দুই মাস অচেনা হয়ে থাকার অবিশ্বাস্য গল্প শোনালেন কোহলি

পথঘাটে কেউ তাকে চেনেনি, নাম ধরে কেউ ডাকেনি, টানা দুই মাস সাধারণ মানুষের মতোই সময় কাটাতে পেরে ভারতীয় এই মহাতারকা বলছেন, ‘পরাবাস্তব এক অভিজ্ঞতা।’

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2024, 05:16 AM
Updated : 26 March 2024, 05:16 AM

ভারতের বিনোদন জগতের দুই আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র দুজন। তারকা দ্যুতি ও খ্যাতিতে ঝকমকে দুজনই। ভিরাট  কোহলি ও আনুশকা শার্মা দম্পতির জন্য তাই নিজ দেশে সাধারণ মানুষের মতো জীবন কাটানোর আশা করা অকল্পনীয় কিছু। তবে সম্প্রতি দ্বিতীয় সন্তানের জন্মকে ঘিরে দেশের বাইরে তারা দুই মাস সময় কাটাতে পেরেছেন একদম নিজেদের মতো। যেখানে তারা ছিলেন আর দশজন মানুষের মতোই, পথঘাটে কেউ তাদের চিনত না। সেই গল্প শুনিয়ে কোহলি বললেন, তাদের কাছে এটা ছিল পরাবাস্তব এক অভিজ্ঞতা।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডনের একটি হাসপাতালে পৃথিবীর আলোয় আসে কোহলি-আনুশকা দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান ‘আকায়।’ ক্রিকেট থেকে কোহলির বিরতির শুরু এর তিন সপ্তাহ আগে থেকেই।

জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে দলের সঙ্গে হায়দরাবাদে পৌঁছানোর পর দল ছেড়ে যান কোহলি। ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জরুরি পারিবারিক প্রয়োজনে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম দুই টেস্টে খেলতে পারবেন না অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। পরে তার সেই বিরতি দীর্ঘায়িত হয় আরও। পাঁচ ম্যাচের সিরিজের পুরোটাই বাইরে থাকেন তিনি।

এই সময়টায় তার বা বোর্ডের পক্ষ থেকে তেমন কিছু জানানো হয়নি। শুধু সন্তান জন্মের খবর তিনি জানান সামাজিক মাধ্যমে। লন্ডনের একটি রেস্তোরাঁয় কন্যা ভামিকার সঙ্গে কোহলির একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। এছাড়া তেমন কিছুই আর জানা যায়নি। লন্ডনে বা ইংল্যান্ডের কোথায় তিনি ছিলেন, বিস্তারিত কোনো কিছুই খোলাসা করা হয়নি।

দীর্ঘ বিরতির পর র‌য়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে আইপিএল দিয়ে ক্রিকেটে ফেরেন কোহলি। উদ্বোধনী দিনে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে আউট হন ২১ রান করে। দ্বিতীয় ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে সোমবার বেঙ্গালুরুতে ৪৯ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা হন তিনি।

ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে ক্রিকেটীয় আলোচনার ফাঁকে এলো তার দীর্ঘ বিরতির প্রসঙ্গও। সেই সময়টুকু নিয়ে প্রথমবার মুখ খুলে কোহলি জানালেন, পরিবারের সঙ্গে একান্তে সময় উপভোগ করেছেন তিনি তারিয়ে তারিয়ে।

“আমরা দেশে ছিলাম না। এমন এক জায়গায় ছিলাম, যেখানে কেউ আমাদের চিনত না। স্রেফ পরিবারের সঙ্গে একান্ত সময়, দুটি মাসের জন্য একদম স্বাভাবিক অনুভব করা… আমার জন্য, পরিবার হিসেবে আমাদের জন্য এটা ছিল পরাস্তব এক অভিজ্ঞতা।”

