গত রোববার ষাটোর্ধ্ব সমর চৌধুরীর কাছ থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের পেছনে এই ‘ষড়যন্ত্র’ কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।
তাদের অভিযোগ, বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ সারোয়াতলীর লন্ডনপ্রবাসী প্রবাসী সঞ্জয় দাশের প্ররোচনায় এসব করছে পুলিশ।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বোয়ালিয়ার ওসি হিমাংশু দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কারও পক্ষ নিয়ে মামলা দিচ্ছি না। আগে যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলোর তদন্ত চলছে, তদন্তে যা আসবে তার ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সারোয়াতলীতে কয়েক বিঘা জমি নিয়ে সঞ্জয়ের বিরোধ তার চাচা স্বপন দাশের সঙ্গে। ভাতিজার দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলায় তাকেও তিন মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে বলে জানান স্বপন। তাকে আইনি পরামর্শ দিচ্ছিলেন চট্টগ্রামের আদালতে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করা সমর চৌধুরী।
সমরকে ‘মিথ্যা সাজানো’ মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শনিবার বিকালে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয় চট্টগ্রাম শহরে। সেখানে সমরের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
ওই সময়ই সমরের মেয়ে অলকানন্দা চৌধুরী অভিযোগ করেছিলেন, তাদের গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধে থাকা লন্ডনপ্রবাসী সঞ্জয় দাশের ‘প্ররোচনায়’ পুলিশ তার বাবাকে ফাঁসিয়েছে।
ওই দিন সঞ্জয় দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তিনি সমর চৌধুরী নামে কাউকে চেনেন না এবং তাদের পারিবারিক বিষয়টি নিজেরাই সামাধান করেছেন।
তবে শনিবার স্বপন দাশ বলছেন, সঞ্জয়ের ওই বক্তব্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রবাসী সঞ্জয় দাশ সম্পর্কে তার ভাইপো। তার পূর্ব পুরুষ থেকে কিছু জায়গা লিজ নিয়ে ও কিছু জায়গা কিনে নিয়ে ভোগ করে আসছিলেন তারা। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে সঞ্জয় জায়গাগুলো তার বলে দাবি করেন।
“সে সময় সঞ্জয় তার বাড়ির জায়গা জমি আমরা দখল করেছি বলে একটি অভিযোগ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সঞ্জয় দেশে এসে গ্রামের স্থানীয় লোকজন ও দুইপক্ষকে নিয়ে চট্টগ্রামের ডিআইজির অফিসে বৈঠক হয়। গত বছরের ১ মে বৈঠকে আমাদের জায়গা জমি ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে আমরা তা আদালতের মাধ্যমে সুরাহা করার কথা বলি।
“এরপর থেকে সঞ্জয়ের পক্ষ নিয়ে পুলিশ আমাকে ও আমার পক্ষের সবাইকে গ্রেপ্তার, হয়রানি করছে।”
তিনি বলেন, তার ছেলেকে ঢাকা থেকে তুলে বোয়ালখালী থানায় নিয়ে এসে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
“তখন বাধ্য হয়ে আমি জায়গাগুলো নিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছিলাম।”
স্বপনের অভিযোগ, বিষয়গুলো নিয়ে গত বছরের ১ জুন পটিয়া সার্কেল (বোয়ালখালী, পটিয়া থানা) অফিসে বৈঠক করতে ডাকা হলে তিনি সেখানে যান। সেখান থেকে ধরে নিয়ে তাকে মামলায় আসামি করা হয়।
মারধর ও চুরির অভিযোগ এনে সঞ্জয় দাশ ওই দিন যে মামলা করেছিলেন তাতে স্বপন ছাড়াও তার দুই ভাই রুপন দাশ, দীপক দাশ, স্বপনের ভাতিজা উৎপল দাশ, রিকি দাশ, স্বপনের ছেলে তন্ময় দাশ, মেয়ের জামাই অভিজিৎ দাশ ও তার বাবা প্রদীপ দাশকে আসামি করা হয়।
পরদিন সঞ্জয়ের বড় ভাই সমীরণ দাশ বাদী হয়ে জাল দলিল করে জায়গা আত্মসাতের অভিযোগে স্বপন দাশ ও তার ভাইপো উৎপল দাশকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন বলে জানান তিনি।
মামলায় স্বপন তিন মাস কারাভোগ করেন।
এদিকে গত বছরের ২৬ নভেম্বর স্বপনের বাড়িতে থাকা দিনমজুর শংকর দত্ত মদনকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলায় স্বপন দাশ ও সমর চৌধুরীকেও আসামি করে পুলিশ।
মদনের স্ত্রী মঞ্জু বলেন, একটি চুরির মামলায় তাকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
“এরপর সঞ্জয় আমাকে মারধর করে। ওদিকে আমার স্বামী চার মাস কারাভোগ করে।”
‘তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ায়’ তার দুই ভাইকেও মাদক মাদক মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মঞ্জু বলেন, “সঞ্জয়ের ভয়ে এখন শ্বশুর বাড়িতে থাকতে পারি না। ওদিকে আমার জন্য দুই ভাইকে মাদক মামলায় আসামি হতে হওয়ায় বাপের বাড়িতেও দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে বৌদিদের সাথে।”
হুমকির বিষয়ে বোয়ালখালী থানায় জিডি করতে গেলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, পরে আদালতে একটি জিডি করেছেন তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সঞ্জয় দাশের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
এ বিষয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে মন্তব্য করেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তদন্তনাধীন বিষয়ে মন্তব্য করলে অনুসন্ধান প্রভাবিত হয়।”
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সময় নেই। ইউ ক্যান টক উইথ মি টুমোরো।”
সমর চৌধুরীকে ‘ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে’ বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি শহীদুল আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, কবি কামরুল হাসান বাদল, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিজয় কিষাণ চৌধুরী, বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক আবদুল মোমিন উপস্থিত ছিলেন।
‘সচেতন নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে আয়োজিত ওই কর্মসূচি থেকে দ্রুত সমর চৌধুরীকে মুক্তি দিয়ে এ ঘটনার পেছনের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।