মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছর পূর্তিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “জলাবদ্ধতা নিরসন অত সহজ না। কেউ যদি বাইরে থেকে মনে করেন, তাহলে হবে না।”
চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণ হলেই ডুবছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা। সম্প্রতি হাঁটু পানিতে জলমগ্ন নগরী দেখতে বেরিয়েছিলেন তিনি।
সোমবার রাতে নগর ভবনে যখন মেয়র নাছির সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন, তখনও নগরীর অনেক এলাকা ছিল জলমগ্ন। এই কারণে মেয়রের দায়িত্বগ্রহণ উপলক্ষে নিজের বুধবারের কর্মসূচিও পিছিয়ে দিতে হয়েছে তাকে।
দুই বছরে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করতে না পারলেও নিজেকে এখনই ব্যর্থ মানতে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা নাছির।
এই ক্রীড়া সংগঠক বলেন, “আমার দায়িত্ব এখনও শেষ হয়নি। এখনও আমি খেলছি। খেলা শেষ হওয়ার আগে তো আপনি (ব্যর্থ) বলতে পারেন না।”
নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতির বিষয়ে নাছির বলেন, “নির্বাচনে ভোটারের মন জয় করতে হয়। যে সমস্যা তখন ছিল, তার নিরিখে প্রচারণা চালানো হয়েছিল। তখন জলাবদ্ধতা ছিল প্রকট।”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ধরনের ক্ষেত্রে পূর্বসূরিদের দায়ী করা হয়ে থাকে। তবে সে পথে হাঁটেননি নাছির।
তিনি বলেন, “আগে কারা (পূর্ববর্তী মেয়ররা) কী করেছে, না করেছে, তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় যেতে চাই না। জনগণ জানে, তারা বিচার করবে।”
জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি নগরবাসীরও দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করেন মেয়র নাছির।
“খাল-নালা দখল ও ভরাট হলে কারও পক্ষেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব না। প্রকল্প বাস্তবায়নেও নগরবাসীকে সহায়তা করতে হবে।”
চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতার কারণ ব্যাখ্যা করে নাছির বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এবার বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। গতবার সারা বছরে যা হয়নি, এবার এরই মধ্যে তা হয়েছে।
এছাড়া জোয়ার, পাহাড়ি ঢল, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং খাল-নালায় পলি জমাকেও জলাবদ্ধতার কারণ দেখান তিনি।
নিজের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে নাছির বলেন, “সামর্থ্যের মধ্যে নিয়মিত খাল খনন করছি। আবার ভরাট হচ্ছে। পরিকল্পিত কোনো ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা নেই।
“যখনই ভাটা হচ্ছে তখনই নেমে যাচ্ছে। খালা-নালা পরিষ্কার করছি বলেই পানি নামছে।”
বাস্তবধর্মী ও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের উপর জোর দিয়ে নাছির বলেন, তাড়াহুড়ো করে কোনো প্রকল্প নিলে বুমেরাং হতে পারে।
সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সিডিএ-ও কাজ করছে। সব সমন্বয় করে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব।”
মেয়রের চেয়ারে বসার পর ‘ধারণার’ পরিবর্তন হয়েছে বলেও স্বীকার করেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির।
“দায়িত্ব গ্রহণ করে সরাসারি সম্পৃক্ত হওয়া আর বাইরে থেকে ধারণা করার মধ্যে পার্থক্য আছে। ভেতরের অবস্থা তখন জানতাম না। এখন দেখতে পাচ্ছি সমস্যা কোথায়।”
“আমাদের (সিসিসি’র) অঢেল বাজেট আছে, এমন নয়। নিয়ম ও আইন মেনে সব করতে হয়। আবার যাদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করব তারা সহায়তা না করলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে পারব না।”
‘আস্থা বেড়েছে’
দুই বছরের সাফল্য-ব্যর্থতার আত্মমূল্যায়নে নাছির বলেন, “সাফল্যের কথা নিজের মুখে উচ্চারণ করতে চাই না। ব্যর্থতার বিষয়টি এ পর্যায়ে আসে না।
“যে জায়গা থেকে শুরু করেছি এবং এখন যে জায়গায় এখন অবস্থান করছি। যে কেউ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে বলবে যে আমি ভালো অবস্থায় আছি।”
সড়ক পাকাকরণ ও আলোকায়নের আওতা বাড়ানো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নতি এবং আর্বজনা দ্রুত অপসারণকে নিজের সাফল্য বলে দাবি করেন নাছির।
“আমি ব্যাপকভাবে মানুষের সাথে মিশি। মানুষ আমার প্রতি এখনও আস্থা রেখেছে। আমি বলব, আস্থা আরও বেড়েছে। গত নির্বাচনে যারা আমাকে ভোট দেয়নি এখন নির্বাচন হলে তারা ভোট দেবে, এটা আমার বিশ্বাস।”
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলমকে এক লাখ ৭০ হাজার ৫২৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন নাছির।
ওই বছরের ৬ মে শপথ নিলেও বিদায়ী মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ না হওয়ায় চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে তিনি আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেন ২৬ জুলাই।
দায়িত্ব গ্রহণের পর সিসিসির পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “দায়িত্ব নিয়ে দেখি সচিব, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও প্রধান প্রকৌশলী নেই।
“কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পারস্পরিক মামলা এবং কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা ছিল। তখন শৃঙ্খলা ফেরানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এখন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি।”
নগরীর পরিচ্ছন্নতা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করে মেয়র নাছির বলেন, আট লাখ বিন বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। দ্রুততম সময়ে আর্বজনা অপসারণ করা হয়।
“সড়কবাতি, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার এবং নালা-নর্দমা সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা আমরা দিয়ে থাকি। সেগুলোতে উন্নতি হয়েছে।”
অন্য মেয়রদের মত প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা না পাওয়ায় ‘অভিমান’ আছে কি না- জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, “তৃণমূল থেকে প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য হয়ে এখানে এসেছি।
“পাওয়ার জন্য নয় দেওয়ার জন্য রাজনীতি করি। অভিমান বা কষ্টের কিছু নেই। যতটুকু সেবা দিতে চাই তা না পারলে সেটাই হবে কষ্টের।”
নাছির আশা করেন, তার মেয়াদের বাকি তিন বছর সময়ে সিটি করপোরেশনের সেবা কার্যক্রম ‘জন সন্তুষ্টির’ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন।