ছাত্রলীগ-যুবলীগের কেন এত তাড়া, প্রশ্ন অর্থমন্ত্রীর

ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একাংশ বাংলাদেশকে ‘নিঃশেষ করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ায়’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2019, 03:54 PM
Updated : 9 Oct 2019, 03:54 PM

বুধবার চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন দুটির কর্মকাণ্ড  নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

মুস্তফা কামাল বলেন, “আমিও ছাত্রলীগ করতাম। আমার নামে বিতর্ক নাই কেন? ছাত্রাবস্থায় এই চট্টগ্রাম শহরে টিউশনি করে লেখাপড়া করেছি। আমার টাকা-পয়সা দিয়েছে গ্রামের মানুষ। সেখান থেকে যদি অর্থমন্ত্রী হতে পারি...।

“এখন যারা ছাত্রলীগ-যুবলীগ করে- হোয়াই দে আর ইন হারি? তাদের মধ্যে কেন এত তাড়া? এই প্রতিযোগিতা কীসের প্রতিযোগিতা? দেশকে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য? দেশকে ধ্বংস করার জন্য?”

ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগ এবং বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ছাত্রলীগ এখন ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে রয়েছে।

মুস্তফা কামাল বলেন, “তোমরা সফল হবে না। সফল হবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; সফল হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সফল হবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগে যারা দেশপ্রেমিক এবং কার্যকর স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, তারা।”

ছাত্রলীগ-যুবলীগের দায়বদ্ধতা বেড়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  “আমাদের কাজ করতে হবে বঙ্গবন্ধুর সম্মানের কথা মাথায় রেখে। এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন কোথাও কোনো বির্তকের সৃষ্টি না হয়।”

ছাত্র ও যুবলীগে ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ নানা ধরনের অপকর্ম করছে বলে তার দায় গোটা সংগঠনের উপর পড়ছে বলে সভায় অভিযোগ করেন চট্টগ্রামের নেতারা।

মুস্তফা কামাল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের বলতে পারি, আপনারা ঠকবেন না। গত ১০ বছরে যা করেছি আগামী পাঁচ বছরে তার চাইতেও বেশি কাজ করে, সফল হবে।

“আমরা একটা ট্রানজিশনাল অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। একটা মিসম্যাচ যা হওয়ার কথা ছিল না, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমি আশ্বস্ত করতে পারি- যা ঘটছে এগুলো চিরস্থায়ী নয়। চিরস্থায়ী হবে যা সুন্দর, সত্য ও শাশ্বত। আমি বিশ্বাস করি আমাদের অস্থিরতার দিন কেটে যাবে।”

চট্টগ্রামের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প দিলেও সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।

“চট্টগ্রামের জন্য অসংখ্য প্রকল্প দিয়েছি, কিন্তু আনফরচুনেটলি কাজগুলো হয় নাই। যে সমস্ত প্রকল্প দিয়েছি সেগুলো এখনো আনটাচড রয়ে গেছে। এজন্য আমার মনটা খারাপ।”

আত্মসমালোচনায় চট্টগ্রামের নেতারাও

সভায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, “বহুজন বহু প্রশ্ন করে। কী হচ্ছে? কী হবে? প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১১ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা কল্পনাতীত। যেভাবে মানুষ আমাদের সমর্থন দিতে আসার কথা সেটা হয়নি।

“হাজার ভালো কাজের মধ্যে দুয়েকটা ভুলে ফেইসবুকে মানুষ ফাটায় ফেলছে। হয় এত কাজ মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারেনি অথবা দুয়েকজনের কারণে সব ভালো কাজ নষ্ট করে দিচ্ছি। আমরা দায়িত্বশীলরা এটা করতে পারি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা।”

তিনি বলেন, “এখনও সময় আছে। সঠিকভাবে যদি দল পরিচালিত হয়, সঠিক মানুষ যদি সঠিক দায়িত্ব পায়, অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ মানুষের প্রশংসা পাবে।”

দলের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, “আতউর রহমান খান কায়সার, এম এ মান্নান ও আখতারুজ্জামান বাবুর মতো বঙ্গবন্ধুর শত শত সহযোদ্ধা ও কর্মী ছিলেন। কখনও কোনো লোভ তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। মাঝে মাঝে ভয় হয় একথা হয়ত দেশের মানুষ আর বিশ্বাস করবে না।

“এক শ্রেণির নেতা রাজনীতি করে কামানোর জন্য, আর এক শ্রেণি যা আছে সব বিক্রি করে দলকে বাঁচানোর জন্য। তবু আমাদের বোধ হচ্ছে না। এখন কেউ কেউ বলে কত টাকা আছে যে নির্বাচন করবে? টাকা দিয়ে নির্বাচন করতে হলে পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুও জিততে পারতেন না।” 

নগর কমিটির সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “সরকার ও দলের মধ্যে বিরাট গ্যাপ রয়েছে। আমরা তৃণমূল এত কিছু বুঝি না। আমরা বুঝি নেত্রীকে ষড়যন্ত্রে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধার চেষ্টা হচ্ছে।

“বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে নেতা বহু। নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কয়জন? ডেঙ্গু-যানজট সব যদি প্রধানমন্ত্রী করেন, তাহলে এত মন্ত্রীর দরকার কী?”

আরেক সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “এরশাদের আমলে খাটের তলায় লুকিয়ে থেকে যারা কাউন্সিলর নির্বাচন করেছিল, তারা যখন আজ এমপি হয়, তখন বুকে কষ্ট লাগে। আগাছা-পরগাছার বিরুদ্ধে নেত্রী অভিযান শুরু করেছেন।

“সেই অভিযানকে বানচাল করতে আবরার হত্যা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমার বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা আগাছা-পরগাছাকে দল, সরকার এবং দেশ থেকে বিতাড়িত করবো।”

নগরীর এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম নগর কমিটির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এই সভায় স্মৃতিচারণ করেন আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা সাংসদ ওয়াসিকা আয়েশা খান।