আগের ম্যাচের খলনায়ক কারান এবার ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক, বিশ্বকাপে ব্যর্থ জস বাটলার ওয়ানডে ফিফটি পেলেন ১৩ ইনিংস পর।
Published : 07 Dec 2023, 09:26 AM
৯.৫ ওভারে ৯৮ রান, পুরো ১০ ওভার করলে হয়তো রান দেওয়ার সেঞ্চুরিই হয়ে যেত। ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের বিব্রতকর রেকর্ড গড়ার ধাক্কা সামলে পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ালেন স্যাম কারান। নতুন বলে দারুণ এক স্পেলে তিনি ভেঙে দিলেন ক্যারিবিয়ান টপ অর্ডার। মাঝারি রান তাড়ায় ওপেনিংয়ে উইল জ্যাকসের দারুণ ইনিংসের পর ইংল্যান্ডের বড় স্বস্তি হয়ে এলো জস বাটলারের রানে ফেরা। সবকিছু মিলিয়ে তাদের প্রাপ্তি দলের জয়।
তিন ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বুধবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ইংল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে ক্যারিবিয়ানরা জিতেছিল ৪ উইকেটে।
প্রথম ম্যাচ যে মাঠে হয়েছে, অ্যান্টিগার সেই ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামেই এই ম্যাচ। টস জিতে বোলিং নেওয়ার সময় ইংলিশ অধিনায়ক বাটলার বলেন, উইকেটও হবে একইরকম। তবে সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের ৩২৫ রান টপকে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার আগে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস শেষ ২০২ রানেই। ইংল্যান্ড জিতে যায় ৩২.২ ওভারেই।
৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা স্যাম কারান। ওপেনিংয়ে ৭২ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে রান তাড়ায় দলকে এগিয়ে নেন উইল জ্যাকস। ৪৫ বলে ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচ শেষ করেন বাটলার।
গোটা বিশ্বকাপে বাটলারের ব্যাট ছিল নিশ্চুপ। নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন যেন তিনি। অবশেষে ফিফটির দেখা পেলেন ১৩ ইনিংস পর।
আগের ম্যাচে শতরানের উদ্বোধনী জুটি পাওয়া ক্যারিবিয়ানরা এবার বেকায়দায় পড়ে যায় শুরু থেকেই। আগের ম্যাচে দারুণ খেলা আলিক আথানেজকে এবার ৪ রানেই ফেরান গাস অ্যাটকিনসন। এরপর দৃশ্যপটে আবির্ভাব কারানের। কিসি কার্টি ও শিমরন হেটমায়ারকে রানের দেখাই পেতে দেননি তিনি। এই দুই উইকেটের মাঝে কারানের শিকার হয়ে ফেরেন ব্র্যান্ডন কিংও।
২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন শেই হোপ ও শেরফেন রাদারফোর্ড। আগের ম্যাচে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত সেঞ্চুরি করা হোপ শুরু করেন যেন সেখান থেকেই। চাপের মধ্যেও ফিফটি করে ফেলেন তিনি ৪৪ বলে। দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা রাদারফোর্ডের ফিফটি আসে ৭১ বলে।
তবে দুজনের কেউ ইনিংস নিতে পারেননি তিন অঙ্কে। ৬৮ বলে ৬৮ করেন হোপ, ৮০ বলে ৬৩ রাদারফোর্ড। দুজনকেই ফেরান লিয়াম লিভিংস্টোন।
১২৯ রানের জুটি ভাঙার পর ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংও ভেঙে পড়ে আবার। রেহান আহমেদ ও লিভিংস্টোনের লেগ স্পিনে ৫০ রানের মধ্যে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ক্যারিবিয়ান ইনিংস শেষ হয়ে যায় ৪০ ওভারের আগেই।
৬ ওভার বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন লিভিংস্টোন। রেহানের বোলিং ফিগার হুবুহু আগের ম্যাচের মতো, ১০-১-৪০-২।
রান তাড়ায় ৬ ওভারের আগেই ৫০ রান তুলে ফেলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিল সল্ট ও উইল জ্যাকস। ১৫ বলে ২১ রান করে রোমারিও শেফার্ডের দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হন সল্ট। এরপর জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট ফিরে যান দ্রুতই।
তবে ইংল্যান্ডের রানের গতি কমেনি। জ্যাকস ফিফটি করেন ৪৩ বলে। ষষ্ঠ ওয়ানডেতে তার দ্বিতীয় ফিফটি এটি।
৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৩ রান করে জ্যাকস আউট হন রাদারফোর্ডের নিচু হওয়া বলে। তখন একটু নড়বড়ে মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ডকে।
তবে হ্যারি ব্রুক ও জস বাটলার পথ হারাতে দেননি দলকে। বাটলার শুরুটা করেন সাবধানী ব্যাটিংয়ে। পরে ইয়ানিক ক্যারাইয়াহকে টানা দুই বলে ছক্কা মেরে তিনি ছন্দ পেয়ে যান। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ৭৮ বলে ৯০ রানের এই জুটিতেই ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। বল বাকি তখনও ১০৩টি।
৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন বাটলার। এই ইনিংসের পথে পঞ্চম ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পর্শ করেন ৫ হাজার ওয়ানডে রান। ব্রুক অপরাজিত থাকেন ৪৩ রানে।
সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচ শনিবার বারবাডোজে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৯.২ ওভারে ২০২ (আথানেজ ৪, কিং ১৭, কার্টি ০, হোপ ৬৮, হেটমায়ার ০, রাদারফোর্ড ৬৩, ক্যারাইয়াহ ৫, শেফার্ড ১৯, জোসেফ ১৪, মোটি ৬, টমাস ০*, কারান ৭-০-৩৩-৩, অ্যাটকিনসন ৬.৪-০-২৮-২, কার্স ৬-০-৩৪-০, জ্যাকস ৪-০-২৭-০, রেহান ১০-১-৪০-২, লিভিংস্টোন ৬-০-৩৯-৩)।
ইংল্যান্ড: ৩২.৫ ওভারে ২০৬/৪ (সল্ট ২১, জ্যাকস ৭৩, ক্রলি ৩, ডাকেট ৩, ব্রুক ৪৩*, বাটলার ৫৮* জোসেফ ৫-০-৪৮-০, শেফার্ড ৬-০-২৭-১, মোটি ৭.৪-০-৩৪-২, টমাস ৫-০-৩১-০, রাদারফোর্ড ৪-০-২৭-১, ক্যারাইয়াহ ৫-০-৩৯-০)।
ফল: ইংল্যান্ড ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজের দুটি শেষে ১-১ সমতা।
ম্যান অব দা ম্যাচ: স্যাম কারান।