পাওনাদার এড়াতে ছিনতাইয়ের ভুয়া মামলা

চট্টগ্রামে দেড় লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে বাকলিয়া থানায় একটি মামলার তদন্ত করে পুলিশ বলছে, এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2018, 12:17 PM
Updated : 20 August 2018, 12:46 PM

রোববার বিকালে বাকলিয়া থানায় মামলাটি করে বাদী নাছির উদ্দিন পাওনাদারকে এড়াতে ছিনতাইয়ের ‘গল্প সাজিয়েছেন’ বলে মনে করেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছিনতাইয়ের অভিযোগ পেয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাননি।

“এমনকি ব্যাংকে গিয়েও টাকা উত্তোলন কিংবা ব্যাংক হিসেবের হদিস পায়নি। ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে দাবি করা ওই ব্যক্তির কথার মধ্যেও অসামঞ্জস্য রয়েছে।”

নিজেকে কাতার প্রবাসী দাবি করে মামলার বাদী নাছির উদ্দিন (৪৫) মামলার এজাহারে বলেছেন, তার মামাত ভাই আনোয়ারুল ইসলামের নামে জনতা ব্যাংক চাক্তাই শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। সেখান থেকে তিনি রোববার সকালে দেড় লাখ টাকা তুলেছিলেন।

“টাকা উত্তোলন করে চাক্তাই ব্যাংক এশিয়ার সামনে অবস্থান করার সময় দুই যুবক সিএনজি অটো রিকশা করে এসে আমাকে শাহ আমানত ব্রিজ গোল চত্ত্বরের দিকে তুলে নিয়ে যায়। সেখান গিয়ে আরেকটি মোটর সাইকেলে করে সৎসঙ্গ মাঠের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে আরও এক ব্যক্তিসহ মিলে পকেটে থাকা দেড় লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।”

এসময় রাস্তায় পুলিশের গাড়ি দেখেও নাছির ‘ভয়ে’ চিৎকার করেননি বলে দাবি করেন নাছির।

পুলিশ কমকর্তা রউফ বলেন, “আমরা নাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার কথার মধ্যে অসামঞ্জস্য পাওয়া যায়। জনতা ব্যাংকের যে শাখা থেকে টাকা উত্তোলনের কথা তিনি বলেছেন, সেখানেও তদন্ত চালাই।

“ব্যাংকের সিসি টিভি ফুটেজে নাছিরের কোনো ছবি পাওয়া যায়নি। এমনকি ব্যাংক থেকে রোববার দেড় লাখ টাকার কোনো লেনদেন হয়নি বলেও কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে।”

আনোয়ারুল ইসলাম নামে যে ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে নাছির টাকা তুলেছিলেন বলে দাবি করেছেন, সে নামের কোনো অ্যাকাউন্ট ওই ব্যাংকে নেই বলে জানিয়েছেন জনতা ব্যাংকের চাক্তাই শাখার ব্যবস্থাপক হারাধন মজুমদার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এছাড়াও গতকাল (রোববার) আমাদের শাখা থেকে দেড় লাখ টাকার কোন চেক উত্তোলন হয়নি। বিষয়টি আমরা লিখিত ভাবে পুলিশকে জানিয়েছি।”

পুলিশ কর্মকর্তা রউফ বলেন, কোরবানির ঈদের আগে এ ধরনের ‘সাজানো’ মামলা জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

“নাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার কাছে বেশ কয়েকটি ফোন এসেছে যারা নিজেদের নাছিরের কাছ থেকে পাওনা টাকা চাইছিল।”

বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে নাছির মিথ্যা মামলা করার কথা স্বীকার করেছেন।

“নাছির জানিয়েছেন, তার গ্রামের বাড়ি পটিয়াতে ২০/২৫ লোক তার পাওনাদার রয়েছে। তার মধ্যে আমিনুর রহমান ও মহিউদ্দিন নামে দুই জন দুই লাখ, সৈয়দ নামে একজন ৬০ হাজার ও মোর্শেদ নামে একজন ৭০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। পাওনাদারদের সহানুভূতি পেতে নাছির এ মামলা সাজিয়েছে।”

নাছিরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় (মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন) আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান ওসি।

এদিকে মামলার বাদী নাছিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।