সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে আয়োজিত মশাল মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলার বিচার দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
গণজাগরণ মঞ্চ, চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী শরীফ চৌহান সমাবেশে বলেন, অতীতে বিএনপি-জামায়াতের সরকারের সময়ে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে জঙ্গিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আর বর্তমান সরকার মুক্তচিন্তার মানুষদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
“মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। জামায়াত-শিবিরসহ সকল সাম্প্রদায়িক শক্তির রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।”
“রাজপথে সংঘবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া সরকার ও রাষ্ট্রকে কখনোই আমাদের পক্ষে আনতে পারব না। যে তরুণ, শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ ভাবছে- আমি নিরাপদ, তাদের জন্যও অশনি সংকেত। তাদের আক্রান্ত হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। সময় চলে যাচ্ছে দানবের হাতে।”
সমাবেশে উদীচী চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শীল দাশগুপ্তা বলেন, “হেফাজতী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকার নতজানু। তাহলে কিভাবে আমরা আশা করতে পারি শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ হবে না?”
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খেলাঘর চট্টগ্রামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কবি আশীষ সেন, যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আমীর হোসেন, সাংবাদিক প্রীতম দাশ।
প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব চন্দন দাশ, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক কানাই লাল দাশ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস ও উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুনীল ধর।
সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সংহতি জানায়।
সমাবেশ শেষে জাফর ইকবালের ওপর হামলার বিচার দাবিতে একটি মশাল মিছিল বের করা হয়।
জঙ্গি তৈরির পথ বন্ধ করুন
‘অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীদের বিচার এবং মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিহত’ করার দাবিতে একই স্থানে বিকালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়।
পার্টির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু হানিফ সমাবেশে বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা আজ ভূলুণ্ঠিত হওয়ার পথে। বারবার আমরা বলেছি জঙ্গিবাদকে প্রতিরোধ করতে হবে।
“এদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা উঠেছে। ৬৪ জেলায় একযোগে বোমা হামলা হয়েছে। দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হল তখন থেকে জঙ্গিরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।”
পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ অর্জনের যে লক্ষ্য ছিল তা ধুলিসাৎ করতে সক্রিয়দের মধ্যে থেকেই জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে।
“মৌলবাদী চক্রের সাথে আপস করে কেউ টিকে থাকতে চাইলে শুধু ক্রসফায়ার দিয়ে জঙ্গি নিমূর্ল হবে না। যেখান থেকে জঙ্গিবাদের উত্থান সেখানে সংষ্কার করতে হবে। আপস করে টিকে থাকার অধিকার কারো নেই।”
তিনি বলেন, “অধ্যাপক জাফর ইকবালের মত পরিণতি আমাদের অনেকের হতে পারে। কোনো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সাথে যে কোনো ধরনের ঐক্য শুভ ফল বয়ে আনবে না।”
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার, যুব মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী আরিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন মিয়া, ছাত্রমৈত্রী চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ-সভাপতি সাইফুদ্দিন সুজন, যুব মৈত্রীর সহ-সভাপতি ডাক্তার মো. মহসিন প্রমুখ।