বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যামিও ইনিংস খেলার পথে বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার অ্যালানা কিং।
Published : 21 Mar 2024, 05:45 PM
অ্যালানা কিংয়ের লেগ স্পিন সামলানো নিয়ে তো দুর্ভাবনা ছিলই। তবে বল হাতে নেওয়ার আগেই তিনি বাংলাদেশকে যথেষ্ট যন্ত্রণা দিলেন ব্যাট হাতে। দুর্দান্ত ক্যামিও ইনিংসটি ম্যাচে বড় পার্থক্য গড়ে দিল তো বটেই, রেকর্ড বইয়ের বেশ কয়েকটি পাতায় উঠে গেল তার নাম। ম্যাচ সেরা হয়ে অস্ট্রেলিয়ান এই ক্রিকেটার বললেন, উপভোগের আনন্দেই ব্যাট চালিয়েছেন তিনি।
তার ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ এতদিন খুব একটা মেলেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আগের ২৬ ওয়ানডের ১৮টিতেই তাকে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি বা নামানো হয়নি। বাকি ৮ ইনিংসে মোট রান ছিল তার ৯১। সবশেষ দুই সিরিজে অবশ্য বড় শটে উন্নতির ছাপ রাখছিলেন। গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টানা দুটি ওয়ানডেতে তিনটি করে ছক্কা মেরেছেন। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে একটি ম্যাচে মেরেছেন দুটি ছক্কা। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেকে তো বটেই, ছক্কার একটি জায়গায় ছাড়িয়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সবাইকে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মিরপুরে বৃহস্পতিবার পাঁচটি ছক্কা মারেন কিং। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নারী ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এটিই।
এই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের আরও একটি রেকর্ডে উঠে যায় তার নাম। তার তাণ্ডবেই ইনিংসের শেষ ওভার থেকে রান আসে ২৯। নারী ওয়ানডের ইতিহাসে এক ওভার থেকে সবচেয়ে বেশি রান নেওয়ার রেকর্ড যা। লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুনের ওই ওভারে চারটি ছক্কা ও একটি চার মারেন কিং।
তিনি নামার আগে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল না অস্ট্রেলিয়া। স্পিন সহায়ক উইকেটে ৪০.৪ ওভারে তাদের সংগ্রহ তখন ৭ উইকেটে ১৪৬ রান। ২০০ রান তখন অনেক দূরের পথ।
কিন্তু পুরো দৃশ্যপট বদলে দেন কিং। ২ চারের সঙ্গে ৫ ছক্কায় তিনি খেলেন ৩১ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। ৯ নম্বরে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যা সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড।
রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলার পথে ফাহিমার ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন ২৮ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। শেষ ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে তাকে স্ট্রাইক দেন অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড। পরপর দুই বলে পুল করে ছক্কা মারেন কিং।
এরপর নাহিদা আক্তার ও সোবহানা মোস্তারির ভুল বোঝাবুঝিতে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারি পান তিনি। শেষ দুই বল আবার ওড়ান ছক্কায়।
২০১৮ সালে ভারতের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার আয়াবঙ্গা খাকার খরচ করা ২৮ রান ছাড়িয়ে হয় নতুন রেকর্ড।
সাদারল্যান্ডের সঙ্গে কিংয়ের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ৫৬ বলে ৬৭ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ জুটি।
ব্যাট হাতে ঝড় তোলার পর নিজের মূল কাজেও যথারীতি সফল কিং। উইকেট নিয়েছেন যদিও কেবল একটি। তবে ১০ ওভারে ৩ মেইডেনসহ রান দেন স্রেফ ১২। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে শেষ ওভারের ব্যাটিং তাণ্ডবের ব্যাপারে কিং বললেন, পুরোটাই সহজাতভাবে হয়ে গেছে।
"শেষ ওভারে কিছুটা মজাই হলো। অবশ্যই মজা করার কোনো আমন্ত্রণ ছিল না। শেষ ওভার ছিল। আমরা দুইশ ছাড়ানোর আশা করছিলাম। অ্যানাবেল (সাদারল্যান্ড) আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে হাত খুলে খেলার। এই তো, শেষদিকে দারুণ কিছু হলো।"
"তেমন পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না। এটা অনেকটা হয়ে গেছে। শেষ ওভার ছিল। যত বেশি সম্ভব রানের চেষ্টা ছিল আমাদের। আমি খুশি যে, কয়েকটি শট ব্যাটে লেগেছে।"
বাংলাদেশের ১১৮ রানের ব্যবধানে পরাজয়ের দিন নাহিদা আক্তার গড়েছেন একটি রেকর্ড। দারুণ বোলিংয়ে ২৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে সালমা খাতুনকে টপকে বর্তমান সহ-অধিনায়কই এখন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ছিলেন দলের প্রতিনিধি। পরাজয়ের পেছনে ফাহিমার বোলিংয়ে কিংয়ের শেষ ওভারের ওই তাণ্ডবকে বড় করতে দেখতে রাজি নন নাহিদা।
"না… এটা হতেই পারে। এটা ক্রিকেটের অংশ। কখনও কোনো ওভার ভালো হবে। কখনও খারাপ হবে। আমি মনে করি, সব মিলিয়ে আমাদের বোলিংয়ে ওরা মাঝখানে সেট হয়ে গিয়েছিল। তখন একটা ভালো জুটি হয়েছে। আমরা সেটা দ্রুত ভাঙতে পারলে হয়তো বা দৃশ্যপট বদলে যেত।”
সিরিজের পরের ম্যাচ রোববার। প্রথম ম্যাচের ভুলগুলো শুধরে ঘুরে দাঁড়াতে প্রত্যয়ী নাহিদা।
“আমাদের ঘাটতি যেগুলো রয়েছে, অবশ্যই এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করব। আমরা বসব, মিটিং করব। যার যে জায়গায় ঘাটতিগুলো ছিল, আমরা চেষ্টা করব শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে।”