ক্লিনিক মালিক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার দাবি

একাধারে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, চিকিৎসকদের সংগঠনের নেতা ও ক্লিনিক মালিক- এই তিন পরিচয়ে থাকা ব্যক্তিদের কারণে চট্টগ্রামে চিকিৎসা পেতে ‘হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে’ অভিযোগ করে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2020, 05:48 PM
Updated : 4 June 2020, 05:48 PM

বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ- এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

চট্টগ্রামে সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সব ধরনের চিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী বলেন, “কিছু চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকের ষড়যন্ত্রে সাধারণ মানুষ সেবা না পেয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পাবার মূল কারণ কিছু চিকিৎসক, তারা একদিকে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার আবার অন্যদিকে বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক। তাদের  দুই ধরনের ভূমিকার কারণে মানুষ সরকারি হাসপাতালে প্রত্যাশিত সেবা পায় না, আর বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়েও জিম্মি।”

কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী বলেন, “সরকার সব হাসপাতালে সব ধরনের রোগীদের সেবা নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের কিছু বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক ও কতিপয় বিএমএ নেতারা যোগসাজশে প্রশাসনকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল প্রদর্শন, করোনাভাইরাসের রোগীদের সেবা দিলে সাধারণ রোগীদের অসুবিধা হবে ইত্যাদি অজুহাতে কোনো রোগী ভর্তি না করে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে পুরো চট্টগ্রাম নগরজুড়ে সেবার জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে।”

সমাবেশে কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর বলেন, “যারা পেশাজীবী সংগঠনের নাম করে জনগণকে জিম্মি করেছে তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিতে চাই। একজন চিকিৎসক নেতার দম্ভের শিকার আমরা হতে চাই না।

“রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় নিয়ে চট্টগ্রাম বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদকসহ কতিপয় ডাক্তার নেতা চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নাভিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। ক্ষমতার দম্ভ ও পেশাকে পুঁজি করে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন না। মানুষ বেঁচে থাকলে নেতাগিরি। মাননীয় পুলিশ কমিশনার, আপনি অনেক ভালো কাজ করেছেন। যে চিকিৎসক নেতা নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।”

নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, “চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। মনে হচ্ছে, চট্টগ্রাম যেন বাংলাদেশের বাইরের কোনো একটি শহর। গত ৪ এপ্রিল বিভাগীয় পর্যায়ের সভায় ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল সরকারকে কথা দিয়েছিল তারা করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা দেবে।

“যখন সেবা দেওয়ার কথা আসল তখন তারা হলি ক্রিসেন্টকে কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা দিল। সেই ঘোষণা দেওয়ার নেপথ্যে কারা আছে তাও আমরা জানি।”

তিনি বলেন, “দুইজন ব্যক্তি চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবাকে জিম্মি করেছে। তাদের একজন ডা. ফয়সাল ইকবাল আরেকজন ডা. লিয়াকত আলী খান। এই সমাবেশ থেকে এ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামবাসীকে সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা দেওয়া ও চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতকে রক্ষার জন্য সরকারকে অনুরোধ করব।

“সরকারি হাসপাতালে যারা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে সেই চিকিৎসকরাই কেউ কেউ বেসরকারি হাসপাতালের মালিক। একটি বিষয় স্পষ্ট করতে হবে, সরকারি কোনো চিকিৎসক কোনো বেসরকারি হাসপাতালে এমডি পদে থাকতে পারবে না। মালিকানা থাকলে তাদের কারণে সরকারি হাসপাতালে উন্নয়ন হবে না।”

সমাবেশ থেকে বেসরকারি ক্লিনিকে কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা সেবা আগামী এক সপ্তাহর মধ্যে কার্যকর করার দাবি জানানো হয়।

পাশাপাশি ক্লিনিকগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা, তদারকিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার দাবি জানানো হয়।

ক্যাব নেতা জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে ক্যাব দক্ষিণ জেলার সভাপতি আবদুল মান্নান, মহানগরের সহ-সভাপতি আবু তাহের, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কে এনএম রিয়াদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।