বিদায় অনুষ্ঠানের ‘নিয়ন্ত্রণের দ্বন্দ্বে’ চির বিদায় শিক্ষার্থীর

চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অনুষদের বিদায় অনুষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বেই নাছিম আহমেদ সোহেল খুন হন বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথায় উঠে এসেছে।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীমিন্টু চৌধুরী ও , চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2016, 05:46 PM
Updated : 30 March 2016, 11:30 AM

শিক্ষার্থীদের এই বিরোধের নেপথ্যে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের দ্বন্দ্বই কাজ করেছে বলে শিক্ষার্থীদের দাবি।

তবে চট্টগ্রাম মহানগরে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ দুই নেতা এই ছাত্রলীগ নেতা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি করলেও দুজনই বলছেন, পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে মহল বিশেষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের অন্তর্দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটেছে।”

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়াসা মোড় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের মধ্যে এক পক্ষের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম নগর কমিটির সদস্য সোহেল।

এমবিএ প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র সোহেল মেয়র নাছিরের অনুসারী ছিলেন বলে ছাত্রলীগ নেতারা জানান।

নাছিম আহমেদ সোহেল

এ কান্না সহপাঠীর জন্য

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অনুষদের ২৩তম ব্যাচের বিদায় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। আগামী ৩১ মার্চের অনুষ্ঠানটি নিয়ে গত ১৩ মার্চও সোহেল ও তার পক্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরোধী পক্ষের ঝগড়া হয়েছিল।

১৩ মার্চের ওই ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সোহেলের সহপাঠী ও ২৩তম ব্যাচেরই শিক্ষার্থী মাসুদ রানা।

ওই জিডিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম ব্যাচের তামিম, ২৫তম ব্যাচের মেজবাহ ও তাসরিফ এবং ২৬তম ব্যাচের মোস্তফা নামের চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।

জিডিতে বলা হয়- “অনুষ্ঠানের রিহার্সেল চলাকালে ওই চার শিক্ষার্থী গিয়ে রিহার্সেলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বের করে দেয় এবং অনুষ্ঠান করলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলেও হুমকি দেয়।”

শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদায় অনুষ্ঠানে এক পক্ষ প্রধান অতিথি করতে চাইছিল মহিউদ্দিন চৌধুরীকে, অন্য পক্ষ চাইছিল আ জ ম নাছিরকে। তা নিয়েই বিরোধের সূত্রপাত।

সোহেলের সহপাঠী মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় একটি কক্ষে অনুষ্ঠানের রিহাসের্ল করছিল কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী। এসময় হামলাকারীরা গিয়ে তাদের বাধা দেয়।

“এনিয়ে হাতাহাতি হয়। ওই কক্ষের পাশেই ছিল সোহেল। সে এগিয়ে গেলে তাকে ছুরিকাঘাত করে হামলাকারীরা।”

ক্ষোভের আগুন সড়কে

সোহেল হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও গাড়ি ভাংচুর শুরু করে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। পরে মেয়র নাছিরের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়।

তবে নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত অনুষ্ঠান করা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দুই পক্ষের বিরোধ। এটা ছাত্রলীগের বিষয় না। সেখানে কোনো কমিটি নেই।”

সোহেলের লাশ দেখে নাছির চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে অতিথি হওয়ার জন্য অনুরোধ নিয়ে সোহেল আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু ৩১ মার্চ অন্য অনুষ্ঠান থাকায় আমি রাজি হইনি।”

তবে ওই অনুষ্ঠানের জন্য মেডিকেল কলেজের মিলনায়তন ভাড়া করতে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেন বলে জানান তিনি।

মহিউদ্দিন ও নাছিরকে প্রধান অতিথি করা নিয়ে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে শিক্ষার্থীরা।

মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উপাচার্য ড. অনুপম সেনকে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখতে সম্মত হয়।”

তাতে বিষয়টি চাপা পড়লেও যে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব চাপা পড়েনি, তার স্পষ্ট করে মঙ্গলবারের সংঘাত।

এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী

আ জ ম নাছির

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন মহিউদ্দিন। তখন তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এম মনজুর আলমের সময়েও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে মহিউদ্দিনবিরোধী হিসেবে পরিচিত নাছির গত বছর মেয়র হলে প্রিমিয়ারের পরিচালনা নিয়ে বিরোধের শুরু হয়। বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়ায়।

মহিউদ্দিনের রিট আবেদনে হাই কোর্ট প্রিমিয়ারের সব কার্যক্রমে উদ্যোক্তা মহিউদ্দিনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আদেশ দেয়।

সোহেলের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানালেও মহিউদ্দিন চৌধুরী এক বিবৃতিতে বিক্ষোভ থেকে ভাংচুরের নিন্দাও জানান।

অন্যদিকে ভাংচুরের বিষয়ে নাছির বলেন, তা ছিল শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ থেকে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ।

বিবৃতিতে মহিউদ্দিন ছাত্র খুনের ঘটনার নেপথ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংসের ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে দাবি করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

অন্যদিকে নাছির সাংবাদিকদের বলেন, “একটি মহল রাজনৈতিক ব্যানারে থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।”