মিতু হত্যা: গ্রেপ্তার আসামি কালু কারাগারে

সাত বছর পর চট্টগ্রাম থেকেই গ্রেপ্তার হলেন আলোচিত এই খুনের আসামি, যাকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা ছিল।

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার আসামি খাইরুল ইসলাম কালুকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

খুনের সাত বছর পর শুক্রবার তাকে চট্টগ্রাম থেকেই গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা ছিল।

ধরার পর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার একটি মামলায় কালুকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার দুপুরে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১২ সালে রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ওই মামলায় কালুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।

চট্টগ্রাম জেলা আদালতের ওসি (প্রসিকিউশন) জাকির হোসেন মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালত কালুকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

মিতু হত্যা মামলার আসামি কালুর গ্রেপ্তারের বিষয়ে মহানগর পিপি আবদুর রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পলাতক আসামি কালু গ্রেপ্তার হওয়ায় মামলা পরিচালনায় সহযোগিতা হবে।

“যে কোনো আসামি গ্রেপ্তার হলে মামলা প্রমাণ করতে সুবিধা হয়। আমরা এখনো অফিসিয়ালি কালুর গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানি না। খোলার দিনে এ বিষয়ে অবগত হলে তাকে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন করব। আসামি কালু আইনজীবী নিয়োগ করলে অন্য সাক্ষীদের তার আইনজীবী জেরা করতে পারবে।”

রাঙ্গুনিয়া থানার একটি মামলায় পিবিআই তাকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার গভীর রাতে থানা পুলিশকে হস্তান্তর করে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন ওই থানার ওসি মাহবুব মিল্কী।

মিতু হত্যামামলা তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই। সেখানে মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলকেই খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। খুনের দিন কালু মিতুকে ছুরিকাঘাত করেছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

পিবিআইর এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নগরীর আকবর শাহ থানার ছিন্নমূল এলাকা থেকে শুক্রবার গভীর রাতে কালুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

“মিতু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সে পালিয়ে ছিল। আকবর শাহ এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি জায়গায় প্রহরী হিসেবে কাজ করত কালু।”

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। বাবুল তার কয়েকদিন আগেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বদলি হয়েছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের ১৯ দিন পর ওই বছরের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুলকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। তার কিছু দিন পর পুলিশের চাকরিও ছেড়ে দেন তিনি।

বাবুলকে জিজ্ঞসাবাদের দুদিন পর ২৬ জুন মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় পুলিশ। তারা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার ‘পরিকল্পনাতেই’ এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়।

জবানবন্দিতে ওয়াসিম জানান, নবী, কালু, মুছা ও তিনি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। নবী ও কালু মিতুকে ছুরিকাঘাত করেন।

হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পূর্তির তিন দিন আগে কালু গ্রেপ্তার হলেও মুছা এখনেও পুলিশের চোখে পলাতক।

খুনের পর মুছার সন্ধান এখনও জানা যায়নি। কালু গ্রেপ্তার হওয়ার পর পিপি আবদুর রশিদ বলেন, “মুছার বিরুদ্ধেও ওয়ারেন্ট আছে। পুলিশ যেখানে তাকে পাবে সেখানে গ্রেপ্তার করবে।”

মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার ২০১৬ সালের ৪ জুলাই চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছিলেন, ওই বছরের ২২ জুন বন্দর থানার তৎকালীন ওসি মহিউদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বন্দর এলাকায় তার এক পরিচিত ব্যক্তির বাসা থেকে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়।

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ দাবি নাকচ করে দিয়েছিল। এর তিন মাস পর ২০১৬ সালের ৬ অক্টোবর সিএমপি তৎকালীন কমিশনার ইকবাল বাহার আসামি মুছা ও কালুর সন্ধান পেতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন।

তদন্ত করতে গিয়ে খোদ বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে ২০২১ সালের মে মাসে ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। তখন বাবুলকে আসামি করে নতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

তবে আদালতের নির্দেশে সেই মামলার সমাপ্তি ঘটে এবং বাবুলের মামলাটিই পুনরুজ্জীবিত হয়। এ বছরের ৯ এপ্রিল প্রথম সাক্ষী মিতুর বাবা মোশাররফের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাবুলসহ সাত আসামির বিচার শুরু হয়।

বাবুল ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু।