শান্তর বিভীষিকার বিপিএল

এখনও পর্যন্ত দশ ম্যাচের একটিতেও ৪০ রান করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত, একটি ছক্কাও মারতে পারেননি এখনও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2024, 12:45 PM
Updated : 17 Feb 2024, 12:45 PM

ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে যাওয়া বল দারুণ ক্ষিপ্রতায় বাম হাতে ক্যাচ নিলেন সৌম্য সরকার। বলা হয়, সময় যখন খারাপ থাকে, সব কিছুই খারাপ যায়। সৌম্যর অসাধারণ ক্যাচ যেন নাজমুল হোসেন শান্তকে সেই কথাই মনে করিয়ে দিল। আরও একবার মাথা নিচু করে ড্রেসিং রুমে ফিরলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটসম্যান।

চলতি বিপিএলের নিয়মিত চিত্র শান্তর এভাবে হতাশ হয়ে ফেরা। অথচ তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের দারুণ আনন্দময় এক উপহার পেয়েছেন তিনি সম্প্রতি। তিন সংস্করণেই জাতীয় দলের অধিনায়ক করা হয়েছে তাকে। কিন্তু বিপিএলে তার ব্যাটে হাসি নেই। মাশুল গুনতে হচ্ছে সিলেটকেও। গত আসরের রানার্স-আপ দলটির এবারের ব্যর্থতার পেছনে বড় একটি কারণ শান্তর ব্যাটে রানের খরা।

শুরুটা তার খারাপ ছিল না। প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে করেছিলেন ৩০ বলে ৩৬ রান। টুর্নামেন্টের দশ ম্যাচ শেষে সেটিই হয়ে আছে তার সর্বোচ্চ। পরের ৯ ম্যাচে স্রেফ একবার ত্রিশ ছুঁতে পেরেছেন ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।

অবিশ্বাস্যভাবে, টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত একটি ছক্কাও মারতে পারেননি তিনি। স্রেফ ১২.৪০ গড়ে করেছেন ১২৪ রান। স্ট্রাইক রেটের অবস্থাও তথৈবচ (৯৩.৯৩)।

অথচ গত বিপিএলে ধারাবাহিকতার সমার্থক ছিলেন শান্ত। অনেক সমালোচনা পাশ কাটিয়ে ও আগের ব্যর্থতা ঝেরে ওই আসরে চার ফিফটির পাশাপাশি চারটি ত্রিশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন এই ব্যাটসম্যান। ৩৯.৭০ গড়ে ৫১৬ রান করে তিনি ছিলেন টুর্নামেন্টের সফলতম ব্যাটসম্যান। সিলেটকে রানার্স-আপ করার পথে বড় অবদান রেখে টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটারের স্বীকৃতিও পান।

শান্তর ক্যারিয়ারের নতুন এক অধ্যায়ের শুরু সেই সাফল্যের পথ ধরে। বিপিএলে পারফর্ম করার আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করে জাতীয় দলের হয়েও দারুণ সময় কাটে তার। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সাত সেঞ্চুরির পাঁচটিই তিনি করেন গত এক বছরে। পাশাপাশি তার ব্যাট থেকে আসে নয়টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। ব্যাটিংয়ে নির্ভরতার পাশাপাশি তার নিবেদন, ভাবনার গভীরতা ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে অল্প সময়েই জাতীয় দলের নেতৃত্বের ভাবনায় চলে আসেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিন সংস্করণেই এই বছরের জন্য অধিনায়ক হিসেবে তাকে বেছে নিয়েছে বিসিবি।

স্বপ্নের মতো বছর কাটানো শান্তর ওপর এবারও একইরকম প্রত্যাশা ছিল সিলেটের। প্লেয়ার্স ড্রাফটের আগেই তাকে গতবারের দল থেকে ধরে রাখে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। টুর্নামেন্টের মাঝপথে অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন সংবাদ সম্মেলনে শান্তকে বলেছেন দলের ‘আইকন’ ক্রিকেটার। কিন্তু পারফরম্যান্সটা মোটেও আইকনসুলভ করতে পারছেন না শান্ত।

গত বছর সাকিব আল হাসানের চোটে বিশ্বকাপে দুই ম্যাচ ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন সংস্করণেই জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার পর সিলেটের নেতৃত্বেও তার নাম উঠে আসা ছিল স্বাভাবিক। তবে চাপমুক্ত থেকে সহজাত ব্যাটিংয়ের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য শান্তর কাঁধে এই দায়িত্ব দেয়নি ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। কিন্তু সেই ‘মুক্ত’ শান্ত বন্দি যেন ব্যর্থতার বৃত্তে।

প্রথম ম্যাচে ৩০ বলে ৩৬ রানের ইনিংসের পর ক্রমেই পিছিয়েছেন শান্ত। টানা পাঁচ ম্যাচে তিনি আউট হয়েছেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। কখনও শুরু থেকেই তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে, আবার কখনও অতি সাবধানী খেলার চেষ্টায় দিয়েছেন উইকেট। প্রতিবারই অভিন্ন ছিল একটি চিত্র, হতাশা নিয়ে শান্তর ড্রেসিং রুমে ফেরা।

দুই ম্যাচ আগে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ২৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংসে ছন্দে ফেরার আভাস ছিল শান্তর ব্যাটে। সেদিন তার কাছে প্রত্যাশা যখন বড় ইনিংসের, তখন উসমান কাদিরের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যাটের সামনের কানায় লেগে দেন ফিরতি ক্যাচ। অপমৃত্যু ঘটে সম্ভাবনাময় এক ইনিংসের।

রানে ফেরানোর চেষ্টায় শান্তকে ওপেনিং থেকে সরিয়ে তিন নম্বরে নামিয়েও চেষ্টা করেছে সিলেট। কিন্তু কিছুতেই কোনো ফল পাচ্ছে না দলটি। ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে সবশেষ ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে তিনি ফিরেছেন শূন্য রানে।

আগের বছরের দল থেকে মুশফিকুর রহিম, তাওহিদ হৃদয়রা চলে যাওয়ায় এবার সিলেটের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় ভরসা ছিলেন শান্তই। কিন্তু একের পর এক ম্যাচে হতাশ করেছেন তিনি। তার নাজুক পারফরম্যান্সের টুর্নামেন্টে সিলেটের অবস্থাও বেহাল। দশ ম্যাচে স্রেফ তিন জয়ে তারা এখন পয়েন্ট তালিকায় তলানি থেকে দুইয়ে।