বন্দর নগরীর ১৫০ কিমি সড়কের হাল ফেরাতে গর্ত ভরাট

বন্দর নগরীর প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে দেড়শ কিলোমিটার বেহাল হয়ে আছে। অসময়ের বর্ষা আর অর্থের অভাবে থমকে আছে স্থায়ী মেরামত কাজ।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2020, 04:43 PM
Updated : 3 Sept 2020, 04:43 PM

নগরবাসী ও পণ্যবাহী যানের দুর্ভোগ কমাতে আপদকালীন উদ্যোগ হিসেবে গর্ত ভরিয়ে অস্থায়ী মেরামত কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।

চলতি সপ্তাহে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মূল সড়কই খানাখন্দে ভরা। গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টাচ্ছে নিয়মিত। আর ভাঙা সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

সঙ্গে যোগ হয়েছে অসময়ের বর্ষা। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টির কারণে কাদায় ভরে যাচ্ছে পলেস্তারা ওঠা সড়কগুলো। তখন হেঁটে চলাও দায় হয়ে পড়ে।

নগরীর প্রধান সড়কগুলোর ১২৭ কিলোমিটার অংশ মেরামতের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গত সপ্তাহে উপআনুষ্ঠানিক (ডিও) চিঠি দিয়েছে সিসিসি।

নগরীতে সিসিসির অধীনে প্রায় ৮১৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৩২৮ কিলোমিটার কংক্রিট ঢালাই, ২৫ দশমিক ছয় কিলোমিটার ইট বিছানো রাস্তা এবং ২২ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা আছে।

বৃহস্পতিবার প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন জানিয়েছেন নগরীর ১৫০ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত। 

হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মামুনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের কাজ চলছে। কিন্তু শেষ হচ্ছে না। বৃষ্টি পড়লে অবস্থা আরও খারাপ হয়।

“প্রতিদিন এখান থেকে চৌমুহনী অফিসে আসা-যাওয়া করা যে কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না।”

শুধু পিসি রোড নয়, নগরীর স্ট্র্যান্ড রোড (বারিক বিল্ডিং-মাঝিরঘাট-সদরঘাট) বেহাল প্রায় দুই বছর ধরে। এই সড়কের মাঝিরঘাট অংশে সড়কের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই ভার।

স্ট্র্যান্ড রোড ও পিসি রোড দুটি জাইকার অর্থায়নে নতুনভাবে সংস্কার করা হচ্ছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে দুই সড়কেরই কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসক সুজন।

চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বারিক বিল্ডিং থেকে বাংলাবাজার-মাঝিরঘাট হয়ে কদমতলী মোড় পর্যন্ত রাস্তা বলে কিছু নেই। প্রতিদিন দু-তিনটি করে গাড়ি ওল্টায়। গাড়ির যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়, মালামালের ক্ষতি হয়।

“একটা গাড়ি গর্তে পড়লে সেটা উঠাতে অনেক সময় লাগে। এগুলো তো আমাদেরই করতে হয় রোদে ‍পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে। তাড়াতাড়ি যাতে প্রশাসন উদ্যোগ নেয় সেটাই চাই।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরীর বিভিন্ন সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এভাবেই ইট দিয়ে ভরাট করে অস্থায়ী মেরামত করছে। 

আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মুনির আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রামে সমিতির গাড়ি আছে আট হাজার। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ২০ হাজার গাড়ি আসা-যাওয়া করে।

“ঘাটগুলো সব স্ট্র্যান্ড রোডে আর বন্দরে চলাচলের অন্যতম মূল সড়ক পিসি রোড। মালে ভর্তি গাড়ি গর্তে পড়লেই স্প্রিং ভাঙে, চাকা যায়। একটা স্প্রিং লাগাতে এক হাজার টাকার মতো খরচ। একটা চাকা গেলে কমকরে ২৫ হাজার টাকার ধাক্কা।”

