একসময় এটি নিয়মিত হয়ে থাকলেও অনেক বছর ধরেই চর্চাটা আর নেই, তবে আবার তা শুরু করতে যাচ্ছে ইংল্যান্ডের বোর্ড।
Published : 27 Jul 2024, 10:17 AM
আগামী বছর একটি টেস্ট খেলতে ইংল্যান্ডে যাওয়ার জন্য জিম্বাবুয়েকে অর্থ দেবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। স্কাই স্পোর্টসে একটি আলোচনায় ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গুল্ড নিশ্চিত করেন তাদের এই উদ্যোগ। এতে ক্রিকেটের পুরোনো ধারা ফিরে আসতে যাচ্ছে নতুন করে।
একটা সময় এই ‘টুরিং ফি’ দেওয়াটা ছিল প্রচলিত ধারা। সফরে যাওয়া দলকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করত আয়োজক বোর্ড। দুই বোর্ডের চুক্তি হয়ে যেত আগেই। এই শতাব্দীর শুরুর দিকেও কিছুটা টিকে ছিল সেই ধারা। তবে ক্রিকেট বিশ্বের বদলে যাওয়া নানা প্রেক্ষাপটে সেই রীতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক বছর আগেই। আধুনিক যুগে প্রথম নজির গড়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে এই অর্থ দেবে ইসিবি।
এই ধারাটা ফিরিয়ে আনার জন্য গত বছর ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন রিচার্ড গুল্ড। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলির মধ্যে আয়ের যে অসমতা, সেটি কমিয়ে আনতে সম্মিলিত একটি প্রচেষ্টার তাগিদ জানিয়ে আসছেন তিনি। সেটির অংশ হিসেবেই আবার ‘টুরিং ফি’ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব রেখেছেন তিনি বেশ কয়েক দফায়।
শুধু প্রস্তাব রেখেই শেষ নয়, এটি আবার চালু করার উদ্যোগও তার হাত ধরেই হতে যাচ্ছে। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের এজবাস্টন টেস্টের ফাঁকে শুক্রবার স্কাই স্পোর্টসে ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইক আথারটনের সঙ্গে আলোচনায় তা নিশ্চিত করে দিলেন রিচার্ড গুল্ড। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে ইসিবি, বিসিসিআই, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার মতা আর্থিকভাবে শক্তিশালী বোর্ডের দায়িত্বটা বেশি দেখেন ইসিবির প্রধান নির্বাহী।
“এটা অনেক বড় একটি দায়িত্ব…। আইসিসির রাজস্ব বন্টন পদ্ধতির কথা বলুন কিংবা দ্বিপাক্ষিক সিরিজের রাজস্ব ভাগাভাগি করা, সত্যি বলতে এসব যেভাবে হয়ে আসছে, তা পুরোনো হয়ে গেছে।”
“উদাহরণস্বরূপ, আগামী বছর জিম্বাবুয়ে আসবে আমাদের এখানে সফরে। এমনিতে যেটা চলে আসছে, সফরকারী দল কোনো দেশে যাওয়ার পর তাদের আবাসন ও অন্যান্য কিছুর দায়িত্ব আয়োজক বোর্ডের থাকে। কিন্তু সফরে যাওয়ার জন্য কোনো ফি দেওয়া হয় না। আগামী বছর যখন আমরা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলব, সফরে আসার জন্য ওদেরকে ফি দেব।”
দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ক্ষেত্রে সফরে যাওয়ার বিমান ভাড়াসহ আনুসঙ্গিক নানা খরচ সফরকারী বোর্ডকে বহন করতে হয়। সফরে যাওয়ার পর অবশ্য বেশির ভাগ দায়িত্ব আয়োজক বোর্ডেরই, তবে তার পরও সফরকারী দলের কিছু খরচ হয়েই যায়। সব মিলিয়ে সফরে যাওয়ার খরচ অনেক আর্থিকভাবে দুর্বল বোর্ডগুলোর জন্য অনেক বড় চাপ হয়ে যায়। টিভি সম্প্রচার স্বত্ব, বিজ্ঞাপন, টিকিট বিক্রিসহ যে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সবটুকু আয় আয়োজক বোর্ডই পায়। সফরকারী দল শুধু খরচই করে থাকে।
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেইভ যেমন এটা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন। গত জানুয়ারিতে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে তিনি বলেছিলেন, আইসিসির রাজস্ব বন্টন পদ্ধতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে এবং আর্থিকভাবে নড়বড়ে বোর্ডগুলির প্রতি ইসিবি, বিসিসিআই ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আরও বেশি দায়িত্ব পালন করা উচিত।
নিজেদের সবশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরের উদাহরণ দিয়েই তখন বাস্তবতা তুলে ধরেছিলেন ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহী।
“গত চার মাসে অস্ট্রেলিয়া সফরে দল পাঠাতে গত চার মাসে ২০ লাখ ডলারের বেশি খরচ করেছে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এসব সিরিজ থেকে সবটুকু আর্থিক লাভ হয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার। আমরা একটি ডলারও পাইনি। এটা কি ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত ও টেকসই কিছু?”
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো বোর্ডগুলির প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতার মনোভাব ইসিবির আছে বলে দাবি করলেন ইসিবির প্রধান নির্বাহী। সহযোগিতা মানেই যে সবসময় ‘টুরিং ফি’ বা আর্থিক কিছু নয়, বরং অন্যভাবেও কিছুটা পুষিয়ে দেওয়া যায়, তা তুলে ধরলেন তিনি।
“ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই সফরের ৬ মাস, ৯ মাস আগে থেকেই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি আমি, কোন ধরনের সহায়তা আমরা করতে পারি। ব্যাপারটা অনেকভাবেই করা যায়, শুধু টেস্ট ম্যাচের চক্র দিয়েই নয়। যেমন, গত ক্রিসমাসের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে আমরা বাড়তি দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছি (আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচীর বাইরে), যাতে তাদেরকে সহায়তা করতে পারি।”
“এবারের এই সফরের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট যে অনুরোধটি এসেছিল, তা হলো কোনো একটা পর্যায়ে তারা তাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে এখানে পাঠাতে চায়, যাতে ইংলিশ কন্ডিশনে তাদের ক্রিকেটারদের লাল বলের খেলার অভিজ্ঞতা হয়। কাজেই সবসময় আর্থিক সহায়তাই জরুরি নয়। অন্য অনেক পথই আছে।”
২২ বছর পর আগামী গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলার সুযোগ পাবে জিম্বাবুয়ে। ইংল্যান্ডের মাঠে তারা কেবল চারটি টেস্ট খেলতে পেরেছে, ২০০০ সালে দুটি, ২০০৩ সালে দুটি। বাংলাদেশও এখনও পর্যন্ত মোটে চারটি টেস্ট খেলেছ ইংল্যান্ডে, ২০০৫ সালে দুটি, ২০১০ সালে দুটি। ২০২৭ পর্যন্ত আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচীতে ইংল্যান্ডে কোনো টেস্ট নেই বাংলাদেশের।