র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক এএসপি মিমতানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার ভোরে জঙ্গল সলিমপুরে মশিউরের বাসায় অভিযানে যান তারা।
ওই বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তলসহ মোট ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয় বলে র্যাবের ভাষ্য।
মিমতানুর বলেন, “র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে মশিউর বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
৫২ বছর বয়সী মশিউরের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতা, খুন, ধর্ষণ, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ৩০টি মামলা রয়েছে।
জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে সরকারি খাস জমিতে অবৈধ বসতি গড়ে তোলার পেছনে ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ’ নামের যে সংগঠন রয়েছে, তার সাধারণ সম্পাদক এই মশিউর।
র্যাব বলছে, মশিউর জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় নিজের একটি বাহিনী গড়ে তুলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন।
জঙ্গল সলিমপুরের কয়েকশ একর এলাকায় গত এক যুগ ধরে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে ৪০ হাজার মানুষের অবৈধ বসতি। পুরো এলাকাকে ১১টি ‘সমাজে’ ভাগ করে ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ’ সেখানে গড়ে তুলেছে ‘দুর্ভেদ্য সাম্রাজ্য’।
ওই এলাকার ভেতরে রয়েছে ১২টি মসজিদ, চারটি মাদ্রাসা, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, তিনটি কেজি স্কুল, তিনটি এতিমখানা, ছয়টি কবরস্থান, পাঁচটি মন্দির, দুটি কেয়াং, একটি গির্জা, একটি শ্মশান এবং একটি কাঁচা বাজার।
সমিতিকে টাকা দিলে তবেই সেখানে বসবাসের অনুমতি মেলে। দুর্গম ওই এলাকায় প্রশাসনের খুব একটা প্রভাব না থাকায় গ্রেপ্তার এড়াতে বড় বড় সন্ত্রাসীরাও সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেয় বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
পাহাড়ে ওই অবৈধ বসতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০০৪ সালে একাধিক পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ২০১০ সালে স্থানীয় লাল বাদশা ও আলী আক্কাসের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
২০১০ সালের ২৩ মে র্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হন আলী আক্কাস। পরে ছিন্নমূল বস্তিবাসী সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে আসেন বর্তমান সভাপতি গাজী সাদেকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মশিউর।
চলতি বছর জুলাই মাসে জঙ্গল সলিমপুরের বিবিরহাট এলাকায় পাহাড় ধসে তিন শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর পর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী সেখানে যান।
অবৈধ বসতি স্থাপনে পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের বিষয়ে সে সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আক্কাসের (আলী আক্কাস) ইতিহাস আপনারা জানেন। আক্কাসের পর্ব শেষ হয়েছে, এখন আরেক পর্ব এসেছে- ইয়াসিন। লোকে বলে- সে কোথায় থাকে, তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
“এভাবে একেক সময় একেক জন হাজির হবে। নেপথ্যে থেকে এগুলো করাবে। আমাদের উচিৎ তা করতে না দেওয়া।”