গিল ১২৬*, ভারত ২৩৪, নিউ জিল্যান্ড ৬৬

তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৬৮ রানের রেকর্ড গড়া জয়ে সিরিজ ঘরে তুলেছে হার্দিক পান্ডিয়ার দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2023, 05:11 PM
Updated : 1 Feb 2023, 05:11 PM

ভারতের ইনিংসের সময় মনে হচ্ছিল, ব্যাটিং স্বর্গ। নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় সেটাই যেন হয়ে গেল ব্যাটসম্যানদের জন্য বধ্যভূমি! প্রথমভাগে ঝলক দেখালেন শুবমান গিল, রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে দলকে নিয়ে গেলেন রান পাহাড়ে। পরে বোলিংয়ে আলো ছড়ালেন হার্দিক পান্ডিয়া। রেকর্ডের মালা গড়ে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিতল ভারত।

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বুধবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে কিউইদের ১৬৮ রানে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। ২৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় স্রেফ ৬৬ রানেই গুটিয়ে গেছে নিউ জিল্যান্ড।

রেকর্ড গড়া জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ ঘরে তুলেছে ভারত।

টেস্ট খেলুড়ে দুই দেশের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। আগের রেকর্ড ছিল ভারতেরই। ২০১৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল ১৪৩ রানে। সেই ম্যাচে আইরিশরা অলআউট হয়েছিল ৭০ রানে, যা এত দিন কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে যে কোনো দলের সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল। 

নিউ জিল্যান্ডের এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কা ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল তারা। 

একাধিক রেকর্ড গড়া এই জয়ের মূল কারিগর গিল। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ৬৩ বলে ১২৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছেন তিনি। ১২ চারের সঙ্গে মেরেছেন ৭টি ছয়। 

কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে এটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। গত বছরের এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিরাট কোহলির করা ১২২ রানকে ছাড়িয়ে গেছেন তরুণ ওপেনার।  

গিলের সেঞ্চুরিতে পাওয়া বিশাল সংগ্রহকে নিউ জিল্যান্ডের জন্য অসম্ভব বানিয়ে দেন অধিনায়ক পান্ডিয়া। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ ওভারে স্রেফ ১৬ রান খরচায় তার শিকার চারটি।

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বোলিংবান্ধব বিশেষ করে স্পিনারদের সুবিধা রেখে উইকেট বানানোয় প্রকাশ্যে কিউরেটরদের সমালোচনা করেন পান্ডিয়া। সে কারণেই হয়তো এই ম্যাচের উইকেটে স্পিনারদের জন্য ছিল না তেমন কোনো সাহায্য। 

দুই দল মিলে পড়া ১৪ উইকেটে ১২টিই গেছে পেসারদের ঝুলিতে। নিউ জিল্যান্ডের ১০ উইইকেটের সবই নিয়েছেন ভারতের পেসাররা। ম্যাচে স্রেফ ২ উইকেটের জন্য দুই দলের স্পিনারদের খরচ ৯ ওভারে ৯১ রান।  

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ইশান কিষানকে (৩ বলে ১) হারায় ভারত। এই ধাক্কা বড় হতে দেননি গিল ও রাহুল ত্রিপাঠি। পাল্টা আক্রমণে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে স্রেফ ৪২ বলে ৮০ রান যোগ করেন এই দুজন। 

ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়েও ৪৪ রান করে ফেরেন ত্রিপাঠি। ২২ বলের ইনিংসে ৪ চারের পাশাপাশি ৩টি ছক্কা মারেন তিনি।  

চার নম্বরে নেমে ঝড়ের আভাস দেন সূর্যকুমার যাদবও। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ব্লেয়ার টিকনারের বলে মাইকেল ব্রেসওয়েলের দুর্দান্ত ক্যাচে ড্রেসিংরুমে ফেরেন তিনি। ১ চার ও ২ ছয়ে ১৩ বলে করেন ২৪ রান। 

তৃতীয় উইকেট জুটিতে নিউ জিল্যান্ডের বোলারদের স্রেফ উড়িয়ে দেন গিল ও পান্ডিয়া। এতে অবশ্য অগ্রণী ছিলেন গিল। 

৩৫ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বোলারদের উপর আরও চড়াও হন ২৩ বছর বয়সী ওপেনার। ইনিংসের ৭ ছক্কার সবগুলোই মারেন ফিফটি করার পরে। পঞ্চাশ থেকে একশতে যেতে তার লাগে কেবল ১৯ বল। সুরেশ রায়না, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল ও কোহলির পর ভারতের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরির কৃতিত্ব গড়লেন গিল। 

তার সঙ্গে ৪০ বলে ১০৩ রানের জুটি গড়ার পথে পান্ডিয়ার অবদান ১৭ বলে ৩০ রান। বাকি ২৩ বলে ৭১ রান নেন গিল। শেষ ৬ ওভারে ভারত যোগ করে ৯০ রান।  

বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় পাঁচ ওভারের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে নিউ জিল্যান্ড। প্রথম ওভারে ফিন অ্যালেনকে ফেরান পান্ডিয়া। পরের ওভারে আর্শদিপ সিংয়ের শিকার ডেভন কনওয়ে ও মার্ক চ্যাপম্যান।  

পান্ডিয়ার বলে স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে গ্লেন ফিলিপসকে ফেরান সূর্যকুমার। পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসেই ব্রেসওয়েলের বিদায়ঘণ্টা বাজান উমরান মালিক। স্রেফ ২১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের ন্যুনতম সম্ভাবনাও উবে যায় নিউ জিল্যান্ডের।  

ষষ্ঠ উইকেটে ৩২ রানের জুটি গড়ে দলকে পঞ্চাশ পার করান ড্যারেল মিচেল ও অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। নবম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে জুটি ভাঙার পাশাপাশি জোড়া আঘাত করেন শিভাম মাভি। এরপর বেশি দূর এগোয়নি সফরকারীদের ইনিংস। 

১৩তম ওভারে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরা মিচেল খেলেন ১ চার ও ৩ ছয়ে ২৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:  

ভারত: ২০ ওভারে ২৩৪/৪ (কিষান ১, গিল ১২৬*, ত্রিপাঠি ৪৪, সূর্যকুমার ২৪, পান্ডিয়া ৩০, হুডা ২*; লিস্টার ৪-০-৪২-০, ব্রেসওয়েল ১-০-৮-১, ফার্গুসল ৪-০-৫৪-০, টিকনার ৩-০-৫০-১, সোধি ৩-০-৩৪-১, স্যান্টনার ৪-০-৩৭-০, মিচেল ১-০-৬-১) 

নিউ জিল্যান্ড: ১২.১ ওভারে ৬৬ (অ্যালেন ৩, কনওয়ে ১, চ্যাপম্যান ০, ফিলিপস ২, মিচেল ৩৫, ব্রেসওয়েল ৮, স্যান্টনার ১৩, সোধি ০, ফার্গুসন ০, টিকনার ১, লিস্টার ০*; পান্ডিয়া ৪-০-১৬-৪, আর্শদিপ ৩-০-১৬-২, উমরান ২.১-০-৯-২, কুলদিপ ১-০-১২-০, মাভি ২-০-১২-২) 

ফল: ভারত ১৬৮ রানে জয়ী 

সিরিজ: ভারত ২-১ ব্যবধানে জয়ী 

ম্যান অব দা ম্যাচ: শুবমান গিল 

ম্যান অব দা সিরিজ: হার্দিক পান্ডিয়া