শনিবার বিকালে ওই ভাঙচুরের ঘটনার পর সেখান থেকে টিকেট বেচা-কেনা বন্ধ রয়েছে; কাউন্টারের সামনে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
এর আগে দুপুরে নগরীর কর্ণফুলী সেতু এলাকায় হানিফ সুপার ও হানিফ পরিবহন নামের অন্য দুটি বাস কাউন্টারেও তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তবে এ দুটি পরিবহন সংস্থার সাথে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
দুটি বাস কাউন্টারে তালা দেওয়ার পর বিকেল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
বিকালে ৩০-৪০ জন যুবক মিছিল নিয়ে হানিফের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে নগরীর খুলশী থানার দামপাড়া এলাকায় গরিবুল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে আসে।
মিছিল নিয়ে আসা যুবকরা কাউন্টারে থাকা কর্মীদের বেরিয়ে যেতে বলে এবং এরপর সেখানে ভাঙচুর চালায়।
কাউন্টারের এক কর্মী সাংবাদিকদের বলেন, “তারা এসেই আমাদের বলে- তোমরা বেরিয়ে যাও। তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা কোনো কথা শুনতে রাজি ছিল না। আমরা বেরিয়ে গেলে তারা ভাঙচুর শুরু করে। ভাঙচুর শেষে মিছিল নিয়ে চলে যায়।”
এর আগে কাউন্টারের সামনে তারা ‘মাস্টারদা সূর্যসেন ব্রিগেড, চট্টগ্রাম’ নামের একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেয়।
ঘটনাস্থলে থাকা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য আবু সাদাত মো. সায়েম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মত ঘৃণিত কাজ করেছে হানিফের মালিক।
“সে হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। কিছুদিন আগে একজন নিরাপরাধ ছাত্র পায়েলকেও তারা গাড়ি চাপা দিয়ে মেরেছে। মানুষের কাছ থেকে টাকা উপার্জন করে তারা দেশ ও মানুষের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করে। তাদের বাংলাদেশে ব্যবসা করার কোনো অধিকার নেই।
“আমরা চাই না হানিফ এন্টারপ্রাইজের মত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করুক। চট্টগ্রাম থেকে এই বার্তা আমরা দিতে চাই।”
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুনিদের বিরুদ্ধে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী যে কেউ এ ধরণের কাজ করতে পারে। অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়ার মানসিকতা থেকে কেউ হয়ত এটা করেছে।”
“তবে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি।”
অন্য দুই কাউন্টারে তালা
এদিকে কর্ণফুলী সেতু এলাকায় হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মনে করে অন্য দুটি বাসের কাউন্টারে তালা দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রলীগ নেতা আবু সাদাত মো. সায়েম বলেন, সেখানে গিয়েছিলাম। কাউন্টারে তালাও দিয়েছি। আমরা আসলে জানতাম না, এটা হানিফ এন্টারপ্রাইজ নয়।
ওই এলাকা থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছেড়ে যায়।
হানিফ সুপার নামের বাস সার্ভিসের মালিক মো. জাহাঙ্গীর এবং হানিফ পরিবহন নামের আরেকটি পরিবহনের মালিক মো. কামাল উদ্দিন। তারা দুজনই চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী।
এদিকে এ দুটি কাউন্টারে তালা দেওয়ার পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন মালিক শ্রমিকরা।
বিকেল থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই পথের সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
ঘটনার বিষয়ে আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ মনে করে এ দুই বাসের কাউন্টারে তালা মেরে দেয়।
“এ নিয়ে মালিক সমিতির নেতারা থানায় যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেননি। তাই মালিক-শ্রমিকরা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কাউন্টারে তালা দেখেছে। তবে কারা তালা মেরেছে তা জানি না। কেউ অভিযোগ নিয়েও আসেনি।
“পরিবহনের বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগ দেখে। এখনও তারাই দেখবেন।”
ছাত্রলীগ নেতা আবু সাদাত মো. সায়েম বলেন, “এটা না জেনে হয়েছে। তারা যোগাযোগ করলে আমরা তালা খোলার ব্যবস্থা করব।”