জিয়া-এরশাদ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ: এইচটি ইমাম

সাবেক সেনাশাসক, ‘অবৈধভাবে’ ক্ষমতাদখলকারী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদকে ‘মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2019, 12:34 PM
Updated : 6 August 2019, 10:51 AM

সোমবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এইচটি ইমাম বলেন, “তারা পাকিস্তানের লোক ছিলেন। দেশের জন্য কিছুই করেননি। এরশাদ কিছু করলেও তা অন্য দিক দিয়ে। বঙ্গবন্ধুই দেশকে গড়ে তুলেছেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা তা ধরে রেখেছেন।”

স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভাবের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা পেয়েছিলেন জিয়া ও এরশাদ।

তারা দুজনই সামরিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তার ছত্রছায়ায় রাজনৈতিক দল খুলেছিলেন। পরে দুজনের ক্ষমতারোহনকেই অবৈধ ঘোষণা করে আদালত।

এরশাদের নয় বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই সোচ্চার ছিল। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এরশাদের স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরলেও দুটি দলই পরে তাকে তোষণ করে এসেছে।

এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি তোষণ করেছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর দুই মেয়াদে এরশাদ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকারের সঙ্গে ছিল। তার দলের নেতাদের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও বানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদকে বিশেষ দূতও নিয়োগ করেছিলেন।

এইচটি ইমাম বলেন, সোনার বাংলা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা নিজেকে বিশ্বের দরবারে নিজেকে আওয়ামী লীগের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গৌরবের ৭০ বছর উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে চট্টগ্রামের প্রায় দুশো তরুণ অংশ নেয় এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন আগত অতিথিদের প্রশ্ন করেন।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সমসাময়িক ছাত্র রাজনীতি, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক এবং চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক যানজট, জলাবদ্ধতা, চলমান উন্নয়ন কাজের সমন্বয়হীনতার বিষয়ও উঠে আসে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও ওয়াসিকা আয়শা খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ।

অনুষ্ঠানে চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী দিদারুল আলম প্রশ্ন রাখেন, সব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরিস্থিতি ‘হ্যান্ডল’ করতে হয় কেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নেই কেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের এখানে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা। তারপরও কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ক্ষমতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

“বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কেবিনেট সিস্টেমে প্রধানমন্ত্রী প্রধান, তাকে কেন্দ্র করেই অন্য মন্ত্রীরা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু তাদের দায়িত্ব দেওয়া আছে, নিয়মকানুনও আছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নেই তা ঠিক নয়।’’

এইচটি ইমাম বলেন, শেখ হাসিনা ব্যক্তিত্বপূর্ণ নেতা। বঙ্গবন্ধুর সময়েও তাজউদ্দিন, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এইচ এম কামরুজ্জামানের মতো অনেক বড় নেতা ছিলেন। কিন্তু তিনি সবকিছু ছাপিয়ে সবার ওপরে উঠে এসেছিলেন তার ব্যক্তিত্ব ও প্রভাব দিয়ে।

“শেখ হাসিনার মধ্যেও তা বিদ্যমান। অনেক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকেও ছাড়িয়ে গেছেন। অনেকেই তার কাছ থেকে বেশি প্রত্যাশা করেন।”

জিয়াকে নিয়ে বিতর্ক

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এখনো বিতর্ক কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নগরীর বেসরকারি পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।

জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, জিয়াউর রহমান তার জীবদ্দশায় নিজেকে কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেননি। তার মৃত্যুর পরই এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

‘বিএনপি যেভাবে তাকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে তা শুনলে জিয়াউর রহমান নিজেই কবরে শুয়ে পড়তেন’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ছাত্র রাজনীতির প্রতি বিরূপ মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

এবিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগনেতা ও চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আগে ছাত্ররা রাজনীতি করত নীতি-আদর্শের জন্য। তখনকার সাথে এখনকার সময়ের ব্যবধান বা দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে। এখন অনেকেই ছাত্রলীগ করেন, যারা জানে না সংগঠনটির ‘মটো’ কি। 

আগে অনেক বুঝে শুনে কর্মীদের সংগঠনে সংযুক্ত করা হতো উল্লেখ করে নাছির বলেন, রাজনীতিতে যে নীতি-আদর্শ ধারণ করা উচিত, তা বর্তমানের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনুপস্থিত।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলো মানুষ তৈরির কারখানা হিসেবে হবার কথা থাকলেও হয়েছে আখের গোছানোর কারখানা। মান অনেক নেমে গেছে।

“এজন্য ছাত্র সংগঠন বা তাদের নেতারা একা দায়ী নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন ভিসি-প্রোভিসি হবার জন্য ছাত্রনেতাদের কাছে গিয়ে বসে থাকেন- এটা ঠিক নয়।”

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, “সংস্কৃতির সাথে ছাত্রলীগের আগে নিবিড় সম্পর্ক ছিল। মান নেমে যাবার পেছনে আমাদেরও দায় আছে। আমরা তাদের সঠিক নির্দেশনা দিতে পারছি না।”

কয়েকজন শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে সড়কে যানজট, উন্নয়ন ভোগান্তি এবং জলাবদ্ধতার অবস্থা তুলে ধরে এ থেকে পরিত্রাণের কথা বলেন।

এর জবাবে মেয়র নাছির বলেন, সিটি করপোরেশনসহ ৩২টি সেবা সংস্থা আছে। সবগুলোই সরকারের অংশ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারের প্রকল্পগুলো নেওয়া হচ্ছে।

“কর্ণফুলী গ্যাস, চউক, সিটি করপেরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতা অস্বীকার করা যাবে না। প্রকল্প গ্রহণ সবসময় এককেন্দ্রিক হয় না। একমাত্র জনপ্রতিনিধি হিসেবে সব কাজের প্রত্যাশা সিটি মেয়রের কাছে। কিন্তু তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না।”

সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বুধবার চট্টগ্রামের সকল মন্ত্রী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা হবে এবং তাতে চট্টগ্রামের সমস্যা নিরসনে আলাপ হবে।