সাকিব-ইফতিখারের রেকর্ডের স্রোতে বরিশালের টানা চার জয়

সাকিব আল হাসান ও ইফতিখার আহমেদের তাণ্ডবে রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুলে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে ফরচুন বরিশাল

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2023, 05:06 PM
Updated : 19 Jan 2023, 05:06 PM

প্রথম ১০ ওভারে লড়াই হলো বেশ। পরের ১০ ওভারে যা হলো, তাকে বলা যায় টর্নেডো, সাইক্লোন, তাণ্ডব বা যে কোনো কিছু। সবুজ ঘাসের বুক চিরে আর হওয়ায় ভেসে মাঠের নানা প্রান্তে ছুটতে থাকল বল। ওই ১০ ওভারেই ম্যাচের ভাগ্য লিখে ফেলেন ইফতিখার আহমেদ ও সাকিব আল হাসান। দুজনের বিশ্ব রেকর্ড গড়া জুটিতে আরও অনেক কীর্তি-অর্জনের পথ ধরে রানের পাহাড় গড়ে ফরচুন বরিশাল পেল বড় জয়।

জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ইফতিখার-সাকিবের তাণ্ডবের পর রংপুর রাউডার্সের বিপক্ষে বরিশালের জয়ের ব্যবধান ৬৭ রানের।

সিলেট স্ট্রাইকার্সের কাছে হার দিয়ে আসর শুরু করা বরিশাল পেল টানা চতুর্থ জয়। পাঁচ ম্যাচে রংপুরের এটি তৃতীয় পরাজয়।

রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুলে বরিশালের জয়ের নায়ক ইফতিখার। তার পাশে কম যাননি সাকিবও। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন দুজনই। পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তারা গড়েন ১৯২ রানের বিশ্ব রেকর্ড।

জুটির রেকর্ড গড়ে অপরাজিত ইনিংসে ৪৫ বলে ১০০ রান করেন ইফতিখার। ৬ চারের সঙ্গে ৯টি ছয়ে সাজান নিজের ইনিংস।

দারুণ ছন্দে থাকা সাকিব করেছেন ৮৯ রান। এই সংস্করণে তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ৮৬ রান। ৯ চার ও ৬ ছয়ের ইনিংসে সেটিকে ছাড়িয়ে গেলেন বরিশাল অধিনায়ক।

৪৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে থাকা বরিশাল শেষ পর্যন্ত তোলে ২৩৮ রান। বিপিএলে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড স্পর্শ করতে পারেনি তারা স্রেফ ১ রানের জন্য।

রংপুর রান তাড়ায় যেতে পারে ১৭১ পর্যন্ত।

টস জিতে বরিশালকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় রংপুর। হারিস রউফ ও হাসান মাহমুদের গতির তোপে শুরুটাও ভালো হয় তাদের। পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসে জোড়া আঘাত করেন হারিস। ড্রেসিংরুমে ফেরান এনামুল হক বিজয় (৮ বলে ১৪) ও ইব্রাহিম জাদরানকে (৩ বলে ০)।

হাসানের পরের ওভারে প্রথম দুই বলে দুটি স্কুপে ছক্কা মারেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ এক স্লোয়ারে পরের বলে শোধ তোলেন হাসান। মিড উইকেটে রনি তালুকদারের হাতে ধরা পড়েন ২০ বলে ২৪ রান করা মিরাজ। 

পরের বলে অনসাইডে খেলতে গিয়ে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে স্লিপে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। পরপর দুই ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। 

পাওয়ার প্লে শেষে বরিশালের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৪৬ রান। এরপর বাকি ম্যাচে আর আনন্দের উপলক্ষ্য পায়নি রংপুর। দাপুটে ব্যাটিংয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিয়ে নেন সাকিব ও ইফতিখার। 

শুরুতে কিছুটা সময় নেন ইফতিখার। প্রথম ১৩ বলে করেন স্রেফ ৯ রান। সাকিব দ্বিতীয় বলে মারেন চার। পরে হারিসকে ডিপ পয়েন্টের ওপর দিয়ে মারেন ছক্কা। ইফতিখারের প্রথম বাউন্ডারি শেখ মেহেদি হাসানের বলে। লং অফের ওপর দিয়ে সীমানার ওপারে পাঠান তিনি। 

