কওমির স্বীকৃতির প্রতিবাদে আন্দোলনে আহলে সুন্নাত

কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রত্যাহার দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2017, 04:24 PM
Updated : 15 April 2017, 04:24 PM

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সারা দেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।      

তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঢাকাসহ সারা দেশের সব জেলা ও উপজেলা সদরে ১৭ এপ্রিল মানববন্ধন এবং ১৮ এপ্রিল বিক্ষোভ-সমাবেশ।

এছাড়া ২০ এপ্রিল সব জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত।

হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে একদল ওলামার সঙ্গে বৈঠকে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমান ঘোষণা করেন।

গণজাগরণ আন্দোলনবিরোধী হেফাজত দাবি তোলার পর এই পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ কট্টর ইসলামীদের সঙ্গে আপস করল বলে বিভিন্ন মহল থেকে মন্তব্য এসেছে। এতে জঙ্গিবাদী দর্শন আরও উৎসাহিত হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের সদস্য সচিব মোছাহেব উদ্দীন বখতেয়ার বলেন, “ওহাবি-দেওবন্দি মতাদর্শের বেসরকারি কওমি মাদ্রাসার সনদকে স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়ে সরকার জাতিকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।

“তারা কখনো সরকারি আনুগত্য ও সরকারি নিয়ম মানেনি।তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সরকার অনুমোদিত নয় এবং ২০১৩ সালে মতিঝিল শাপলা চত্বরের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে তাদের পিটিয়ে তাড়াতে হয়েছিল।”

কওমি মাদ্রাসাগুলোর বিরুদ্ধে ‘জঙ্গিবাদ লালন-পালনের’ অভিযোগ রয়েছে দাবি করে বখতেয়ার বলেন, “এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া এবং দণ্ডিত জঙ্গিরা ওহাবি-সালাফি ভাবধারায় লালিত কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। জঙ্গি হিসেবে গ্রেপ্তারদের মধ্যে হাটহাজারী কওমি মাদ্রাসার ছাত্রও রয়েছে।

“লালখান বাজার কওমি মাদ্রাসায় কয়েক বছর আগে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ হয়।সম্প্রতি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া মুফতি হান্নানও কওমি ধারায় শিক্ষিত। আর আজ হঠাৎ করে ওই জঙ্গি গোষ্ঠীকে প্রত্যাশিত শাস্তির বদলে পুরস্কৃত করার তামাশা দেখে জাতি নির্বাক হয়ে গেছে।”

কোনো রকম সংস্কার ছাড়াই কওমি মাদ্রাসার সনদকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আলিয়া মাদ্রাসা ছেড়ে ‘উগ্রপন্থি’ কওমি মাদ্রাসামুখী করবে বলে মন্তব্য করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের সদস্য সচিব।

তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের মাদ্রাসা শিক্ষা নীতি বড়ই রহস্যময়।নতুন স্বীকৃতির ফলে আলিয়া মাদ্রাসাগুলো ধ্বংস হবে এবং কওমিদের উগ্রশক্তি বৃদ্ধি পাবে, যা সুন্নিয়তের বিরুদ্ধে সরকারের চক্রান্ত এবং ওহাবি-সালাফিদের প্রতি অনুগ্রহ হিসেবে বিবেচিত হবে।”

কওমি মাদ্রাসার সনদকে স্বীকৃতির ঘোষণা দ্রুত প্রত্যাহার করে একমুখী মাদ্রাসা শিক্ষা নীতি বাস্তবায়নের দাবি করেন মোছাহেব উদ্দীন বখতেয়ার।

“আলিয়া-কওমি নির্বিশেষে সবাই একই সিলেবাসে পড়ে, একই প্রশ্নে পরীক্ষা দিলেই কেবল সরকারি সনদ পেতে পারে, অন্যথায় নয়।”

আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা এম এ মতিন সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মান্নান, সৈয়্যদ মুহাম্মদ মছিহুদ্দৌলা, স উ ম আবদুস সামাদ, আবুল ফারাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন, ইছমাইল নোমানী, কাজী সোলাইমান চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।