‘এই প্রশ্ন শান্তর জন্য জমা রাখুন’

সিলেট স্ট্রাইকার্সের নেতৃত্ব না পাওয়াতেই কি ব্যাট হাতে এতটা বিবর্ণ নাজমুল হোসেন শান্ত?

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2024, 04:59 AM
Updated : 24 Feb 2024, 04:59 AM

জাতীয় দলের তিন সংস্করণের অধিনায়ক বিপিএল দল সিলেট স্ট্রাইকার্সের সহ-অধিনায়কও নন। এই মানসিক চোটের প্রভাবই কি পড়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিংয়ে? প্রশ্ন শুনতে শুনতেই হাসি খেলে গেল মোহাম্মদ মিঠুনের মুখে। ঠোঁটে সেই হাসি ঝুলিয়ে রেখেই সিলেটের অধিনায়ক বললেন, প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারবেন কেবল শান্তই।

সাফল্যের চূড়া আর ব্যর্থতার তলানি, বিপিএলের পরপর দুই আসরে দুটিই দেখা হয়ে গেল শান্তর। গত বিপিএলের আগে সময়টা খুব ভালো কাটছিল না তার। কিন্তু বিপিএলে তিনি উপহার দেন চমকপ্রদ পারফরম্যান্স। ৫১৬ রান করে তিনি ছিলেন রান সংগ্রহের তালিকায় সবার ওপরে। দুইয়ে থাকা ব্যাটসম্যানের চেয়ে প্রায় একশ রান বেশি করেছিলেন তিনি।

ওই বিপিএলের পর তার ক্যারিয়ারের মোড়ই ঘুরে যায়। জাতীয় দলেও তিনি মূল ব্যাটসম্যানদের একজন হয়ে ওঠেন এবং বেশ উঁচু পারিশ্রমিকে তাকে এবার ধরে রাখে সিলেট। কিন্তু সেই প্রত্যাশার প্রতিদান বলতে গেলে কিছুই দিতে পারেননি তিনি। এবার দলের ১২ ম্যাচের সবকটি খেলে তার রান মোট ১৭৫, ব্যাটিং গড় ১৪.৫৮ ও স্ট্রাইক রেট মাত্র ৯৩.৫৮।

পুরো টুর্নামেন্টে কোনো ফিফটি তো নেই-ই, অবিশ্বাস্যভাবে কোনো ছক্কাই মারতে পারেননি গোটা আসরে।

তার এমন ব্যর্থতার সঙ্গে নেতৃত্বের যোগসূত্র খুঁজেছেন অনেকে। গতবারের মতো এবারও সিলেটের অধিনায়ক করা হয় মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পান তখন মোহাম্মদ মিঠুন। ৫ ম্যাচ পর মাশরাফি টুর্নামেন্ট থেকে বিরতি নিলে সহ-অধিনায়ক মিঠুনই ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যান। সিলেট দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্ভার থেকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ করে দিতেই শান্তকে নেতৃত্বের ভার দেওয়া হয়নি।

তবে এতে উল্টো ফল হলো কি না, দমে গিয়েই নিজেকে হারিয়ে ফেললেন কি না শান্ত, সেই প্রশ্ন উঠল টুর্নামেন্টে সিলেটের শেষ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে। মিঠুন উত্তর দিলেন ছোট্ট করে।   

“এটা তো আমি বলতে পারব না। এই প্রশ্ন শান্তর জন্য জমিয়ে রাখুন, ওর গলা ঠিক হলে উত্তর দিয়ে দেবে।” 

শান্তর গলায় কী সমস্যা, তা অবশ্য বলেননি মিঠুন। তবে শান্তর ব্যাটিংয়ের সমস্যা নিয়েও প্রশ্ন হলো কিছু। সিলেট অধিনায়ক বললেন, ছন্দে ফিরতে সবসরকম চেষ্টাই করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

“আপনারাও জানেন, ও কত বড় খেলোয়াড়। সম্প্রতি তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের অধিনায়ক হয়েছে। আমাদেরও আশা অনেক বেশি ছিল ওর ওপরে। তবে এটা তো ক্রিকেট… ও চেষ্টা কম করেনি। ওর দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তবে হয়নি আর কী… সবসময় সবকিছু তো সবার হাতে থাকে না যে চাইলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।”

“ওর চেষ্টার কমতি ছিল না। দলে ওর পুরো সাপোর্ট ছিল, মাঠে পুরো সাপোর্ট করেছে। দল হিসেবে অবশ্যই আমরা ওর সার্ভিস মিস করেছি। তবে আমরা সবাই জানি, শান্ত গ্রেট খেলোয়াড়। আশা করি ও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।”

টুর্নামেন্টজুড়ে টানা ব্যর্থতায় শান্তর সঙ্গে অনেক কথা বলেছেন মিঠুন। তার রানে ফেলার চেষ্টাও কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তার পরও কেন পারেননি শান্ত, তা জানেন না সিলেট অধিনায়ক। তিনি স্রেফ শুভকামনা জানিয়ে রাখলেন।

“যেটা বললাম, ওর চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। ওর সঙ্গে যখন কথা বললাম, প্রতিটি ম্যাচেই তরতাজা হয়ে ইতিবাচক মানসিকতায় আসত। তারপর আবারও ব্যর্থ হতো। একটা সময়ে খেলোয়াড় হিসেবে হতাশা একটু আসতেই পারে। ও শেষের দিকে চেষ্টা করেছে আরেকটু রিল্যাক্সড থাকতে। কারণ চেষ্টা করতে করতে যখন হয় না, তখন আরেকটু রিল্যাক্সড থাকাই ভালো।”

“ও ঠিক কাজটিই করেছে। কিন্তু হয়নি…। কেন হয়নি, সেই উত্তর আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আশা করি, পরের আন্তর্জাতিক সিরিজে নিজেকে ফিরে পাবে।”

পরের আন্তর্জাতিক সিরিজ দুয়ারেই আছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ শুরু আগামী ৪ মার্চ, যে সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলের নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু হবে শান্তর।