বরিশালের ঝড়ের শুরু মূলত ১৩তম ওভার থেকে। স্পিনের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাট করা ইফতিখারের সামনে শামীম হোসেনকে আক্রমণে আনেন রংপুর অধিনায়ক শোয়েব মালিক। অফ স্পিন পেয়ে পাঁচ বলে চারটি ছক্কা মারেন ইফতিখার। 

তবে ওই ওভারের শেষ বলে ফিরতে পারতেন পাকিস্তানি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু শর্ট থার্ড ম্যানে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন রনি তালুকদার।

৪৬ রানে জীবন পেয়ে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন ইফতিখার। রবিউল হকের করা পরের ওভারে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। ২৯ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর একশতে যেতে আর মাত্র ১৬ বল লাগে তার।

শেখ মেহেদির করা শেষ ওভারের তৃতীয় বল অন সাইডে ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়েই হেলমেট খুলে বাতাসে ব্যাট ঘুরিয়ে সেঞ্চুরির উদযাপন করেন ইফতিখার। অপরপ্রান্তে সাকিবকেও দেখা যায় উচ্ছ্বসিত।

বিপিএলের কোনো আসরেই চার নম্বরের নিচে ব্যাটিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি নেই আর কোনো ব্যাটসম্যানের।

অন্য প্রান্তে সাকিবের ফিফটি হয় ৩৩ বলে। এরপর ১০ বল খেলে আরও ৩৬ রান যোগ করেন বরিশাল অধিনায়ক। শেষ ওভারের শেষ দুই বলে দুই ছক্কা মেরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানে পৌঁছান তিনি।

সাকিব-ইফতিখারের ঝড়ে শেষ শেষ ১০ ওভারে ১৬৫ রান তোলে বরিশাল। শেষ ৩ ওভারে আসে ৭৩।

বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে কখনও মনে হয়নি ম্যাচটি জিততে পারে রংপুর। পঞ্চম ওভারে রান আউট হয়ে ফেরেন ওপেনার রনি (১২ বলে ১১)। পরের ওভারে পারভেজ হোসেন ইমন (২ বলে ১) ও সাইম আইয়ুবকে (১৮ বলে ১৮) ফেরান মিরাজ। 

মালিক, শেখ মেহেদিও ফিরে যান অল্পে। পাঁচ নম্বরে নেমে নাঈম শেখের শুরুটা মন্দ ছিল না। কিন্তু ৬ চারে ১৮ বলে ৩১ করার রানআউট হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। স্রেফ ৭৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বড় পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে যায় রংপুর।

সপ্তম উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়ে দলকে একশ পার করান মোহাম্মদ নাওয়াজ ও শামীম। ২টি করে চার-ছয়ে ২৪ বলে ৩৩ রান করে আউট হন নাওয়াজ।

এরপর গ্যালারির শপাঁচেক দর্শককে খানিক আনন্দের খোরাক এনে দেন শামিম। ইবাদত হোসেনের করা ১৯তম ওভারের প্রথম চার বলে দুইটি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি। পৌঁছে যান ১৬ বলে ৪৩ রানে। জাগিয়ে তোলেন বিপিএলে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্রুততম ফিফটি সম্ভাবনা।

তবে শেষ ওভারে কোনো রান করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ৩ চার ও ৪ ছয়ে ২৪ বলে ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ২৩৮/৪ (এনামুল ৪, মিরাজ ২৪, ইব্রাহিম ০, সাকিব ৮৯*, মাহমুদউল্লাহ ০, ইফতিখার ১০০*; নাওয়াজ ৪-০-৩৫-০, হাসান ৪-০-৩১-২, রবিউল ৪-০-৫৭-০, হারিস ৪-০-৪২-২, শেখ মেহেদি ৩-০-৪২-০, শামিম ১-০-২৫-০)

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৭১/৯ (সাইম ১৮, রনি ১১, পারভেজ ১, মালিক ১০, নাঈম ৩১, শেখ মেহেদি ২, নাওয়াজ ৩৩, শামিম ৪৪*, রবিউল ১৩, হারিস ০, হাসান ০*; সাকিব ৩-০-১৫-০, মিরাজ ৪-০-২৬-৩, ইবাদত ৪-০-৫৬-০, ওয়াসিম ৪-০-৩১-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১১-০, কামরুল ৩-০-২৫-২, ইফতিখার ১-০-৫-০)

ফল: ফরচুন বরিশাল ৬৭ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: ইফতিখার আহমেদ।