মা গেছেন ভিক্ষায়, পুড়ে মরল শেকলবন্দি প্রতিবন্ধী ছেলে

চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও এলাকায় টিনশেড এক কলোনিতে আগুন লেগে পুড়েছে অন্তত ৪২টি ঘর; ভেতরে শেকলবন্দি অবস্থায় জীবন্ত দগ্ধ হয়েছেন মানসিক প্রতিবন্ধী এক তরুণ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2018, 06:42 AM
Updated : 12 August 2018, 02:59 PM

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কামাল উদ্দিন জানান, রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে চাঁদগাঁও থানার উত্তর ফরিদারপাড়ার খন্দকার বাড়ির হারুন কলোনিতে আগুনের সূত্রপাত হয়।

অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর আটটি ইউনিট পৌনে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা পৌনে ১২টার দিকে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানান তিনি। তবে আগুন পুরোপুরি নেভে বেলা পৌনে ১টার দিকে।

কলোনির বাসিন্দারা জানান, নিহত ওই তরুণের নাম মো. রবিউল আলম, বয়স ত্রিশের ঘরে। মানসিক প্রতিবন্ধিতার কারণে রবিউল কোনো কাজ করতে পারতেন না। তার মা ফাতেমা সংসার চালাতেন ভিক্ষা করে।

চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও এলাকায় রোববার অগ্নিকাণ্ডে নিহত প্রতিবন্ধী তরুণ রবিউলের মা ফাতেমার আহাজারী। ছবি: সুমন বাবু

প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, “প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও রবিউলের হাত ঘরের খুঁটির সাথে শেকলে বেঁধে ভিক্ষা করতে বেরিয়েছিলেন তার মা। এর মধ্যে আগুন লাগলে কলোনির সবাই বেরিয়ে যায়, কিন্তু রবিউল পারেনি।”

বাসায় আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটতে ছুটতে কলোনিতে আসেন ফাতেমা। সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রতিবেশীদের জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছিলেন তিনি।

একমাত্র সন্তান মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ফাতেমার ভিক্ষার টাকাতেই চলত সংসার। এরমধ্যেও সন্তানের চিকিৎসার জন্য একটু একটু করে টাকা জমাচ্ছিলেন তিনি।

ফাতেমা সাংবাদিকদের বলেন, “হামার টিউমার তো, দুই বছর। ওর ব্রেন শর্ট। ওকে চিকিৎসা করি, না আমার চিকিৎসা হয় বাবা?

“১৭ হাজার টাকা জমাইছি। আমার বোন কোরবানি ঈদের পর আসিবে ঢাকা থেকে। আইসা পাবনা মেডিকেল নিয়া যাইবো। মাইনষের বাড়ি বাড়ি গিয়া ঈদের এই টাকা জোগাড় করিছি।”

সকালে ভিক্ষার জন্য বেরিয়েছিলেন ফাতেমা। পরে নিজের চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে।

ফাতেমা বলেন, “সেখানে ডাক্তার আসেনি। বলিছে সাড়ে নয়টা, ১০টার দিকে আসিবে। তাই কাছেই এক বাসায় ছিলাম।”

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর শেকল কেটে রবিউলের পোড়া লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

কামাল উদ্দিন জানান, আগুনে ওই কলোনির তিন সারির ৪২টি ঘর পুড়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

কলোনির এক ঘরের একটি শিশুকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে বাসিন্দারা দুপুরে জানিয়েছিলেন। পরে জানা যায়, ওই শিশুটি কলোনির অন্য শিশুদের সাথে কাছের একটি মাঠে খেলতে গিয়েছিল।

আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।