চট্টগ্রামে পরীক্ষার ৩১ শতাংশ পজিটিভ, মৃত্যুও বেশি

সারা দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় গড়ে ১৯ দশমিক ০৩ শতাংশ পজিটিভ ফল এলেও চট্টগ্রামে এই হার অনেক বেশি, ৩১ শতাংশ।

মিন্টু চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2020, 07:08 PM
Updated : 1 July 2020, 07:08 PM

চট্টগ্রাম মহানগরসহ উপজেলাগুলোতে গত তিন মাসে প্রায় ২৮ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি পাওয়া গেছে আট হাজার ৮৫২ জন। তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৫৫০ জনই শনাক্ত হয়েছেন গত এক মাসে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে এ হিসাব পাওয়া গেছে।

তবে আরও কিছু দিনের পরীক্ষার হিসেব দেখে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়া যাবে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী।

চট্টগ্রাম জেলায় গত ২৫ মার্চ ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু হয়। এরপর ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলায় সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসে শনাক্ত ব্যক্তি ধরা পড়ে।

একটি ল্যাব দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে সরকারিভাবে চারটি, বেসরকারি দুটি হাসপাতাল এবং কক্সবাজারের একটি ল্যাবে চট্টগ্রাম জেলার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।

বিআইটিআইডি ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস (সিভাসু), বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী, মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় ৩০ জুন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৭ হাজার ৯৫৯টি। এর মধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আট হাজার ৮৫২ জন। পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৮ হাজার ৪৩২টি, করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার ৯৮ জনের, শতকরা হিসেবে এ হার ৩৩ দশমিক ০৮ শতাংশ।

আর চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে নয় হাজার ৫২৭ জনের। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৭৫৪ জন। উপজেলা পর্যায়ে শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

অথচ সারা দেশে বুধবার পর্যন্ত সাত লাখ ৮৪ হাজার ৩৩৫টি নমুনা পরীক্ষা করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে এক লাখ ৪৯ হাজার ২৫৮ জন। নমুনা পরীক্ষার হিসেবে সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার প্রায় ১৯ দশমিক ০৩ শতাংশ।

সারা দেশের তুলনায় চট্টগ্রাম জেলায় এই হার অনেক বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, “আমরা ধরে নিচ্ছি এ অঞ্চলের মানে চট্টগ্রাম জেলার মানুষজন স্বাস্থ্যবিধি কম মানছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে কল-কারখানা বেশি, এখানকার সাথে আন্তঃজেলার যোগাযোগও বেশি। এ কারণে মানুষজনের যাতায়াতও মানে আসা-যাওয়ার হারও বেশি। লোকজনের বেশি আনাগোনার কারণে সংক্রমণও বেশি হতে পারে।”

উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণ আগের চেয়ে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিশেষ করে শহরের সাথে সংযুক্ত উপজেলাগুলোতে এ সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ সেখানকার লোকজন চাকরিসহ প্রয়োজনীয় কাজে প্রতিদিন শহরে যাওয়া আসা করছেন এবং সংক্রমিত হচ্ছেন।”

এর বাইরে চট্টগ্রামের ল্যাবগুলোতে নমুনা পরীক্ষার হার বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নমুনা পরীক্ষা যত বেশি হবে সংক্রমণের হারও বাড়বে। এছাড়া ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ছাড়া দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যগুলোতে পজিটিভ হওয়ার হার বেশি।”

ল্যাবে গত কয়েক দিনে গড়ে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ার দাবি করে সিভিল সার্জন বলেন, “বর্তমানে যে হারে পরীক্ষা এবং শনাক্ত পাওয়া যাচ্ছে তা ভবিষ্যতে আরও কয়েক দিন দেখে তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাবে।”

মঙ্গলবার সাতটি ল্যাবে চট্টগ্রামের এক হাজার ৩৪৫টি নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ মিলেছে ৩৭২ জনের, সোমবার এক হাজার ৫৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ পাওয়া যায় ৪৪৫ জনের, রোববার ৯৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ মিলে ৩৪৬ জনের। শনিবারে ৫৯০টি নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমিত পাওয়া যায় ৬৪ জনকে।

সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বী করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় সবার সচেতন থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এদিকে চট্টগ্রামে গত তিন মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ১৭৮ জন, মৃত্যুর হার দুই দশমিক ০১ শতাংশ। চট্টগ্রাম মাহনগরীতে মৃতের সংখ্যা ১৩৪ জন এবং ১৪ উপজেলায় এ সংখ্যা ৪৪ জন।

অথচ সারা দেশে এ ভাইরাসে বুধবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৮৮৮জন, শতকরা হিসেবে এ হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

চট্টগ্রাম জেলায় এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৬৫ জন।