রমা চৌধুরী আর নেই

দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর চিরবিদায় নিলেন একাত্তরের বীরাঙ্গনা লেখক রমা চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকচট্টগ্রাম ব্যুরো ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2018, 02:48 AM
Updated : 3 Sept 2018, 02:55 AM

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তার দীর্ঘদিনের সহচর ও তার বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দিন খোকন।

রমা চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন জটিল রোগ নিয়ে গত জানুয়ারি থেকে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি ছিলেন।

আলাউদ্দিন খোকন বলেন, “অবস্থার অবনতি হলে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দিদিকে আইসিইউ থেকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। কিন্তু  ভোরের দিকে সব আশা শেষ হয়ে গেল।”

চট্টগ্রামের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আহমেদ ইকবাল হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রমা চৌধুরীর মরদেহ বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। পরে বোয়ালখালীতে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে তাকে সমাহিত করা হবে।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা রমা চৌধুরী ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশা হিসেবে জীবনে তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১৩ মে তিন শিশু সন্তান নিয়ে বোয়ালখালীর পোপাদিয়ার গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন রমা চৌধুরী। এসময় তার স্বামী ছিলেন ভারতে। ওই ঘটনার পর থেকেই খালি পায়ে হাঁটেন রমা চৌধুরী।

এলাকার রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী রমা চৌধুরীর বাড়িতে হানা দেয়, ধর্ষণের পর তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় হানাদাররা। রমা চৌধুরীর দুই সন্তান সাগর (৫) ও টগর (৩) এই ঘটনার দুই বছরের মধ্যেই মারা যান। তার আরেক সন্তান মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়।

রমা চৌধুরী ’৭১ এর জননী’, ‘এক হাজার এক দিন যাপনের পদ্য’, ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’সহ ১৯টি বই লিখে গেছেন। চট্টগ্রাম নগরীতে খালি পায়ে বিচরণ করতেন এই বীরাঙ্গনা।

নিজের লেখা বই নিজেই তিনি বিক্রি করতেন। বই বিক্রি করে একটি অনাথ আশ্রম গড়ার স্বপ্ন ছিল তার।