সিমন্সের মন্তব্যে রাসেল বললেন, ‘চুপ থাকব’

‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার জন্য ক্রিকেটারদের দরজায় গিয়ে অনুরোধ করতে পারি না’, বলেছিলেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্স।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2022, 01:48 PM
Updated : 12 August 2022, 01:48 PM

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাকি আর দুই মাস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের সেখানে পাওয়া যাবে কি-না, এখনও তার কোনো নিশ্চয়তা ও স্পষ্টতা নেই টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে। বিশ্বকাপের দল গোছাতে গিয়ে তাই সংকটে পড়েছেন নির্বাচকরা। সম্প্রতি অসহায় কণ্ঠে কোচ ফিল সিমন্স বলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার জন্য ক্রিকেটারদের দরজায় গিয়ে তো তিনি অনুরোধ করতে পারেন না। জবাবে ‘চুপ’ থাকাকেই শ্রেয় মনে করছেন অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল।

বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগগুলোয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের চাহিদা প্রচুর। জাতীয় দলের খেলা বাদ দিয়ে অনেকেই খেলে থাকেন এসব লিগে। রাসেলসহ নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড়ের জাতীয় দলে অনুপস্থিতির বিষয়ে স্পষ্টতার অভাব নিয়ে গত বুধবার হতাশা প্রকাশ করেন প্রধান কোচ সিমন্স ও প্রধান নির্বাচক ডেসমন্ড হেইন্স।

সিমন্স বলেছিলেন, “এটা কষ্ট দেয়। কোনো উপায়ও তো নেই। আমি মনে করি না যে খেলোয়াড়দের দরজায় গিয়ে তাদের দেশের হয়ে খেলার জন্য আমার অনুরোধ করা উচিত। যদি কেউ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই নিজেকে ‘অ‍্যাভেইলেবল’ রাখতে হবে।”

বর্তমানে ইংল্যান্ডে ১০০ বলের টুর্নামেন্ট দা হান্ড্রেড-এ ম্যানচেস্টার অরিজিনালসের হয়ে খেলা রাসেল পেয়েছেন সিমন্সের ওই বার্তা। কোচের উদ্ধৃতিসহ ইএসপিএনক্রিকইনফোর করা সংবাদের কিছু অংশের একটি স্ক্রিনশট ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার লিখেছেন, “আমি জানতাম এমন কিছু ঘটতে চলেছে। কিন্তু আমি চুপ থাকব।”

২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেননি রাসেল। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলের অংশও নন তিনি। হেইন্স বলেছেন, “রাসেল নেই, কারণ সে নিজেকে ‘অ‍্যাভেইলেবল’ রাখেনি।”

বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোয় দারুণ কাঙ্ক্ষিত ক্রিকেটার রাসেল। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হতে যাওয়া নতুন টি-টোয়েন্টি লিগেও এরই মধ্যে চুক্তি করেছেন ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।

ইংল্যান্ডে দা হান্ড্রেড-এ খেলছেন সুনিল নারাইনও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এই স্পিনিং অলরাউন্ডার সবশেষ খেলেছেন ২০১৯ সালের অগাস্টে, টি-টোয়েন্টিতে। এভিন লুইস ও ওশেন টমাস ফিটনেস পরীক্ষা দেননি বলে জানিয়েছেন হেইন্স। লুইস আসন্ন লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে জ্যাফনা কিংসের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। ব্যক্তিগত কারণে নেই ফ্যাবিয়ান অ্যালেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে নিয়মিত খেলা জেসন হোল্ডার, ওবেড ম্যাককয়, আলজারি জোসেফ, কাইল মেয়ার্স, রোমারিও শেফার্ড ও জেডেন সিলস দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন টি-টোয়েন্টি লিগে চুক্তি করেছেন। এই টুর্নামেন্ট হবে আমিরাতের লিগের সঙ্গে একই সময়ে। রাসেল, নারাইন ছাড়াও অ্যালেন, লুইস, রভম্যান পাওয়েল, আকিল হোসেন, শিমরন হেটমায়ার, কাইরন পোলার্ড, নিকোলাস পুরান ও ডোয়াইন ব্রাভো আমিরাতের লিগে চুক্তি করেছেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের শীর্ষ টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়দের একত্র করা তাই কঠিন হয়ে গেছে। অথচ আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

হেইন্সের মতে, জাতীয় দলে নির্বাচনের জন্য আসন্ন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) মতো বোর্ড পরিচালিত টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সকে আরও গুরুত্ব দেবে টিম ম্যানেজমেন্ট।

“যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের পরিচালিত কোনো প্রতিযোগিতা হয় এবং সেখানে কেউ ভালো করে, আমি মনে করি তার নামটিই নির্বাচনের জন্য আসা উচিত। সেই পারফরম্যান্স আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বলিনি যে বিশ্বকাপের দল ঠিক হয়ে গেছে। তাই বিশ্বকাপের আগে যে সব খেলা হবে, আমাদের অবশ্যই সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।”

রাসেল ও নারাইন সিপিএলের নিয়মিত মুখ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের দলে থাকার সম্ভাবনা তাই থাকছেই।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্প্রতি নারাইন ক্রিকইনফোকে বলেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে অনেক কিছুই হয় পর্দার আড়ালে।

“পর্দার পেছনে অনেক কিছু ঘটছে, তাতে আমি জড়াতে চাই না। আমি বলতে চাচ্ছি, প্রত্যেকেই তার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চাইবে। আপনি দলের অংশ হতে চান, কিন্তু সেটির অংশ নন, বিষয়টি কঠিন।”

“কোনো একটা কারণে এসব ঘটছে। আশা করি, ভবিষ্যতে আমি আবার মেরুন জার্সি পরতে পারব...এখনও আমি উইন্ডিজের হয়ে খেলতে চাই। দেখা যাক, সেই সুযোগ কখন আসে, কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য কখনই ‘না’ নয়।”

এর আগে রাসেলও যতটা সম্ভব ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার ইচ্ছার কথা বলেছেন। একই সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চেয়ে তার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিও অনেকটা স্পষ্ট। গত বছরের শেষের দিকে যেমন তিনি আবু ধাবি টি-টেন ​​লিগে ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে খেলেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে এক সপ্তাহ পর শুরু হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাকিস্তান সফরে যাননি।