রোববার বন্দরনগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউটে ‘রেড জোন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের কোভিড-১৯ কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ সংক্রান্ত কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র নাছির বলেন, “আমরা একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা জানি। এ পরিস্থিতি প্রত্যেকের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিজের সুরক্ষা নিজেরই হাতে।
“এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও অনেকেই আমলে আনছেন না। এই উদাসীনতাও একটি মারাত্মক ব্যাধি। যারা জেগে ঘুমায়, তাদের জাগানো যায় না। এই আত্মঘাতী ঘুমের ভান স্বেচ্ছাসেবকরাই ভাঙাতে পারেন।”
নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে নাছির বলেন, “স্বেচ্ছাসেবকদের সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারের কাছে শারীরিকভাবে সরাসরি যেতে হবে না। এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে।
“রোগী যেখানেই থাকুক, দূর থেকে মোবাইল বা ভিডিও কলে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, ওষুধপত্র ও চাহিদা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া যাবে। সুতরাং স্বেচ্ছাসেবকদের নিরাপত্তা ঝুঁকির কোনো আশঙ্কা নেই।”
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হতে মানুষকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে স্বেচ্ছাসেবকরা সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মেয়র নাছির।
ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা অবলম্বন এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, জীবন থাকলে জীবিকার কথা চলে আসে। তাই জীবন ও জীবিকার সমন্বয় করে কাজ করতে হচ্ছে এবং সারা বিশ্ব তাই করছে।
“যারা খেটে খাওয়া মানুষ, তাদের তো সঞ্চয় ও সম্পদ বলতে কিছু নেই। তারা যদি ক্ষুধায় মারা যায়- এটাও হত্যার শামিল এবং তা আমরা কিছুতেই করতে পারি না। তবে সংক্রমণ প্রবণ এলাকা সুনির্দ্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে শুধু সেখানে লকডাউন করার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে।”
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে নাছির বলেন, “করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। আমদেরও ছিল না। তাই পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে সে সম্পর্কে ধারাণা ছিল না। শুরুতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা ছিল।
“এসব নিয়ে সমালোচনা থাকতে পারে, তবে পরামর্শও থাকতে হবে। তাই কখন, কোথায় কী ভুল হয়েছে, কেন হয়েছে সে কথা বার বার না লিখে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়, কী করা যায় সেই পরামর্শ ও পথ বাতলে দিলে আমরা অবশ্যই গ্রহণ করব।”
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা যে দায়িত্ব পালন করছেন, সেজন্য সমাজ ঋণী হয়ে থাকবে। এটা পেশা না হলেও একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা। শুধু করোনাকালে নয় আপনাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা সকল ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতিকে আশার আলো দেখাবে।”
অন্যদের মধ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু, নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু ও শৈবাল দাশ সুমন, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, আইইডিসিআরের প্রশিক্ষক ডা. মোহাম্মদ ওমর কাইয়ুম ও ডা. তৌহিদুল আনোয়ার কর্মশলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণ করেন। আইইডিসিআর ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় এই কর্মশালার আয়োজন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।