যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাস জীবন থেকে ফিরে আসা অফ স্পিনার ডেইন পিট ৫ উইকেট নিয়েছেন প্রায় ৫ বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে, খর্বশক্তির দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়েছে লিড।
Published : 14 Feb 2024, 12:22 PM
নিউ জিল্যান্ড তখন এগিয়ে চলছিল নির্বিঘ্নে। জমাট জুটিতে বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন রাচিন রাভিন্দ্রা ও উইল ইয়াং। হঠাৎ শেপো মোরেকির বল কাট করত গিয়ে স্টাম্পে টেনে আনলেন রাভিন্দ্রা। পরের সময়টায় যা হলো, সেটিকে বলা যায় নিউ জিল্যান্ডের জন্য দুঃস্বপ্ন আর দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য অভাবনীয় আনন্দ। নাটকীয় ধসে ভেঙে পড়ল কিউই ব্যাটিং। খর্বশক্তির দক্ষিণ আফ্রিকা পেল ৩১ রানের লিড।
হ্যামিল্টন টেস্টের দ্বিতীয় দিনে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ২৪২ রানের জবাবে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ ২১১ রানেই।
নিউ জিল্যান্ডের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই থিতু হওয়ার পর আউট হয়ে যান ফিফটি করার আগে। রাভিন্দ্রার বিদায় থেকে এক পর্যায়ে ৩৮ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারায় তারা।
দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে সফরে গিয়ে প্রথম টেস্টে রেকর্ড ব্যবধানে হেরে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকাই এবার প্রথম ইনিংস শেষে এগিয়ে।
প্রোটিয়াদের লিড পাওয়ার নায়ক ডেইন পিট। ২০১৯ সালের পর প্রথম টেস্ট খেলতে নামা অফ স্পিনার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৮৯ রানে নেন ৫ উইকেট।
আগের দিন রাভিন্দ্রার বাঁহাতি স্পিন আর এ দিন পিটের অফ স্পিনের সাফল্য থেকেই উইকেটের চিত্র কিছুটা পরিষ্কার। সবুঝাব চেহারা হলেও সেডন পার্কের ২২ গজ একটু মন্থর। পেসারদের বলও থমকে এসেছে মাঝেমধ্যে। পাশাপাশি আবার ছিল বাড়তি বাউন্সও।
পিটের অভিষেক সেই ২০১৪ সালে। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ইনিংসেই ৪টি করে উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। প্রথম ৫ উইকেটের স্বাদ পেয়ে যান তৃতীয় টেস্টেই। তবে এরপর প্রত্যাশিত গতিতে এগোয়নি তার ক্যারিয়ার। দল থেকে ছিটকে পড়েন। আরেক স্পিনার কেশাভ মহারাজের উত্থানও হয়। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি ওই দেশের হয়ে খেলার আশায়। সেখানেও আশা পূরণ হয়নি তার। গত বছর তাই ফিরে আসেন জন্মভূমির ঘরোয়া ক্রিকেটে। এরপর এই সফরে মূল ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে সুযোগটা এলো এবং তিনি কাজে লাগালেন দারুণভাবে।
পিটের আগে দিনের নায়ক ছিলেন উইল ও’রোক। নিউ জিল্যান্ডের অভিষিক্ত পেসার শিকার করেন ৪ উইকেট। তার ছোবলেই দ্বিতীয় দিনে খুব বেশি এগোতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
৬ উইকেটে ২২০ রান দিয়ে বুধবার দিন শুরু করা প্রোটিয়ারা গুটিয়ে যায় আর ২২ রান যোগ করেই। ৩৪ রানে অপরাজিত থাকা শন ফন বার্গ বিদায় নেন ৩৮ রানে। ৫৫ রানে দিন শুরু করা রুয়ান দু সুয়াত আউট হয়ে যান ৬৪ রানে। দুজনকেই ফেরান ও’রোক। শেষ উইকেটও নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আড়াইশর নিচে থামান তিনি।
ব্যাটিংয়ে নেমে নিউ জিল্যান্ড ধাক্কা খায় প্রথম ওভারেই। ডেইন প্যাটারসনের দারুণ ডেলিভারিতে শূন্যতে বিদায় নেন ডেভন কনওয়ে।
টেস্ট ক্যারিয়ারের দারুণ শুরু করা ব্যাটসম্যান সবশেষ ১৫ ইনিংসে শূন্যতে ফিরলেন ৩ বার। সবশেষ ৭ ইনিংসে ৩০ ছুঁতে পারেননি তিনি।
সেই ধাক্কা অনেকটাই সামাল দেন টম ল্যাথাম ও কেন উইলিয়ামসন। ৭৯ রানের এই জুটি থামিয়েই দৃশ্যপটে আসেন পিট। তার সামনে খেলার বল পেছনের পায়ে খেলে ৪০ রানে বোল্ড হন ল্যাথাম। বাড়তি বাউন্স সামলাতে না পেরে ৪৩ রানে বিদায় নেন উইলিয়ামসন।
অল্প সময়ের মধ্যে এই দুজনের বিদায়ের পরও নিউ জিল্যান্ড এগিয়ে যাচ্ছিল দৃঢ়তায়। রাভিন্দ্রা ও ইয়াং গড়ে তোলেন অর্ধশত রানের জুটি।
কিন্তু ৫৯ রানে এই জুটি থামার পরই ওই ধস। আগের টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান রাভিন্দ্রা এবার ফেরেন ২৯ রানে। টম ব্লান্ডেল ও গ্লেন ফিলিপস টিকতেই পারেননি। ইয়াংও একটা সময় ধৈর্য হারিয়ে ছক্কার চেষ্টায় ৩৬ রানে উইকেট উপহার দেন পিটকে।
দশে নেমে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৭ বলে ৩৩ রান করে নিউ জিল্যান্ডকে দুইশ পার করান ওয়্যাগনার। তাকে ফিরিয়েই পিট পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। লিডের উচ্ছ্বাস নিয়ে দিন শেষ করে নিউ জিল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৯৭.২ ওভারে ২৪২ (আগের দিন ২২০/৬) (দু সুয়াত ৬৪, ফন বার্গ ৩৮, পিট ৪, মোরেকি ৪*, প্যাটারসন ০; সাউদি ২৫-৮-৬৩-১, হেনরি ১৭-৫-৪৪-১, ও’রোক ১৮.২-৪-৫৯-৪, ওয়্যাগনার ১৬-৬-৩২-১, রাভিন্দ্রা ২১-৮-৩৩-৩)।
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৭৭.৩ ওভারে ২১১ (ল্যাথাম ৪০, কনওয়ে ০, উইলিয়ামসন ৪৩, রাভিন্দ্রা ২৯, ইয়াং ৩৬, ব্লান্ডেল ৪, ফিলিপস ৪, হেনরি ১০, সাউদি ৫, ওয়্যাগনার ৩৩, ও’রোক ০*; প্যাটারসন ১৭-৬-৩৯-৩, মোরেকি ১৩-৪-৩২-১, পিট ৩২.৩-৫-৮৯-৫, ফন বার্গ ১৩-৩-৪০-০, দু সুয়াত ২-০-৫-০)।