চট্টগ্রামে খাবার নিয়ে ছিন্নমূল মানুষের পাশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে চট্টগ্রামে ছিন্নমূল পথ শিশুসহ অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের একটি দল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2020, 10:20 AM
Updated : 27 April 2020, 10:20 AM

পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এরকম তিনশ মানুষের কাছে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।

ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান অপিনিয়ন (ইকো) নামের এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের এই উদ্যোগে যোগ দিয়েছেন আরও মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সুহৃদরা।

ইকোর সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি ছুটির শুরুর দিকে একদিন বাজার করে বাসায় ফিরছিলাম।

“এসময় দুই নম্বর গেট এলাকায় দেখলাম ১০ বছর বয়সী ও আরো ছোট চার-পাঁচজন শিশু ডাস্টবিন থেকে খাবার খুঁজছে। এটা দেখে খুব খারাপ লাগলো। আমাদেরও এই বয়সী সন্তান আছে। সবকিছু বন্ধ, এই পথশিশুদের পক্ষে খাবার যোগাড় করা আসলেই খুব কঠিন।”

এই পরিস্থিতিতে পথের বাসিন্দা মানুষদের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকে খাবার বিতরণের সিদ্ধান্ত নেন ইকোর সদস্যরা। নিজেরাই টাকা পয়সা দিয়ে শুরু করেন প্রাথমিক কাজ।

যেহেতু পথের বাসিন্দা ও শিশুদের শুকনো খাবার দিলে তাদের রান্না করতে সমস্যা হবে, তাই রান্না করা খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সংগঠনটির সদস্য সাহেদ মুরাদ সাকুর ডিসি রোডের বাড়িতে হয় রান্নার ব্যবস্থা।

১৪ এপ্রিল আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের সামনে পথশিশু আর ভাসমান মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন তারা। প্রথম দিন ২৫০ জন ভাসমান মানুষকে খাবার দেওয়া হয়।

এরপর নগরীর লালখান বাজার, জুবিলি রোড, নিউমার্কেট, মেরিনার্স সড়ক, কোতোয়ালী মোড়, লালদিঘীর পাড়, আন্দরকিল্লা, সিআরবি, মোমিন রোড, গণি বেকারি, কলেজ রোড, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পথের বাসিন্দা মানুষদের খাবর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল এলাকায় ভিক্ষা করেন নুরুন্নেছা (৬০) ও পঙ্গু কবির হোসেন। কিন্তু রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা কম তাই তাদের আয় নেই।

খাবার পেয়ে তারা বলেন, “রাস্তায় তো মানুষই নাই, দিবে কে? এরা যে খানা দিছে এটার জন্য তাদের দোয়া করি। “

নন্দনকানন এলাকায় তিন পথ শিশু রোববার বৃষ্টির মধ্যে ফুটপাতে বসে ছিল। খাবার হাতে পেয়ে তারা খুব খশি।

ওমর ফারুক রাসেল বলেন, “বাচ্চারা খাবার পেলে যে হাসিটা দেয়, সেটাই আমাদের খুশি। এরা তো আমাদের সমাজেরই মানুষ, আমাদের প্রতিবেশী।

ইকোর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ইউসুফ সোহেল বলেন, “পথের বাসিন্দারা আগে হয়ত অল্প কিছু উপার্জন করতো অথবা হোটেল-রেস্তোরা থেকে কম টাকায় খাবার পেত। এখন সব বন্ধ।

“ফুটপাতের বাসিন্দা, পঙ্গু আর মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলোর তাই খাবার যোগাড়ের কোনো উপায় নেই। আমরা প্রতিদিন ৩০০ জনের খাবার দিচ্ছি। কিন্তু এরকম মানুষ অনেক। কষ্ট লাগে যখন কোথাও উপস্থিত সবাইকে দিতে পারি না।”   

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে যতদিন সরকারি ছুটি চলমান থাকবে ততদিন এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান ইকোর সভাপতি মোহাম্মদ সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি।

পাশাপাশি রিকশাচালক এবং ভ্যানচালকদেরও খাবার দিতে প্রতিদিন মোট পাঁচশ জনের খাবার রান্না করার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা পেলে আশা করি এটা করতে পারব।