চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় গুলির মামলায় ড. অনুপমের সাক্ষ্য

চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে ১৯৮৮ সালে শেখ হাসিনার জনসভায় পুলিশের গুলিবর্ষণের মামলায় সাক্ষি দিয়েছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2016, 10:44 AM
Updated : 26 May 2016, 10:45 AM

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রুহুল আমিনের আদালতে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে এই সমাজ বিজ্ঞানী সাক্ষ্য দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন।  

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় তিন দশক আগের মামলাটি তিন মাস আগে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর হয়।

এরপর আদালত গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. অনুপম সেনসহ ছয়জনকে সাক্ষ্য দিতে সমন জারি করে।

রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় মন্ত্রী মোশাররফ আসতে না পারেননি বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেসবাহ।

এইচ এম এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদীঘি ময়দানে ৮ দলীয় জোটের জনসভায় শেখ হাসিনা যাওয়ার পথে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ।

এতে নিহত হন হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পংকজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত নামে ২৪ জন। 

সেদিন শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক অনুপম সেনও ছিলেন।

২৮ বছর আগের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই অধ্যাপক সাক্ষ্যে বলেন, আনুমানিক বেলা ১টার দিকে ট্রাকটি আদালত ভবনের দিকে আসার সময় গুলিবর্ষণ শুরু হয়।

“বিভিন্ন জনকে গুলি খেয়ে আমি কাতরাতে দেখিছি। অনেককে প্রাণরক্ষার চেষ্টা করতেও দেখেছি। পরে শুনেছি, গুলিতে মোট ২৪ জন মারা গেছেন।”

গুলিবর্ষণের পর আইনজীবীরা মানব বেষ্টনি তৈরির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে রক্ষা করে তাকে আইনজীবী সমিতি ভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন।

ড. অনুপম সেন

অনুপম সেন বলেন, গুলিতে নিহতদের কারও লাশ পরিবারকে নিতে দেয়নি তৎকালীন সরকার।

“হিন্দু-মুসলিম নির্বিচারে সবাইকে বলুয়ার দীঘি শ্মশানে পুড়ে ফেলে।”

আইনজীবী মেজবাহ জানান, আদালত আগামী ২৬ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছে। সেদিন সাক্ষ্য দিতে গণপূর্তমন্ত্রী  ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ, সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি সমন জারি করা হয়েছে।

নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে গুলিবর্ষণের ওই ঘটনায় তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করে আদালতে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

বিএনপি আমলে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ১৯৯৮ সালের ১৪ মে সহকারী পুলিশ কমিশনার হাফিজ উদ্দিন দেওয়ান ৪৭ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।

ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেয়। ১৯৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার কাদের খান সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন সাতজনের বিরুদ্ধে।

তাতে আসামি করা হয় কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল ওরফে জে সি মন্ডল, কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, মমতাজ উদ্দিন, শাহ মো. আব্দুল্লাহ, বশির উদ্দিনকে।

মামলার বাদী শহীদুল হক ইতোমধ্যে মারা গেছেন। মারা গেছেন তদন্ত কর্মকর্তা কাদের খানও। আসামিদের মধ্যে বশির মারা গেছেন। আসামি জে সি মন্ডল রয়েছেন পলাতক।