আগের দিনও যাদের ছিল সাজানো-গোছানো ঘর, তারা এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। নেই একটু মাথা গোঁজার ঠাঁয়ও।
সুরমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন, কলোনির শেষ প্রান্তে আগুন লাগার খবর পান। চোখের পলকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো কলোনিতে।
“ছয় থেকে সাত বছর ধরে এই কলোনিতে আমরা আছি। রিকশাচালক স্বামীর আয়ের টাকায় বাসায় টিভিসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র কিনেছিলাম।”
এছাড়া আগুনে নগদ ৩১ হাজার টাকা পুড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ভোলায় গ্রামের বাড়িতে বেশকিছু ঋণ থাকায় তা পরিশোধের জন্য একটি এনজিও থেকে ৩১ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি রোববার সন্ধ্যায়। তা আর বাড়ি পাঠাতে পারলাম না।”
সুমন নামে এক ব্যক্তি মালিক হওয়ায় এটি সুমনের কলোনি নামে পরিচিত। অনেকে একে লম্বা কলোনিও বলে।
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পুড়ে নিঃশেষ হওয়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে তাসনিমা নামে এক নারী বলেন, ছোট শিশুসন্তানকে নিয়ে এখানকার একটি বাসায় থাকতেন তারা। স্বামী শাহজাহান পিকআপ চালান। আর বিভিন্ন বাসায় জামাকাপড় সেলাই করেন তাসনিমা।
“নিজেদের জমানো টাকার পাশাপাশি ঋণ নিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি দুটি সাউন্ডবক্স কিনেছিলেন শাহজাহান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দিয়ে কিছু বাড়তি আয়ের আশা ছিল। ভাড়া দেওয়ার আগেই পুড়ে গেল। আমি যে জামাকাপড় সেলাই করতাম, সেই সেলাই মেশিনটিও গেছে।”
তাসনিমার সামনের ঘরে থাকেন তার বাবা-মা ও ভাই। বাবা রুহুল আমিন ঝালমুড়ি বিক্রেতা আর মা শাহনূর অন্যদের বাসায় কাজ করেন।
আগুনের খবর সংগ্রহ করার পর কলোনি থেকে বের হওয়ার পথে চোখে পড়ে কিছু মানুষের জটলা। এক বৃদ্ধা ও এক নারী কাঁদছেন।
রোজিনা নামে ওই নারী তার স্বামী, দাদিশাশুড়ি ও তিন সন্তান নিয়ে এখানে একটি বাসায় থাকতেন।
“আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করি। দৈনিক মজুরিতে কাজ করে যা আয় হয় তা থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে কিনেছিলাম টিভি, কিছু আসবাবপত্র। আগুন থেকে কিছুই রক্ষা করতে পারলাম না।”
এই কলোনি থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে পুড়েছে পাশের জমিরের কালোনিরও ১০টি বাসা।
এসব কলোনির শিশুদের জন্য এখানে গড়ে উঠেছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার একটি স্কুল। সেখানে ৩০ শিশুকে পাঠ দিতেন স্বপ্না বেগম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, তাদের স্কুলটিও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।