খালেদ মাহমুদের চোখে ‘এগিয়ে সাকিব, প্রস্তুত লিটনও’

বাংলাদেশের পরবর্তী ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে খালেদ মাহমুদের প্রথম পছন্দ সাকিব আল হাসান, তবে লিটন দাস হলেও আপত্তি নেই তার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2023, 01:23 PM
Updated : 5 August 2023, 01:23 PM

‘নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক কে?’- তামিমের ইকবালের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া সংবাদ সম্মেলনেই ওঠে এই প্রশ্ন। গত ৪৮ ঘণ্টায় এটি পরিণত হয়েছে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে। খালেদ মাহমুদের রায় এখানে সাকিব আল হাসানের পক্ষে। তবে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের মতে, লিটন দাস হলেও মন্দ হবে না। 

গত বৃহস্পতিবার তামিম অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে চলছে নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক খোঁজার অভিযান। যেখানে স্বাভাবিকভাবেই আসছে সহ-অধিনায়ক লিটনের নাম। এছাড়া অন্য দুই সংস্করণে দায়িত্ব পালন করা সাকিবের কথাও বলছেন অনেকে। 

দীর্ঘ দিন টিম ডিরেক্টর হিসেবে দলের সঙ্গে থাকা মাহমুদও মনে করেন, এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো বড় দুটি টুর্নামেন্টের আগে সাকিবকে দেওয়াই হবে সেরা সিদ্ধান্ত। তবে বিসিবি যদি প্রক্রিয়া মেনে সহ-অধিনায়ক লিটনকে অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করে, সেটির প্রতিও সমর্থন থাকবে তার।  

কুচকির চোটে ভারতের বিপক্ষে গত বছরের ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন না তামিম। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দলকে নেতৃত্ব দেন লিটন। এরপর গত মাসে অবসরের ঘোষণা ও পরে তা প্রত্যাহার করলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ খেলেননি তামিম।  

তখন সহ-অধিনায়ক হিসেবে লিটনের নাম ঘোষণা করে বিসিবি। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে তিনিই টস করতে নামেন। সব মিলিয়ে পাঁচ ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করে তিনটিতে জিতেছেন লিটন। তার নেতৃত্বে ভারতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও শেষ ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় দল।  

অধিনায়ক হিসেবে লিটনের দুই সিরিজে পারফরম্যান্সে খুশি মাহমুদ। তবে শনিবার বিসিবিতে সংবাদমাধ্যমে এই বোর্ড পরিচালক বলেন, বৃহত্তর পরিসরের ভাবনা থেকে সাকিবকেই অধিনায়ক হিসেবে দেখতে চান তিনি।

“আমি কীভাবে বলি যে, লিটন দাস (আমার পছন্দ) নয়। লিটন দাস সিরিজ জিতিয়েছে, ভারতের বিপক্ষে। তবে যাই হোক, সাকিব তো অবশ্যই এগিয়ে থাকবে এখানে। সাকিবের মাথা (বুদ্ধি), অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তবু লিটনকেও ছোট করতে চাই না। লিটন অতীতে (অধিনায়ক হিসেবে) খুবই ভালো কাজ করেছে।” 

“তবে আমি মনে করি যে দলে সাকিব আছে, সে দলে এখন সাকিবকে দেওয়াটাই ঠিক। আমার ব্যক্তিগত মত এটি। আর লিটন, শান্ত, মিরাজ এরাও তৈরি হবে। সামনে এদেরকেই করতে হবে। এদের হাতেই আর্মব্যান্ড যাবে। তামিম, মুশফিকরা অবসর নিলে এরাই সিনিয়র হবে।”  

গত বছরের এশিয়া কাপ থেকে একসঙ্গে জাতীয় দলের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব। আরেকটি এশিয়া কাপের আগে এবার ওয়ানডের নেতৃত্ব পেলে ২০১১ সালের পর প্রথমবার তিন সংস্করণে একসঙ্গে অধিনায়কত্ব করবেন তিনি।  

তবে প্রক্রিয়া ঠিক রাখলে সহ-অধিনায়ক হিসেবে লিটনেরই এখন নেতৃত্ব পাওয়ার কথা। আর বিসিবি যদি সে পথে হাঁটে, সেটিও ভুল হবে না বলে মনে করেন বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট চেয়ারম্যান।   

“অবশ্য লিটনকে (অধিনায়কত্ব) দিলেও যে, এটা সাকিবের জন্য ইস্যু হবে, তা নয়। আমি সাকিবকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আমার মনে হয় না, সাকিব এসব নিয়ে কিছু মনে করবে। সে উল্টো লিটনকে আরও বেশি সাহায্য করবে। এখন বোর্ড যদি মনে করে লিটন (অধিনায়ক হবে), এটাও কোনো সমস্যা নয়।”  

“লিটন যে প্রস্তুত নয়, তাও বলা ঠিক হবে না। সেও অভিজ্ঞ। এত দিন ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট, জাতীয় দলে খেলছে, ওর অভিজ্ঞতাও অনেক ভালো। শেষ কথা যেটা বলব, যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমরা সিরিজ জিতেছি, লিটনের কথা বারবার আসবে। তবে আমি মনে করি, এখনও সাকিব আছে যেহেতু, আমাদের খুব ভালো একটা বিকল্প আছে।” 

গত এক মাসে তামিমকে ঘিরে চলা নানান ঘটনায় মর্মাহত খালেদ মাহমুদ। শেষ পর্যন্ত তামিম অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় স্বস্তির কথা জানালেন তিনি।

“আমি বিশ্বাস করি, যেটা হয়েছে, কোনোভাবেই কাম্য নয়। তামিম এখন ফিরেছে, খুব ভালো। সংবাদ সম্মেলনে দেখলাম, অধিনায়কত্ব করবে না। এটা ওর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। যেহেতু ইনজুরিতে আছে, ও জানে না কতটুকু ফিট হতে পারবে, কতটুকু কামব্যাক করতে পারবে। সে খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি মনে করি। আর তামিম খেলবে আবার, এটা একটা নির্ভার হওয়ার মতো ব্যাপার। কারণ আমরা এখনও তামিমের মতো একটা ওপেনার প্রস্তুত করতে পারিনি।”  

“অনেক ছেলে এসেছে, ভালো খেলেছে। তবে তামিম যতটা প্রতিষ্ঠিত, যেভাবে নিজেকে তৈরি করেছে, সেটা তো আমরা পাইনি। তো তামিম খেলবে। এশিয়া কাপ মিস করলেও, নিউ জিল্যান্ড সিরিজ ও বিশ্বকাপে খেলবে। আমরা বিশ্বকাপে অনেক বড় স্বপ্ন দেখছি। ওই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তামিমের মতো একজন খেলোয়াড় দরকার। আশা করি তামিম দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরবে। আর যেটা হয়েছে, সেটা পুরোপুরি যোগাযোগের ঘাটতি ও ভুল বোঝাবুঝি ছিল আমার মনে হয়।”