প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দুইবার ৫ উইকেট নেওয়ার পর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে প্রথমবার এই স্বাদ পেলেন তরুণ লেগ স্পিনার।
Published : 28 Mar 2024, 01:14 PM
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে টানা ম্যাচ খেলার সুযোগ আগে কখনোই পাননি রিশাদ হোসেন। এবার সুযোগটা পেয়ে পারফরম্যান্স দিয়েই রাঙিয়ে চলেছেন তিনি। আগের দুই ম্যাচে ভালো বোলিংয়ের ধারাবাহিকতায় নিজেকে ছাড়িয়ে এবার ক্যারিয়ারের প্রথম এক অর্জন ধরা দিল তরুণ এই লেগ স্পিনারের।
প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে বৃহস্পতিবার শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে ৪৯ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন রিশাদ। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তো বটেই, সাদা বলের স্বীকৃতি ক্রিকেটেই প্রথমবার এই স্বাদ পেলেন তিনি।
লাল বলের ক্রিকেটে ১৯ ম্যাচ খেলে দুই দফায় ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে তার সেরা বোলিং ২২ রানে ৪ উইকেট। ওই একবারই পেয়েছেন ৪ উইকেট। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার আগের সেরা বোলিং ছিল ২৯ রানে ৪ উইকেট।
সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের হয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজেকে উপযোগীতা দারুণভাবে তুলে ধরেছেন রিশাদ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন। নিজের মূল কাজ বোলিংয়েও রেখেছেন উন্নতির ছাপ। ২১ বছর বয়সী ক্রিকেটার সেই ধারাবাহিকতা এবার ধরে রাখলেন ঘরোয়া ক্রিকেটেও।
তার জন্য ব্যাপারটি এরকম উল্টোই। জাতীয় দলের সঙ্গে বা আশেপাশে তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই আছেন। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটেই নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এবারের বিপিএলেই যেমন, সীমিত সুযোগে বেশ ভালো বোলিং করলেও তারকা সমৃদ্ধ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে কেবল চারটি ম্যাচের একাদশে ঠাঁই মেলে তার।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট তার সুযোগ ছিল আরও অপ্রতুল। ২০২২ সালে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলার পর আরেকটি ম্যাচ খেলতে অপেক্ষা করতে হয় এক বছরের বেশি। দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলেন ২০২৩ সালের এপ্রিলে। আবাহনী লিমিটেডের হয়ে সেই ম্যাচে ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি সিটি ক্লাবের বিপক্ষে। পরের ম্যাচেই আবার একাদশের বাইরে রাখা হয় তাকে। সেবারের লিগে স্রেফ আর একটি ম্যাচে খেলানো হয় তাকে।
দুই মৌসুমের লিগে স্রেফ সেই তিন ম্যাচের অভিজ্ঞতায় গত ডিসেম্বরে নিউ জিল্যান্ড সফরের বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে রাখা হয় তাকে। দুটি ম্যাচও খেলেন সেখানে। উইকেট না পেলেও বিরুদ্ধ কন্ডিশনে বোলিং খারাপ করেননি। এরপর এবার শ্রীলঙ্কা সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচটিতে খেলানো হয় তাকে। বল হাতে সেদিন একটি উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ১৮ বলে ৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস তিনি উপহার দেন।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবারও তার যথেষ্ট ম্যাচ খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল। তারকা সমৃদ্ধ আবাহনী লিমিটেডে ছিলেন তিনি। এই দলে থাকলে তার নিয়মিত ম্যাচ পাওয়া কঠিন হবে বুঝেই কোচ খালেদ মাহমুদ তাকে দিয়ে দেন শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবে।
রিশাদের জন্য তা দারুণ ব্যাপার হয়েই আসে। লিগের প্রথম ম্যাচেই তিন উইকেট নেন তিনি, পরের ম্যাচে উইকেট একটি। এরপর এই ৫ উইকেট।
বিকেএসপিতে এ দিন যখন আক্রমণে আসেন রিশাদ, ব্রাদার্সের উদ্বোধনী জুটি ততক্ষণে ১৩ ওভার কাটিয়ে গিয়েছে ক্রিজে। তিনি বল হাতে নিয়ে প্রথম ওভারেই শাইনপুকুরকে এনে দেন ব্রেক থ্রু। টার্ন না করে সোজা যাওয়া বলে এলবিডব্লিউ জন রহমতউল্লাহ আলি।
তার তিন ওভারের প্রথম স্পেলে আর আসে ১৪, তিন ওভারের পরের স্পেলে রান ১৬। উইকেট তখনও একটিই। তৃতীয় স্পেলে এক ওভারে ৭ রান দেওয়ার পর আবার সরিয়ে নেওয়া হয় তাকে। চতুর্থ স্পেলে তাকে আনা হয় ৪২তম ওভারে। এবার তাকে রিভার্স সুইপ খেলে ৩৬ রানে আউট হন অভিজ্ঞ মাহমুদুল হাসান। পয়েন্টে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন খালিদ হাসান।
ওই ওভার দিয়ে সমাপ্তি এক ওভারের আরেকটি স্পেলের। একটু পর আবার তার হাতে ওঠে বল। এবার তাকে তুলে মারেন মারাজ মাহবুব নিলয়। কিন্তু এক্সট্রা কাভারে সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি তানজিদ হাসান। ওই ওভারেই অবশ্য টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বাড়তি লাফানো ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মারাজ।
নিজের শেষ ওভারে কোনো রান না দিয়ে আরও দুটি শিকার ধরে তিনি পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। জায়গা বানিয়ে তুলে মারার চেষ্টায় পয়েন্টে ধরা পড়েন আসিফ আহমেদ রাতুল। এক বল পর সুইচ হিট খেলে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন মনির হোসেন।
ওই ওভারে স্টাম্পিংয়ের আরেকটি জোরাল আবেদন করেন শাইনপুকুর অধিনায়ক ও কিপার আকবর আলি। আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় বেশ হতাশও দেখা যায় তাকে। রিশাদ বোলিং শেষ করেন ৫ উইকেট নিয়েই।
রিশাদের এমন পারফরম্যান্সের দিনে অভিজ্ঞ ওপেনার আব্দুল মজিদের ৯৫ রানের ইনিংসে ব্রাদার্স ৫০ ওভারে তোলে ৯ উইকেটে ২২২ রান।