এবছরই ৫টি জাহাজ পাচ্ছে শিপিং কর্পোরেশন: নৌমন্ত্রী

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনকে (বিএসসি) কার্যকর করতে এই বছরই পাঁচটি জাহাজ এর বহরে যোগ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2018, 04:01 PM
Updated : 15 March 2018, 04:01 PM

বৃহস্পতিবার বিএসসির ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।

শাজাহান খান বলেন, “এই বিএসসি জাতির জনক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯৭২ সালে। ১৯৭৪ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু বিএসসিকে ২৬টি জাহাজ দিয়ে গিয়েছিলেন।

“বাংলাদেশে আজ এলএনজি টার্মিনাল হচ্ছে এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ কয়লা ও এলএনজি পরিবহনের জন্য যে জাহাজ প্রয়োজন, তা বাংলাদেশে নেই।

“ছয়টি নির্মাণাধীনসহ মোট ২৬টি জাহাজ বিএসসিকে উপহার দিতে প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইনশাল্লাহ এ বছরের মধ্যে পাঁচটি জাহাজ পাব। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাব আরেকটি। বিএসসিকে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতে চাই।”

চায়না ন্যাশনাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট মেশিনারিজ করপোরেশন থেকে এক হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএসসির জন্য এই ছয়টি জাহাজ কেনা হচ্ছে। এরমধ্যে তিনটি অয়েল ট্যাংকার ও বাকিগুলো বাল্ক ক্যারিয়ার।

এতে চীন সরকার দিচ্ছে এক হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা এবং বিএসসির নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে ৩৯৫ কোটি টাকা।

এরমধ্যে ‘বাংলার জয়যাত্রা’ নামের বাল্ক ক্যারিয়ারটি আগামী জুলাই মাসে আসবে বলে জানিয়েছেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর ইয়াহ্‌ইয়া সৈয়দ।

১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত বিএসসির বহরে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যুক্ত হয় মোট ৩৮টি জাহাজ। পুরনো ও বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক হওয়ায় ধাপে ধাপে ৩৬টি জাহাজ বিক্রি করে দেওয়া হয়।

বর্তমানে সংস্থার হাতে থাকা দুটি লাইটার ট্যাংকারের গড় বয়স ৩০ বছর।

মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, যখন প্রথম বিএসসিতে আসি তখন কয়টা মাত্র জাহাজ ছিল। এখনও দুটি জাহাজ আছে, সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। বলতে গেলে বিএসসির কোনো জাহাজ নেই।

“গত বছর একটি জাহাজ কেনার কথা ছিল। কিন্তু যারা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তারা এর পক্ষে মত দেননি। পুরনো নয়, নিজেদের টাকায় নতুন একটি জাহাজ ক্রয় করব।”

নতুন জাহাজ আসার আগে বিএসসিতে লোকবল নিয়োগ করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

ঢাকায় বিএসসির ২৫ তলা ভবন নির্মাণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ৫৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়। মাসিক ভাড়া ৫৪ লাখ টাকা। সাড়ে আট বছরে পুরো খরচ উঠে আসবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান সুন্সি অডিটোরিয়ামে এই সাধারণ সভায় বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর ইয়াহ্‌ইয়া সৈয়দ বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি জানান, আরপিও’র মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে ৩১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা সংগৃহীত হয়েছিল। ২০১২ সালের সাধারণ সভার অনুমোদনক্রমে এখন পর্যন্ত তা থেকে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

এরমধ্যে ২৫ তলা ভবন নির্মাণে ৫৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, শেয়ার বাজারজাতকরণে ১৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং নতুন ছয় জাহাজ কেনা খাতে দুই কোটি ২৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আরপিও ফান্ডে বর্তমানে ১৩৬ কোটি টাকা জমা আছে।

দ্রুত জাহাজ আনার তাগাদা

সাধারণ সভায় শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে কবির আহমদ চৌধুরী বলেন, “কিছু কিছু আমলার কারণে জীবন থেকে ১০টি বছর ক্ষয় হয়ে গেল। জুলাই বলা হচ্ছে- মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই জাহাজ কবে আসবে?

“সম্পদের মধ্যে ঢাকার ভবন ও মেরিন ওয়ার্কশপ দেখানো হয়েছে। কিন্তু স্টিল মিলের সামনের ভবনটি দেখানো হয়নি। এসেট ভেল্যু বাড়লে বিএসসির শেয়ারের দাম হবে একশ টাকা। গত বছর শেয়ারের দাম ছিল ৬২ টাকা, এখন কেন ৪৩ টাকা?”

শেয়ার হোল্ডারদের প্রতিনিধি হীরা লাল বণিক বলেন, “এতদিনে আশার আলো দেখছি- জাহাজ আসবে। যদি সত্যি জাহাজ আসে তাহলে চেহারা পাল্টে যাবে। চট্টগ্রামেও একটা ২৫তলা ভবন করলে আয় আরো বাড়বে।

“১১৮ কোটি টাকা বার্ষিক আয়ের মধ্যে যদি ১০৯ কোটি টাকা খরচ করেন তাহলে পাঁচশ কোটি টাকা আয় হলেও ডিভিডেন্ড দিতে পারবেন না। খরচ কমান।”

২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিএসসি পরিচালনা খাতে ৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং অপরিচালনা ও অন্যান্য খাতে ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আয় করে।

বিপরীতে পরিচালনা ব্যয় ছিল ৫৪ কোটি ৫০ লাখ এবং প্রশাসনিক ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হয় ৫৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।