জবাব দেওয়ার কথা ভাবেননি তামিম

সবচেয়ে বেশি রান করে ও ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট হয়ে তামিম ইকবাল বললেন, কাউকে প্রমাণ করার কোনো তাগিদ ছিল না তার ভেতরে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2024, 03:53 AM
Updated : 2 March 2024, 03:53 AM

বলা হয়, পারফরম্যান্সের চেয়ে বড় জবাব আর নেই। ব্যাট কথা বললে আর মুখের কথার প্রয়োজন কী! তামিম ইকবালও যেন সেটিই বুঝিয়ে দিলেন। ব্যাটিংয়ে, নেতৃত্বে আর সব দিক থেকে স্মরণীয় এক বিপিএলের পর অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার বললেন, দেখিয়ে দেওয়ার কোনো তাড়না তার ছিল না।

গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে শুরু। এরপর একের পর এক ঘটনার স্রোত। তামিম ইকবালকে ঘিরে সেসব ঘটনাপ্রবাহ মাঠের ক্রিকেটে যতটা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল মাঠের বাইরের নানা কিছু। বিতর্ক, নাটক, উত্তেজনা, আরও কত কী! সেই তামিম এবার সব কিছু পেছনে ফেলে রাঙিয়েছেন বিপিএল। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ফরচুন বরিশালকে জিতিয়েছেন শিরোপা।

কাজটা একদমই সহজ ছিল না। প্রায় চার মাস পর তিনি ফিরেছেন স্বীকৃত ক্রিকেটে। মাঝের সময়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে না থাকা, সাকিব আল হাসানের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার, জাতীয় দলে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়া; সব মিলিয়ে মাঠে ফেরার মঞ্চটা মসৃণ ছিল না তামিমের জন্য। কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতা জয় করেই তিনি নিজেকে মেলে ধরেছেন এবারের বিপিএলে।

গত জুলাইয়ে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলেই আকস্মিক অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। কিন্তু তখনই মাঠে না ফিরে দেড় মাসের বিশ্রাম নেন অভিজ্ঞ ওপেনার।

এরপর তার ফেরা বিশ্বকাপের আগে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪৪ রানের ইনিংস খেলে তামিম বলেছিলেন, ফিটনেসের দিক থেকে অনেক ভালো বোধ করছেন তিনি এবং বিশ্বকাপ খেলার জন্যও প্রস্তুত তিনি। কিন্তু পরে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি সাবেক এই অধিনায়ক।

আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়, ফিটনেস নিয়ে সংশয় থাকায় তামিমকে বিশ্বকাপের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। কিন্তু এক ভিডিওবার্তায় তামিম বলেন, ফিটনেস ঠিক আছে তার। একইসঙ্গে বাদ পড়ার পেছনে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিতও দেন তিনি। তামিমের দলে না থাকার প্রসঙ্গে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে টি-স্পোর্টসে সাক্ষাৎকার দেন সাকিব। যেখানে তিনি সরাসরিই আক্রমণ করেন তামিমকে।

বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশে ও বিদেশে খেলেছে বাংলাদেশ। সেখানেও ছিলেন না তামিম। বরিশালের জার্সিতে বিপিএল দিয়ে মাঠে ফিরে শুরুর দিকে ব্যাট হাতে বড় ইনিংসের অভাবে ভুগছিলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ধীরে ধীরে সেই অপেক্ষা ঘুচিয়ে তিনিই হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। বরিশালের প্রথম শিরোপা জয়ে ৪৯২ রান করে রেখেছেন বড় অবদান।

গত কিছুদিনে যা কিছু হয়েছে, তার পর ওই পারফরম্যান্স ‘জবাব’ বলাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে ২২ গজে ব্যাট হাতে দাপুটে পারফরম্যান্সের পর মাইক্রোফোনের সামনে তেমন কোনো ‘শট’ খেললেন না তামিম।

“সত্যি বলতে, যদি এভাবে ভাবতাম যে জবাব দিতে হবে, তাহলে হয়তো করতে পারতাম না। আমি এই জিনিসটাই ভাবি নাই যে, আমার জবাব দিতে হবে। আমার ক্যারিয়ার যদি ৩ বছরের হতো, তাহলে হয়তো ভাবতাম যে জবাব দেওয়া দরকার। (ক্যারিয়ারে) আমি কী করেছি, না করেছি তা সবাই দেখেছে।”

জবাব দিতে চাওয়া মানেই বাড়তি চাপ, দীর্ঘ ক্যারিয়ার থেকে এই শিক্ষা হয়েছে তামিমের। এই টুর্নামেন্টে নির্ভার থেকে উপভোগের আনন্দেই তাই সাফল্যের পথে ছুটতে চেয়েছেন তিনি।

“আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আমি অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। এমনও সময় ছিল যখন আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে যে, আমি দলে থাকব কি থাকব না। তখন সবাইকে ভুল প্রমাণ করতে চাইতাম এবং সেটা করতে গিয়ে শিখেছি যে, নিজের ওপর চাপ তৈরি করছি। তখন ভাবতাম, ‘আজকে ৫০-১০০ করে দেখিয়ে দেব।’ যখনই এভাবে চিন্তা করতাম, নিজের ওপর চাপ তৈরি করতাম। যেটা আমি বুঝতাম না। তাই পরের ম্যাচ শুরুর আগেই চাপ অনেক বেশি থাকত আমার।”

“আবার এমনও সময় এসেছে, একই ধরনের কথা হয়েছে, কিন্তু আমি সেটি অত গুরুত্ব দিয়ে নেইনি। শুধু খেলায় মনোযোগ দিয়েছি। ১৭ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আমি এই জিনিসটা শিখেছি। এটিই আবারও সাহায্য করেছে। আমি জানতাম, রান না করলে অনেক কথা হতো, অনেক কিছু হতো। তবে ঠিক আছে। আমার যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের দলীয় পরিবেশ দারুণ ছিল।”