মাদকবিরোধী অভিযান ‘টেকসই’ পর্যায় পর্যন্ত: সচিব

একটি ‘টেকসই’ পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2018, 08:12 AM
Updated : 21 July 2018, 10:25 AM

শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা জানান।

এদিনই মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে  কক্সবাজার, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারজন নিহত হয়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর গত মে মাস থেকে এই পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তি মারা গেছেন। 

এই অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর। তারা এভাবে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।

চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, কারা কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের কর্মকরতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন সচিব।

সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফরিদ উদ্দিন বলেন, “মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। যতদিন একটা সাসটেইনেবল লেভেলে (টেকসই পর্যায়) না পৌঁছাবে, ততদিন এটা চলবে। এক্ষেত্রে যৌথ অভিযানের নির্দেশনাও আছে।”

মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ মানবাধিকার সংগঠনের

মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতের ঘটনা এড়ানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই অভিযান ‘অল আউট’ বলতে যা বোঝায় তাই। সেভাবেই চলবে। প্রধানমন্ত্রী নিজে ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন। এটা অল আউটই হবে। একটা পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত।”

ইয়াবা পাচারের রুট কক্সবাজারে অভিযান জোরদার করা হবে বলে জানান সচিব।

মাদক পাচার নিয়ে  অভিযোগের মুখে থাকা কক্সবাজারে ক্ষমতাসীন দলের এক সাংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন- তা জানতে চান এক সাংবাদিক।

উত্তরে ফরিদ উদ্দিন বলেন, “আহম্মদ চৌধুরী বলেন, গডফাদারদের ধরছেন না কেন- এরকম অনেক প্রশ্ন আছে। আমরা সেদিকে যেতে চাই। কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু সরাসরি যুক্ত না হলে তো হবে না।

“১৯৯০ সালের মাদক আইনে অনেক দুর্বলতা আছে। গডফাদারদের ধরার আইন ছিল না। ইয়াবাও ছিল না। সব যুক্ত করে নতুন আইন এনেছি। গডফাদারদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এটা উপস্থাপন করা হবে।”

মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান সচিব।

মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশ

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে আরও কার্যকর করতে জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

সারাদেশে কারাগারগুলোতে মাদকের আসামি বেশি থাকার কথাও জানান সচিব।  

দেশের কারাগারগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৬০০ জানিয়ে তিনি বলেন, এখন কারাগারগুলোতে ৯০ হাজার বন্দি আছে। এর ৪৩ শতাংশ মাদকের সাথে যুক্ত। যার সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। অর্থাৎ সক্ষমতার পুরোটাই মাদকের আসামি দিয়ে ভরা।

দেশে বর্তমানে ৮০ লাখ মাদকাসক্ত আছে জানিয়ে তাদের নেশার জগৎ থেকে বের করে আনতে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যার মাদক নিরাময় কেন্দ্র করা হবে বলে জানান সচিব।

চট্টগ্রাম কারাগারে ১৮০০ ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে আট হাজার বন্দি আছে জানিয়ে এখানে আরেকটি কারাগার করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

পাসপোর্ট তৈরিতে বিলম্ব ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের হয়রানি নিরসনে ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং দ্রৃত ভেরিফিকেশন সম্পাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান সচিব।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা ও নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।