখানে এক হাতে ইয়াবা ও অন্য হাতে টাকা দিয়ে ছবি তুলে তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে নিউ মার্কেট এলাকায় তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় পুলিশ।”

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বলেন, বাবলার অভিযোগের ভিত্তিতে কোতোয়ালি থানায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তারা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

“এদিকে বাবলা প্রথমে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করলেও জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে বলে ছিনতাই হয়েছ ৫০ হাজার টাকা। সর্বশেষ সে বলে দুই হাজার ৭০০ টাকা পুলিশ তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে।

“বাবলার বিভ্রান্তিকর কথায় আমাদের সন্দেহ বেড়ে যায়। টানা জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে স্বীকার করে, ব্যবসায় লোকসানের কারণে তার পাওনাদার বেড়ে গেছে। পাশাপাশি আইপিএল এর জুয়া খেলে সে অনেক টাকা হারিয়েছে। সেজন্য এই ধরনের নাটক সাজিয়েছে।”

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) নোবেল চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বাবলাকে নিয়ে ডিসি হিল এলাকায় গেছি। সে অভিযোগে পুলিশের গাড়িতে যেসব স্থানে নিয়ে ঘোরানোর কথা বলেছে, সেসব জায়গার সিসি টিভি ফুটেজ দেখা হয়েছে। কিন্তু তার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।”

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত ১ অগাস্ট থেকে বিভিন্ন সময়ে আইনুদ্দীন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে নগদে ও বাকিতে মাছ কিনেছিলেন বাবলা। সে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন আইনুদ্দীন। তখন বাবলা তাকে ওই ‘ছিনতাইয়ের গল্প’ বলেন। আইনুদ্দীন তখন বিষয়টি সমিতির নেতাদের বললে তারা থানায় খবর দেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাবুল সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার পর ফোন করে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগটি জানিয়েছিলাম। পরে তো পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দেখা গেল ছেলেটা প্রতারক।”

মাছ ব্যবসায়ী আইনুদ্দীন তার প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ৭০ হাজার আত্মসাতের অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় বাবলার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানান সহকারী কমিশনার নোবেল।