এছাড়া নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং মোড় সংলগ্ন অংশে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।

বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত সড়কের বন্দর সংলগ্ন অংশে ওয়াসার রোড কাটিং শেষে এখন চলছে মেরামতের কাজ।

বন্দরটিলা এলাকার বাসিন্দা শামীম হাসান বলেন, বৃষ্টি হলেই রাস্তার বিভিন্ন অংশে কাদা। আর রোদ পড়লে উড়ছে ব্যাপক ধুলা। তার উপর বন্দরের গেটে গাড়ির লম্বা লাইন আর ইপিজেডের আশেপাশের এলাকায় সকাল-সন্ধ্যায় যানজট। এই হলো আমাদের অবস্থা।

এছাড়া নগরীর আরাকান সড়কের বহদ্দারহাট মোড় থেকে বাস টার্মিনাল হয়ে চান্দগাঁও পর্যন্ত সড়কের একপাশ, অনন্যা আবাসিক এলাকার মূল সড়ক, ফিরিঙ্গিবাজার কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক, জাকির হোসেন রোড, মুরাদপুর ও অক্সিজেন এলাকার সড়কও বেহাল।

পাশাপাশি সল্টগোলা ক্রসিং, দুই নম্বর গেট, কাপ্তাই রাস্তার মোড় এলাকার সড়কও কমবেশি খানাখন্দে ভরা।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র রাইফেল ক্লাব মোড় থেকে বোস ব্রাদার্স অংশ আর নন্দনকানন সড়কে পলেস্তারা উঠে ইট বেরিয়ে আছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরীর বিভিন্ন সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এভাবেই ইট দিয়ে ভরাট করে অস্থায়ী মেরামত করছে। 

এসব মূল সড়কের পাশাপাশি নগরীর অলিগলির অবস্থাও বেহাল। প্রায় প্রতিবছর এভাবে বর্ষায় জলাবদ্ধতার পর নগরীর সড়কগুলো গর্তে ভরে যায়।

চট্টলা বাস মিনিবাস হিউম্যান হলার পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ কে খান-হালিশহর-সরাইপাড়া-বি ব্লক হয়ে চলাচলকারী ৬ ও ৭ নম্বর রুটের গাড়ি বেশি ক্ষতি হচ্ছে। কাপ্তাই, কালুরঘাট, নতুন ব্রিজ, বহদ্দারহাট এসব এলাকায়ও খারাপ অবস্থা। প্রতিদিন গাড়ির স্প্রিং, চাকা নষ্ট হচ্ছে। একটা চাকা সর্বনিম্ন ছয় হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা দামের। রাস্তা খারাপ বলে যাত্রীরাও খুব কষ্ট পাচ্ছে।

সিসিসি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, “নয়টি টিম করেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর পেলে তারা গিয়ে প্যাচওয়ার্ক করছে। ভারি বর্ষণ ও জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগ সড়কই ভরে গেছে খানাখন্দে।

“অনেক এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

অস্থায়ীভাবে ফকিরহাট, কালা মিয়া বাজার, বহদ্দারহাট মোড়, এফআইডিসি রোড, সল্টগোলা ক্রসিং, বন্দর কাস্টমস ও জাকির হোসেন রোডে সংস্কার কাজ চলছে বলে জানান সুজন।   

সিসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিয়মিত মেরামত কাজের জন্য মন্ত্রণালয়ে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি। এটাও অপ্রতুল।

“বিভিন্ন সংস্থা নানা স্থানে উন্নয়ন কাজ করছে। কেউ শেষ করেছে। কিন্তু টানা বর্ষার কারণে কাপের্টিং করতে পারছি না। অন্তত টানা দু’দিন বৃষ্টি না হলে কিছু সড়ক কাপের্টিং করা যেত। আপাতত অস্থায়ী মেরামত করা হবে। আগামী মাসে স্থায়ী মেরামত কাজ শুরু করব।”