বল ব্যাটের কানায় লেগে কিপারের পাশ দিয়ে চলে গেল বাউন্ডারিতে। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ওই শটে পৌঁছে গেলেন সেঞ্চুরিতে। তাকে আলিঙ্গনে জড়ালেন উইকেটে সঙ্গী মোহাম্মদ মিঠুন। এক হাতে হেলমেট ও আরেক হাতে ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন নাঈম। এরপর দেখালেন চমকপ্রদ উদযাপন। ব্যাটকে মাথার ওপর তলোয়ারের মতো ঘুরিয়ে আর শরীর বাঁকিয়ে দেখিয়ে দিলেন তার নাচের প্রতিভা! উইন্ডিজ ক্রিকেটের ইউটিউব চ্যানেলের ধারাভাষ্যকার তাতে মুগ্ধ, “হোয়াট আ সেলিব্রেশন… দা হেলিকপ্টার সেলিব্রেশন।”
সেন্ট লুসিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে আনঅফিসিয়াল ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বৃহস্পতিবার এই ইনিংস খেলেন নাঈম।
আন্তর্জাতিক ম্যাচ এটি নয়। স্রেফ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে। তবে নাঈমের কাছে প্রাপ্তি যে কম নয়, সেটা তো স্পষ্টই। জাতীয় দলে ফেরার দাবি জানাতে হলে এই সিরিজের পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে তিনি আগের ম্যাচে প্রথম ওভার আউট হয়েছিলেন রানের মুখ না দেখেই। শূন্য থেকে সেঞ্চুরির অভিযানে সফল হয়ে তার উচ্ছ্বাস ফুটে উঠল ওই উদযাপনে।
সেঞ্চুরির পর অবশ্য বড় করতে পারেননি ইনিংস। আউট হয়ে যান ১৪ চার ও ১ ছক্কায় ১১৭ বলে ১০৩ রান করে।
আগের ম্যাচে ক্যারিবিয়ান পেসারদের শর্ট বলের মহড়ায় বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ইনিংস ভেঙে পড়েছিল স্রেফ ৮০ রানেই। ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচের উইকেটে গতি ও বাউন্স আগের দিনের চেয়ে ছিল একটু কম। সেটাই কাজে লাগাম নাঈম।
আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার যদিও ৬ রানে বোল্ড হন ভীষণ বাজে শটে। তবে দ্বিতীয় উইকেটে সাইফ হাসানের সঙ্গে ৫৭ রানের জুটিতে ধাক্কা সামাল দেন নাঈম। পরে তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক মিঠুনের সঙ্গে যোগ করেন ৯৩ রান।
আগের ম্যাচের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এ দিন শুরুতে শর্ট বলের সামনে বেশ সাবধানী ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। নাঈমও বেশ কিছু শর্ট বল ছেড়ে দেন। তবে ক্যারিবিয়ান পেসারদের বাউন্সারে আগের দিনের সেই ধার ছিল না। নাঈম পরে তা কাজে লাগান দারুণ কিছু পুল ও কাট শটে বাউন্ডারি মেরে। ফর্মের চূড়ায় থাকলে তিনি যেমন খেলেন, তেমন কিছু ড্রাইভও খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
তবে ফিফটির আগে সুযোগও দেন একবার। ৪২ রানে বাঁহাতি পেসার প্রেস্টন ম্যাকসুইনের বলে কাট করে ক্যাচ দেন, তবে ক্যাচটি ফসকে যায় পয়েন্টে জাস্টিন গ্রিভসের হাত থেকে।
ওই ওভারেই টানা দুটি বাউন্ডারি আসে তার ব্যাট থেকে। পরের ওভারে অফ স্পিনার আরেকটি বাউন্ডারিতে ফিফটি স্পর্শ করেন ৫৩ বলে। ফিফটির পর চার্লসের বলেই স্লগ সুইপে বিশাল এক ছক্কায় বল পাঠান স্টেডিয়ামের বাইরে।
তার সাবলিল পথচলা চলতে থাকে এরপরও। ৮৬ থেকে শার্মন লুইসের বলে দারুণ ড্রাইভ ও পুল শটে পরপর দুটি বাউন্ডারি এগিয়ে যান শতরানের পথে। তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি ১১২ বলে।
৫৭ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি এটি। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে আগেও ছিল আরেকটি সেঞ্চুরি।
৩২তম ওভারে সেঞ্চুরি পেয়ে ইনিংসটাকে আরও বড় করার হাতছানি ছিল তার সামনে। তবে অ্যান্ডারসন ফিলিপের শর্ট বলে বিদায় পুল করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে থেমে যান তিনি ১০৩ রানে।
নাঈমের পর সাব্বির রহমানের ৫৮ বলে ৬২ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ ‘এ’ ৫০ ওভারে তোলে ২৭৭ রান।