“দুই সন্তান নিয়ে পারিবারিক দিক থেকে অবশ্যই সবকিছু পুরোপুরি বদলে গেছে। কাজেই এই সময়টায় একসঙ্গে থাকতে পারা, বড় সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কের যে সংযোগ তৈরি হয়েছে, তা অসাধারণ। পরিবারের সঙ্গে এই সময়টুকু কাটানোর সুযোগ পেয়ে স্রষ্টার প্রতি এর চেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ আর হতে পারতাম না।”

ভারতে বা এই উপমহাদেশে ক্রিকেট বা চলচ্চিত্র তারকাদের প্রতিটি পদক্ষেপ থাকে পাদপ্রদীপের আলোয়। তারকা খ্যাতির সঙ্গে অনেক সীমাবদ্ধতা, দায়বদ্ধতা, বাধ্যবাধকতা আর বিড়ম্বনাও চলে আসে। কিন্তু কোহলি এই দুই মাস ছিলেন যেন ভিন্ন এক জগতে।

“আর হ্যাঁ, এমন এক জায়গায় ছিলাম আমরা… ফেরার পর সবাইকে বলছিলাম যে, দেশে ফিরে সবার আওয়াজ আরও বেশি উঁচু লাগছে। মাথা তুলে তাকাতে পারছিলাম না, কারণ আমার নাম ধরে কেউ ডাকছে, দুই মাস ধরে এমন কিছুতে অভ্যস্ত ছিলাম না। এরপর আবার যখন সেই উচ্চ আওয়াজ শুনতে পেলাম, বুঝতে পারলাম যে আবার ফিরে এসেছি এখানে।”

“তবে ওই সময়টা চমৎকার ছিল। পথে আর দশজনের মানুষের মতোই থাকা, অচেনা হয়ে থাকা এবং সবাই প্রতিটি দিন যেভাবে কাটায়, সেভাবে জীবন কাটাতে পারা ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।”

তবে তিনি মাঠের মানুষ। মাঠের ডাকও তাই প্রবলভাবে আন্দোলিত করে তাকে। সোমবারের ম্যাচেই যেন তিনি মাঠে ঢোকা মাত্র গর্জন উঠেছে বেঙ্গালুরুর গ্যালারিতে। আইপিএলের শুরুর আসর থেকেই এই দলের সঙ্গী তিনি। রানের স্রোত বইয়ে দিয়েছেন এই দলের হয়ে, দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দীর্ঘদিন। এই দলের একরকম সমার্থক হয়ে গেছেন তিনি। অনেকের হয়তো মনেও থাকে না, তার নিজের শহর দিল্লি। তাকে বেঙ্গালুরুর সন্তান বলেই ধরে নেন অনেকে। সমর্থকেরাও তাকে ভালোবাসার জোয়ারে ভাসিয়েছেন বছরের পর বছর ধরে।

প্রিয় আঙিনায় ফিরে ভালোবাসার সেই দাবি, ভক্তদের প্রতি টানের কথাও বললেন কোহলি। 

“বছরের পর বছর ধরে এটা চলে আসছে এবং খেলাটা নিয়ে লোকে অনেক কিছুর কথাই বলে- এত এত অর্জন, পরিসংখ্যান, সংখ্যা। তবে দিনশেষে আমরা যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন এসব সংখ্যা বা পরিসংখ্যানের কথা ভাবি না। মুহূর্তগুলি, স্মৃতিগুলোই কেবল রয়ে যায়।”

“ড্রেসিং রুমে রাহুল ভাইও (ভারতে কোচ রাহুল দ্রাবিড়) এখন একদম এই কথাগুলিই বলেন আমাদেরকে। মাঠে যখন আমরা খেলি, তখন যেন হৃদয় উজাড় করে খেলি, কারণ ভক্তদের সামনে খেলতে পারা, ড্রেসিং রুমে সঙ্গীদের সঙ্গে থাকতে পারার এই দিনগুলিই একদিন আমরা মিস করব। তাই এত বছর ধরে বিশুদ্ধভাবে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে (বেঙ্গালুরুর সমর্থকদের সঙ্গে), কখনোই তা ভোলার নয়। এত বছর ধরে যে ভালোবাসা, মূল্যায়ন ও সমর্থন পেয়ে আসছি, তা অসাধারণ।”