রেকর্ড রানের নাটকীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের স্মরণীয় জয়

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে শেষ দিনের নাটকীয়তায় অ্যান্ডারসন-রবিনসনের ছোবলে হেরে গেল পাকিস্তান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2022, 12:42 PM
Updated : 5 Dec 2022, 12:42 PM

চলতি ফুটবল বিশ্বকাপে ‘ভিএআর’ নিয়ে ফুটবলারদের যে অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা, প্রায় একই অভিজ্ঞতা হলো ইংল্যান্ডের। আম্পায়ারের আঙুল উঠতেই এক দফা উদযাপন সেরে নিল তারা। কিন্তু দ্রুতই থামতে হলো পাকিস্তানের নাসিম শাহর রিভিউ নেওয়ায়। উদযাপন স্থগিত রেখে এবার অপেক্ষার পালা। থমকে গেল যেন সময়ও। শেষ পর্যন্ত ইংলিশদের আবার উৎসবে মেতে ওঠার সবুজ সঙ্কেত হয়ে এলো রিভিউয়ের লাল বাতি। দ্বিতীয় দফায় মেতে উঠল তারা উল্লাসে। জয়ের আনন্দও যেন বেড়ে গেল বহুগুণে।

প্রবাদে আছে, ভাগ্য সবসময় সাহসীদের পাশেই থাকে। সেটিই যেন আরেক প্রমাণ হলো রাওয়ালপিন্ডিতে ইংল্যান্ডের এই জয়ে। চতুর্থ দিন বিকেলে যে দুঃসাহসী ইনিংস ঘোষণা, প্রতিদান পেলেন তারা অসাধারণ এক জয়ে। বলা ভালো, ভাগ্যকে পক্ষে আনলেন তারা শেষ দিনের অসাধারণ বোলিংয়ে।

রান উৎসবের যে টেস্টে সাড়ে তিন দিন পরও ড্র ছাড়া অন্য কোনো ফল ছিল অকল্পনীয়, সেই টেস্টেই পাকিস্তানকে ৭৪ রানে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।

সব মিলিয় ১ হাজার ৭৬৮ রান এসেছে এই ম্যাচে। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৫ বছরের ইতিহাসে জয়-পরাজয় হওয়া ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড এটিই।

শেষ ইনিংসে ৩৪৩ রান তাড়ায় সোমবার ম্যাচের শেষ সেশনে পাকিস্তান অলআউট ২৬৮ রানে।

ইংল্যান্ডের শেষ দিনের নায়কদের একজন সেই চিরতরুণ যোদ্ধা। সড়কের মতো ২২ গজেও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন জিমি অ্যান্ডারসন। স্কিলের অসাধারণ প্রদর্শনীতে ৪০ বছর বয়সী পেসারের শিকার চার উইকেট। আগের দিনের একটির সঙ্গে অলিভার রবিনসন যোগ করেন আরও তিনটি। ব্যাটে-বলের পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরাও তিনিই।

নিষ্প্রাণ উইকেটে ইংল্যান্ডের অবিশ্বাস্য আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য এই টেস্ট প্রথম দিন থেকেই ছিল আলোচনায়। প্রথম ইনিংসে দুই দলের রানের জোয়ারের পর চতুর্থ দিন সাদা পোশাকে আরেক দফা টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং করে আচমকাই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় ইংল্যান্ড। চার সেশনে পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৪৩।

এই উইকেটে বলা যায় বড় ঝুঁকিই নেন ইংলিশরা। তবে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও বেন স্টোকস জমানায় এটিই তো তাদের দর্শন। শুধু প্রতিপক্ষকে নয়, নিজেদেরও তারা চ্যালেঞ্জ জানায় নিত্য। এবারও সেই চ্যালেঞ্জ জয়ের স্বাদ পেল তারা নিজেদের সামর্থের সীমানা আরও বাড়িয়ে।

শেষ দিনে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে পাকিস্তানের প্রয়োজন পড়ে ২৬৩ রানের। দিনের শুরুর দিকেই পাকিস্তানকে ধাক্কা দেন অ্যান্ডারসন। ৪৩ রানে দিন শুরু করা ওপেনার ইমাম-উল-হককে থামান তিনি ৪৮ রানেই।

পরের জুটিতে অভিষিক্ত সৌদ শাকিল ও মোহাম্মদ রিজওয়ান পাকিস্তানকে রাখে লক্ষ্যে। ৩ উইকেটে ১৬৯ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় তারা, জয়ের সম্ভাবনায় তখনও এগিয়ে তারাই।

তবে ইংল্যান্ড হাল ছাড়েনি। দ্বিতীয় সেশন থেকে রিভার্স সুইং আদায় করতে থাকেন অ্যান্ডারসন ও রবিনসন। সেটির পুরস্কার পান দুজনই।

অফ স্টাম্প ঘেষে টানা বল করতে থাকা অ্যান্ডারসন রিভার্স সুইংয়ের সংযোগে রিজওয়ানকে বিদায় করেন ৪৬ রানে।

একটু পর রবিনসন বিদায় করেন সৌদ শাকিলকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫২ গড়ে রান করা ব্যাটসম্যান টেস্ট অভিষেকে করলেন ৩৭ ও ৭৬।

দুই থিতু ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ম্যাচে ফেরে উত্তেজনা। আঙুলের চোটে আগের দিন মাঠ ছেড়ে যাওয়া আজহার আলি আবার ব্যাটিংয়ে ফিরে হাল ধরেন দলের। তাকে সঙ্গ দেন আঘা সালমান।

চা বিরতির কিছুটা সময়ও এগিয়ে ছিল বলা যায় পাকিস্তানই। শেষ সেশনে ৫ উইকেট নিয়ে তাদের প্রয়োজন পড়ে ৮৬ রানের।

কিন্তু জয়ের ক্ষুধায় মরিয়া ইংলিশরা পাল্টে দেয় চিত্র। সেশনের তিন ওভার পরই মেলে সাফল্য। ৮০ ওভার হয়ে গেলেও রিভার্স সুইংয়ের আশায় দ্বিতীয় নতুন বল নেননি স্টোকস। ফলও মেলে তাতে। সালমানকে ৩০ রানে ফিরিয়ে রবিনসন ভাঙেন ৬১ রানের জুটি। পরের ওভারে তিনি ৪০ রান করা আজহার আলিকেও ফিরিয়ে উজ্জ্বল করেন জয়ের ছবিটা।

অ্যান্ডারসন কী আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন! এক ওভারেই শিকার করেন তিনি দুটি উইকেট। শেষ জুটিতে নাসিম শাহ ও অভিষিক্ত মোহাম্মদ আলি কিছুক্ষণ ঠেকিয়ে রাখেন ইংলিশদের। শেষ পর্যন্ত নাসিম শাহকে এলবিডব্লিউ করে জয় নিশ্চিত করেন জ্যাক লিচ।

এই ম্যাচের আগে দলে একের পর এক ক্রিকেটারের অসুস্থতায় একাদশ সাজানো নিয়েই শঙ্কায় ছিল ইংল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত মোটামুটি সামলে নিয়ে তারা শুরু করে খেলা। এরপর পাঁচদিন ধরে যা হলো, ইংলিশ ক্রিকেট তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেও আলাদা জায়গা পেয়ে গেল এই ম্যাচ।

তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুক্রবার থেকে মুলতানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৫৭

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৭৯

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২৬৪/৭ (ডি.)

পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৪৩, আগের দিন ৮০/২) ৯৬.৩ ওভারে ২৬৮ (শফিক ৬, ইমাম ৪৮, আজহার ৪০, বাবর ৪, শাকিল ৭৬, রিজওয়ান ৪৬, সালমান ৩০, নাসিম ৬, জাহিদ ১, রউফ ০, আলি ০*; রবিনসন ২২-৬-৫০-৪, স্টোকস ২০-৪-৬৯-১, অ্যান্ডারসন ২৪-১২-৩৬-৪, লিচ ১৮.৩-৬-৫৬-১, জ্যাকস ৬-০-৩৮-০, রুট ৬-০-১৬-০)।

ফল: ইংল্যান্ড ৭৪ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: অলিভার রবিসন।