ক্লাসেনের তাণ্ডবে ভারতকে ফের হারাল দ.আফ্রিকা

কুইন্টন ডি কক চোট না পেলে তার একাদশে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনাই ছিল ক্ষীণ। ভাগ্যের জোরে পাওয়া সুযোগটা দুই হাতে লুফে নিলেন হাইনরিখ ক্লাসেন। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে উপহার দিলেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। ভারতকে উড়িয়ে সিরিজ জয়ের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2022, 05:11 PM
Updated : 12 June 2022, 05:47 PM

কটকে রোববার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিকদের ৪ উইকেটে হারিয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেছে সফরকারীরা।

বারাবতী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৬ উইকেটে ১৪৮ রান তুলতে পারে ভারত। অল্প পুঁজি নিয়েও প্রতিপক্ষকে শুরুতে চেপে ধরেছিল তারা। কিন্তু ক্লাসেনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ১০ বল বাকি থাকতে।

ডি কক হাতে চোট পাওয়ায় গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবশেষ এই সংস্করণে খেলা ক্লাসেনকে কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে নেওয়া হয় একাদশে। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দলের জয়ের নায়ক এখন তিনি।

পাঁচে নেমে ৫ ছক্কা ও ৭ চারে ৪৬ বলে ৮১ রানের ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। টি-টোয়েন্টিতে তার আগের সেরা ছিল ৬৯।

টি-টোয়েন্টিতে ভারতের  বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো ব্যাটসম্যানের সেরা ইনিংস এটি। আগের সেরা ছিল ডি ককের অপরাজিত ৭৯, বেঙ্গালুরুরে ২০১৯ সালে করেছিলেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।

ক্লাসেনের তাণ্ডবের মাঝেই অসাধারণ বোলিং উপহার দেন ভুবনেশ্বর কুমার। ৪ ওভারে স্রেফ ১৩ রান দিয়ে এই পেসারের শিকার ৪ উইকেট।

ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে হারায় ভারত। কাগিসো রাবাদার বলে পয়েন্টে ধরা পড়েন তিনি। শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে টানেন শ্রেয়াস আইয়ার ও ইশান কিষান।

ছন্দে থাকা কিষান তুলতে থাকেন দ্রুত রান। আনরিক নরকিয়াকে তিন বলের মধ্যে ওড়ান দুই ছক্কায়। পরে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে মারেন আরেকটি। ওই ওভারে কিষানকে ফেরানোর সুযোগ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু মিড-অনে কঠিন ক্যাচ ধরতে পারেননি ওয়েইন পার্নেল।  

২৯ রানে জীবন পেয়ে অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি কিষান। পরের ওভারেই নরকিয়ার বাউন্সারে ধরা পড়েন তিনি ডিপ স্কয়ার লেগে। করেন ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৩৪ রান। ভাঙে শ্রেয়াসের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি।

রিশাভ পান্তও এদিন ব্যর্থ। কেশভ মহারাজের বাঁহাতি স্পিন তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ পয়েন্টে। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাবরাইজ শামসিকে পরপর দুই বলে চার-ছক্কা মারা শ্রেয়াস পরে ছক্কায় ওড়ান মহারাজকেও।

হার্দিক পান্ডিয়াকে স্রেফ ৯ রানে বোল্ড করে দেন পার্নেল। দুটি করে ছক্কা-চারে ৩৫ বলে ৪০ রান করা শ্রেয়াস উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন প্রিটোরিয়াসের বলে।

ভারতের স্কোর দেড়শর কাছাকাছি যায় মূলত দিনেশ কার্তিকের শেষ দিকের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে। ১৯তম ওভারে নরকিয়াকে দুই চার মারা এই ব্যাটসম্যান শেষ ওভারে প্রিটোরিয়াসকে এক চারের সঙ্গে ওড়ান দুই ছক্কায়।

দুটি করে ছক্কা-চারে ২১ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন কার্তিক।

রান তাড়ায় প্রথম ওভারে উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকাও। ভুবনেশ্বরের সুইং করে ভেতরে ঢোকা বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন দলে ফেরা রিজা হেনড্রিকস।

ভারতীয় এই পেসারের পরের ওভারে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন প্রিটোরিয়াস (৪)। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ভুবনেশ্বর স্টাম্প এলোমেলো করে দেন আগের ম্যাচে বিধ্বংসী ইনিংস খেলা রাসি ফন ডার ডাসেনের।

২৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে পথে ফেরান বাভুমা ও ক্লাসেন। শুরুতে কিছুটা সাবধানী ছিলেন ক্লাসেন, প্রথম ১১ বলে করেন স্রেফ ৪ রান।

লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেলকে ওভারে একটি করে ছক্কা-চারে তার ঝড়ের শুরু। পরে পান্ডিয়াকে ওভারে মারেন দুই চার। বাঁহাতি স্পিনার আকসার প্যাটেলকে টানা তিন বলে মারেন দুই চার ও এক ছক্কা।

বাভুমাকে ফিরিয়ে ৪১ বলে ৬৪ রানের জুটি ভাঙেন চেহেল। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক থামেন ৩৫ রানে। ফর্মে থাকা ডেভিড মিলার মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই মারেন চার।

৩২ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটিতে পা রাখেন ক্লাসেন। চেহেলের এক ওভারে মিলার একটি ও ক্লাসেন মারেন দুটি ছক্কা। দল যখন জয়ের দুয়ারে, ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় লং-অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ক্লাসেন।

১৫ বলে ২০ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়েন মিলার।

সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি আগামী মঙ্গলবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ১৪৮/৬ (রুতুরাজ ১, কিষান ৩৪, শ্রেয়াস ৪০, পান্ত ৫, পান্ডিয়া ৯, আকসার ১০, কার্তিক ৩০*, হার্শাল ১২*; রাবাদা ৪-০-১৫-১, পার্নেল ৪-০-২৩-২, নরকিয়া ৪-০-৩৬-২, প্রিটোরিয়াস ৪-০-৪০-১, শামসি ২-০-২১-০, মহারাজ ২-০-১২-১)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৮.২ ওভারে ১৪৯/৬ (বাভুমা ৩৫, হেনড্রিকস ৪, প্রিটোরিয়াস ৪, ফন ডার ডাসেন ১, ক্লাসেন ৮১, মিলার ২০*, পার্নেল ১, রাবাদা ০*; ভুবনেশ্বর ৪-০-১৩-৪, আভেশ ৩-০-১৭-০, হার্দিক ৩-০-৩১-০, চেহেল ৪-০-৪৯-১, হার্শাল ৩-০-১৭-১, আকসার ১-০-১৯-০, শ্রেয়াস ০.২-০-২-০)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: হাইনরিখ ক্লাসেন

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা