স্বপ্নের মাস কাটিয়ে সেরার লড়াইয়ে জয়সওয়াল

ফেব্রুয়ারি মাসের সেরা পুরুষ ক্রিকেটারদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ভারতীয় ব্যাটিং সেনসেশনের প্রতিদ্বন্দ্বী নিউ জিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন ও শ্রীলঙ্কার পাথুম নিসাঙ্কা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2024, 09:36 AM
Updated : 4 March 2024, 09:36 AM

টেস্ট ক্রিকেটে গত মাসটা অবিশ্বাস্য কেটেছে ইয়াশাসবি জয়সওয়ালের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করা ভারতীয় ব্যাটিং সেনসেশনকে এবার হাতছানি দিচ্ছে দারুণ এক স্বীকৃতি। ‘আইসিসি প্লেয়ার অব দা মান্থ’ এর সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

ফেব্রুয়ারি মাসের সেরা পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারের লড়াইয়ে থাকাদের নাম সোমবার প্রকাশ করে আইসিসি। পুরুষদের মধ্যে সেরার লড়াইয়ে জয়সওয়ালের সঙ্গে আছেন নিউ জিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন ও শ্রীলঙ্কার পাথুম নিসাঙ্কা।

মেয়েদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এশা ওঝা ও কাভিশা এগোদাগে।

ইয়াশাসবি জয়সওয়াল

গত মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি টেস্ট খেলেন জয়সওয়াল। সবগুলো ম্যাচেই হাসে তার ব্যাট, দলও পায় জয়। মাস জুড়ে ১১২ গড়ে ৫৬০ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পসরা মেলে ধরে মারেন ২০টি ছক্কা।

বিশাখাপাত্নামে দ্বিতীয় টেস্টে জয়সওয়ালের ব্যাট থেকে আসে ২০৯ রানের চমৎকার এক ইনিংস। পরের ম্যাচে তিনি নিজেকে মেলে ধরেন আরেকবার। রাজকোট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে উপহার দেন আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরি, খেলেন অপরাজিত ২১৪ রানের ইনিংস।

রাজকোটে ২১৪ রানের ইনিংসটি খেলার পথে কিছু কীর্তিও গড়েন জয়সওয়াল। ১২টি ছক্কা মেরে টেস্টের এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডে বসেন ওয়াসিম আকরামের পাশে।

ভিনোদ কাম্বলি ও ভিরাট কোহলির পর ভারতের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টানা দুই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেন জয়সওয়াল। আর কাম্বলি ও স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পর কম বয়সে টেস্টে একাধিকবার দুইশ ছোঁয়ার কীর্তিও গড়েন তিনি।

কেন উইলিয়ামসন

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবার নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন উইলিয়ামসন। ফেব্রুয়ারিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে খেলা দুই টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি করেন তিনি। ১৩৪.৩৩ গড়ে সর্বোচ্চ ৪০৩ রান করে সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতে নেন তারকা ব্যাটসম্যান।

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৮১ রানে হারানোর পথে প্রথম ইনিংসে ১১৮ রান করেন উইলিয়ামসন। আর দ্বিতীয়ভাগে খেলেন ১০৯ রানের দারুণ এক ইনিংস। প্রথমবারের মতো এক টেস্টে পান দুই সেঞ্চুরির স্বাদ।

হ্যামিল্টনে ২৬৭ রান তাড়ায় কিউইদের ৭ উইকেটের জয়েও বড় ভূমিকা রাখেন উইলিয়ামসন। ১৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ে নিউ জিল্যান্ড।

সবশেষ সেঞ্চুরিটি ছিল উইলিয়ামসনের ৩২তম শতক। সক্রিয় ক্রিকেটারদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ। তবে একটি জায়গায় সবার চেয়ে এগিয়ে উইলিয়ামসন। সবচেয়ে কম ১৭২ ইনিংসে ৩২ সেঞ্চুরি করেন তিনি।

পাথুম নিসাঙ্কা

আফগানিস্তানের বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়ে সেরার লড়াইয়ে জায়গা পেয়েছেন নিসাঙ্কা; ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন চমৎকার কিছু ইনিংস।

বিশেষ করে ওয়ানডে সিরিজে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন নিসাঙ্কা। পাল্লেকেলেতে প্রথম ম্যাচে ১৩৯ বলে ২১০ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন এই ওপেনার। ২৪ বছর আগে গড়া সানাৎ জায়াসুরিয়ার ১৮৯ রানের রেকর্ড ভেঙে শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি।

পরে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেও সেঞ্চুরি হাঁকান নিসাঙ্কা। এবার ১০১ বলে ১১৮ রানের ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ওপেনার। জিতে নেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।

ওয়ানডের ছন্দ তিনি ধরে রাখেন টি-টোয়েন্টিতেও। দ্বিতীয় ম্যাচে ১১ বলে ২৫ রান করা নিসাঙ্কা তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে খেলেন ৩০ বলে ৬০ রানের ইনিংস।

অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের পারফরম্যান্স দিয়েই মাস সেরার লড়াইয়ে জায়গা করে নিলেন সাদারল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ান এই অলরাউন্ডার পার্থে ২১০ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি পেস বোলিংয়ে নেন পাঁচ উইকেট। ইনিংস ও ২৮৪ রানে জয়ের ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জেতেন তিনি।

অবশ্য ফেব্রুয়ারিতে শুধু ওই একটি টেস্টই খেলেননি সাদারল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডেও খেলেন তিনি। যদিও সাদা বলের লড়াইয়ের নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে করেন স্রেফ ১৯ রান, উইকেট নেন দুটি। গত মাসে ৪ ম্যাচ খেলে তার শিকার মোট ৭টি, রান করেন ২২৯।

এশা ওঝা

এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল উইমেন’স প্রিমিয়ার কাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিরোপা জয়ে বড় অবদান রাখেন এশা। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন দলটির অধিনায়ক।

৬ ম্যাচে একটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে করেন ২৪৯ রান, গড় ৬২.২৫ ও স্ট্রাইক রেট ১০৯.২১। অফ স্পিনে দুটি উইকেটও শিকার করেন তিনি। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার ওঠে ২০২২ সালে মেয়েদের সহযোগী দেশগুলোর সেরা ক্রিকেটার হওয়া এশার হাতে।

কাভিশা এগোদাগে

আমিরাতের ওই শিরোপা জয়ে দারুণ ভূমিকা ছিল এশার সতীর্থ এগোদাগেরও। এই দুইজন ছাড়া ওই টুর্নামেন্টে দুইশ রান করতে পারেননি আর কেউ।

এক ফিফটিতে ২১৮ রান করেন এগোদাগে, ৫৪.৫০ গড় ও ৮৩.৮৪ স্ট্রাইক রেটে। বল হাতেও ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। অফ স্পিনে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট, আসরে যা যৌথভাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ।