পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার বাদী এখন দুদকের মামলার আসামি

চট্টগ্রামে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মিথ্যা মামলা’ করে বাদী নিজেই ফাঁসলেন মামলার জালে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2020, 02:51 PM
Updated : 14 Sept 2020, 02:51 PM

নুরুল আবসার নামে ওই ব্যক্তির মামলার সত্যতা না পাওয়ার কথা জানিয়ে রোববার তার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম।

‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে পুলিশ ১৫ লাখ টাকা আদায় করেছিল অভিযোগ করে গত বছরের ২৫ মার্চ আদালতে মামলা করেছিলেন আবসার।

এই মামলায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়াসহ (বর্তমানে পাঁচলাইশ থানায় কর্মরত) থানার ছয় পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছিল। অভিযোগটি আমলে নিয়ে আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করতে আদেশ দিয়েছিল।

মামলার অন্য আসামিরা ছিলেন- পতেঙ্গা থানার এসআই প্রণয় প্রকাশ, আব্দুল মোমিন, এএসআই তরুণ কান্তি শর্মা, মো. কামরুজ্জামান, মিহির কান্তি। এছাড়াও মো. ইলিয়াছ, জসিম, নুরুল হুদা নামে আরও তিন জনকে আসামি করা হয়েছিল। যাদের ‘পুলিশের সোর্স’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল মামলার আর্জিতে।  

পুলিশের বিরুদ্ধে করা এই মামলার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানান দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক লুৎফর কবির চন্দন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিথ্যা অভিযোগে মামলা করলে তা যদি প্রমাণিত না হয়, তাহলে বাদীর বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। তাই দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৮(গ) ধারায় নুরুল আবসারের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।”

নিজেকে পতেঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে আবসার তার মামলায় অভিযোগ করেছিলেন, ২০১৮ সালের ১ জুন বিকালে পতেঙ্গা থানা কাঠগড় এলাকা থেকে তাকে পুলিশ সদস্যরা তুলে নিয়ে ওসি আবুল কাশেম ভূ্ঁইয়ার কাছে নিয়ে যান। তার কাছ থেকে মোবাইল, গাড়ির চাবি, টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়।

তার দাবি, পরদিন দুপুর পর্যন্ত আটকে রেখে ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী অপবাদ দিয়ে’ ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। পরে তিনি ১৫ লাখ টাকা এএসআই কামরুজ্জামানের হাতে দেন। কিন্তু অবশিষ্ট টাকা না দেয়ায় তাকে বিদেশি মদ উদ্ধারের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান দেওয়া হয়।

এদিকে আদালতের নির্দেশে করা তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। গত ২৫ মার্চ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলটি নিষ্পত্তি করে।

আবসারের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় বলা হয়, মামলায় নুরুল আবসার তার শ্যালকের সাথে এএসআই তরুণ কান্তির শর্মার সাথে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে ১৫ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগেরও কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সে (নুরুল আবসার) চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। অফিসাররা তাকে বিদেশি মদসহ গ্রেপ্তার করেছিল। আমার দায়িত্ব ছিল ইনচার্জ হিসেবে মামলা রেকর্ড করা।”

কারও ইন্ধনে নুরুল আবসার মামলাটি করেছিলেন বলে সন্দেহ পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কাশেমের।

তিনি বলেন, “অফিশিয়াল দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হয়রানি মামলার শিকার হয়েছি। এই মামলাটির ফলে পুলিশের মনোবল চাঙ্গা হবে এবং ভাবমূর্তির জন্য বিষয়গুলো সহায়ক হবে।

“সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার যে ট্রেন্ড চালু হয়েছে এই বিষয়টি থেকে সবাই শিক্ষা নেবে। কেউ মিথ্যা মামলা করলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেবে।”