‘এডিআরএস থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো’

বিপিএলে স্বচ্ছতার চেয়ে বেশি অস্বচ্ছতাই তৈরি করছে এডিআরএস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2023, 01:47 PM
Updated : 10 Jan 2023, 01:47 PM

‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’ নাকি ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো?’ প্রসঙ্গ যখন বিপিএলের অল্টারনেটিভ ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম বা এডিআরএস তখন নুরুল হাসান সোহানের মনে কোনো সংশয় নেই। রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক মনে করেন, এটি থাকার চেয়ে না থাকাই শ্রেয়।  

ডিআরএস পুরোপুরি না থাকায় বিপিএল আয়োজকরা ব্যবহার করছেন এডিআরএস। এর সীমাবদ্ধতা সবারই জানা। তাই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই এডিআরের কার্যকারিতা নিয়ে ছিল শঙ্কা। খেলা মাঠে গড়ানোর সঙ্গে বাড়ছে সমালোচনা।  

মিরপুরে সোমবার ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৬ উইকেটে হেরেছে সোহানের রংপুর। এডিআরএসে একটি সিদ্ধান্ত পক্ষে আসার পরও এর বিপক্ষেই কথা বলেছেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।   

সাকিব আল হাসানের মাঠে ঢুকে পড়া নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়া ম্যাচে বরিশালের ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বিতর্কের দেখা মেলে আবার। সিকান্দার রাজার বলে এনামুল হককে এলবিডব্লিউ দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয় রংপুর। থাকলেও কয়েক দফা রিপ্লে দেখে তৃতীয় আম্পায়ার দেন আউট।

এডিআরএস-এ যদিও বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তি নেই। মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে দিতে হলে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে টিভি আম্পায়ারকে। কিন্তু এখানে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার উপায় ছিল না কোনোভাবেই। সিদ্ধান্ত বদলে যেতে দেখে ব্যাটসম্যান এনামুলকে দেখা যায় ক্ষিপ্ত হয়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে। মাঠ ছাড়ার সময় সীমানা দড়ির বিজ্ঞাপনী টবলারে ব্যাট দিয়ে মেরে বসেন তিনি। 

ম্যাচ শেষে এই ঘটনার ব্যাপারে কথা বলেন রংপুর অধিনায়ক সোহান।  

“আমার মনে হয় আম্পায়াররাও (এডিআরএসের কারণে) অনেক বেশি চাপে পড়ে যাচ্ছে। পূর্ণাঙ্গভাবে (ডিআরএস) থাকলে হয়তো তাদের জন্যও সুবিধা হয়। এই চাপের ক্ষেত্রে আসলে... সবাই তো মানুষ। মাঠের ভেতরে এক-দুইটা ভুল হতেই পারে। এইটা আসলে আরেকটু ভালো হলে সবার জন্য ভালো হতো। আমার কাছে মনে হয়, (এডিআরএস) না থাকলেই ভালো।” 

অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বল হাতে ২ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে ৪৩ রান করে বরিশালকে প্রথম জয় এনে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনিও এডিআরএসের অস্বচ্ছতা নিয়ে দুর্ভাবনার কথা বলেছেন। 

“ডিআরএস থাকলে সবাই আরও স্বচ্ছ ধারণাটা পেত। যেহেতু ডিআরএস নেই, সেহেতু অবশ্যই এখানে অনেকে সুবিধা পেতে পারে। ব্যাটিং দলও পেতে পারে, বোলিং দলও পেতে পারে। দিন শেষে মানুষ বলতেই ভুল! ভুল হতেই পারে। একটা জিনিস হলো ভুলের পরিমাণ যদি বেশি হয়ে যায় তাহলে খারাপ দেখায়।”  

“যদি আমরা দেখি, (এনামুল হক) বিজয় ভাইয়ের আউট যেটা হয়েছে, এক্ষেত্রে যদি ডিআরএস থাকত তাহলে খুবই স্বচ্ছ হতো। এরকম দুই-একটা ঘটনা হতে পারে। তবে দিন শেষে আমি মনে করি, পেশাদারত্ব দেখিয়ে অনেক কিছু অনেক সময় মেনে নিতে হয়।” 

এনামুলের এই ঘটনার আগে খুলনা টাইগার্স ও ঢাকা ডমিনেটর্সের ম্যাচেও এডিআরএস নিয়ে বিতর্ক হয়। খুলনার ১১৩ রানের জবাবে ঢাকার ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে সৌম্য সরকারের এলবিডব্লিউ আউট নিয়ে জল ঘোলা হয় অনেক। 

প্রথমে আউট দেন আম্পায়ার। সৌম্য এডিআরএস নিয়ে কয়েক দফা রিপ্লে দেখে আউটের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন তৃতীয় আম্পায়ার। কিন্তু মাঠ ছেড়ে যাননি সৌম্য। বেশ উত্তেজিত দেখা যায় তাকে। খুলনার তামিম ইকবাল গিয়ে চেষ্টা করেন তাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যেতে। তখনই ঘটনায় নতুন মোড়। কিছুক্ষণ পর সিদ্ধান্ত বদলে ‘নট আউট’ দেওয়া হয় সৌম্যকে! 

ওই ম্যাচের পর খুলনার ডাচ পেসার পল ফন মেকেরিন বলেছিলেন, এই এডিআরএস স্বচ্ছতার চেয়ে সংশয় তৈরি করবে বেশি। যা এরই মধ্যে সত্যি হতে শুরু করেছে। টুর্নামেন্টের প্রথম ধাপেই এডিআরএস নিয়ে হচ্ছে নানান বিতর্ক। সামনের ম্যাচগুলিতে যে এমন আর হবে না, তা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই।