শেখ জামালের জয়রথ থামালেন তামিম-এনামুলরা

জয়ের ভিত গড়া হয়ে গেছে, ছিল না রান তাড়ার চাপ। তামিম ইকবালের সামনে ছিল সেঞ্চুরির হাতছানি। কিন্তু ধৈর্য হারিয়ে ফেললেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। পারভেজ রাসুলের বল উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় হয়ে গেলেন স্টাম্পড। তার আক্ষেপের দিনে অবশ্য দাপুটে এক জয় পেল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। হারতে ভুলে যাওয়া শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবকে দিল সেই তেতো স্বাদ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2022, 01:14 PM
Updated : 24 April 2022, 02:06 PM

চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে টানা ৭ ম্যাচে জয়ের পর হারল ইমরুল কায়েসের দল। সুপার লিগের ম্যাচে রোববার তাদের বিপক্ষে ৮ উইকেটে জিতল প্রাইম ব‍্যাংক।

ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নুরুল হাসান সোহানের ফিফটিতে ৮ উইকেটে ২৩২ রান করে শেখ জামাল। জবাব দিতে নেমে তামিম, এনামুল, শাহাদাত হোসেনের দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫৮ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় প্রাইম ব্যাংক।

লিগে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে তামিম ৪ ছক্কা ও ১০ চারে ৮৫ বলে করেন ৯০ রান। ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে তারই হাতে। ব্যাট হাতে ছন্দে থাকা এনামুল করেন ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৫২। তিনে নেমে ৫ চারে ৫২ রান করে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়েন শাহাদাত।

বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই রবিউল ইসলামকে হারায় শেখ জামাল। দ্রুত বিদায় নেন সাইফ হাসানও। দুই ওপেনারই যুব বিশ্বকাপজয়ী বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানের শিকার।

আফগান পেসার করিম জানাত বোল্ড করে দেন ইমরুলকে (১৫)। কয়েক ওভার পর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে চারে নামা অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের (১৪) স্টাম্পড এলোমেলো করে দেন তাইজুল ইসলাম।

বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে স্টাম্প হারান তাইবুর রহমানও। ৮৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া দলকে পথে ফেরান সোহান ও পারভেজ রাসুল।

তাদের ৬০ রানের জুটি ভাঙে এনামুলের বলে ভারতীয় অলরাউন্ডার পারভেজ রাসুল কট বিহাইন্ড হলে। এক ছক্কা ও ৩ চারে তিনি করেন ৩৭ রান। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এনিয়ে দুই ইনিংসে বোলিং করে দুইবারই উইকেট পেলেন এনামুল।

এক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যান আগের ম্যাচে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে দলকে জেতানো সোহান। ৮৮ বলে ফিফটিতে পা রাখেন তিনি।

সোহানের লড়াই থামে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায়। তাইজুলকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন ৯ চারে ৭১ রান করা এই কিপার-ব্যাটসম্যান।

এবারের লিগে ব্যাট হাতে সময়টা দারুণ কাটছে সোহানের। ছয় ম্যাচ খেলে তিন ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিতে এখন পর্যন্ত করেছেন ৩৮৭ রান।

অষ্টম উইকেটে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ৫৬ রানের জুটি গড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষ ওভারে আউট হন তিনি এক ছক্কা ও ৬ চারে ৪৭ রান করে, শরিফুল ইসলামের বলে। গোড়ালিতে চোট পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝপথে দেশে ফেরা তরুণ এই পেসার এই ম্যাচ দিয়ে ফিরলেন মাঠে।

তামিম ও এনামুলের ব্যাটে রান তাড়ায় উড়ন্ত শুরু পায় প্রাইম ব্যাংক। এনামুল রান বাড়ান দ্রুত, তামিম এগিয়ে যান দেখেশুনে। ৪৮ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন এনামুল। তাদের জুটি শতরান স্পর্শ করে ১০২ বলে। 

সানজামুল ইসলামের করা ১৮তম ওভারে সুযোগ এসেছিল এই জুটি ভাঙার। বাঁহাতি এই স্পিনারকে উইকেট ছেড়ে উড়িয়ে মারেন তামিম। বাউন্ডারি থেকে কিছুটা এগিয়ে ক্যাচের চেষ্টা করেন মিরাজ। বলের নিচে পৌঁছেও গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু মুঠোয় জমাতে পারেননি। উল্টো ডেকে আনেন বিপদ।

লিগে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন তামিম ইকবাল।

আঙুলে বলের আঘাতে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ছাড়েন মাঠ। পরে তাকে এক্সরের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে একাদশ ওভারে ফিল্ডিংয়ের সময় ডান পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিক। যদিও তিনি এখন ঠিক আছেন।

জীবন পেয়ে তামিম ৫৭ বলে করেন ফিফটি। এনামুলকে কট বিহাইন্ড করে ১২১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাইফ হাসান।

স্বপ্নের মতো এক মৌসুম কাটছে এনামুলের। দুই সেঞ্চুরি ও ৮ ফিফটিতে ১৩ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ৯৩০ রান করেছেন তিনি। 

পঞ্চাশের পর তামিম রান বাড়াতে থাকেন দ্রুত। জীবন পান তিনি আরও একবার। ৮৯ রানে তার ক্যাচ নিতে পারেননি ইমরুল। যদিও শেষ পর্যন্ত তিন অঙ্কে পা রাখতে পারেননি তিনি তেড়েফুঁড়ে বড় শট খেলতে গিয়ে।

শাহাদাত উইকেটে নেমেই বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুলতে থাকেন রান। পরে তাকে সঙ্গ দেন মোহাম্মদ মিঠুন। তাদের ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় প্রাইম ব্যাংক। 

৫৫ বলে ফিফটি করেন যুব বিশ্বকাপজয়ী ব্যাটসম্যান শাহাদাত। দুটি করে ছক্কা-চারে মিঠুন অপরাজিত থাকেন ৩১ রান করে। 

ম্যাচ হারলেও শিরোপা ঘরে তোলার পথে ভালোভাবেই এগিয়ে আছে শেখ জামাল। ২২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে তারা। দুইয়ে থাকা লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের পয়েন্ট ১৮।

এদিন রেলিগেশনের লিগের শেষ ম্যাচে ফতুল্লার খান সাহেব উসমান আলি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল সিটি ক্লাব ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের। কিন্তু মাঠ ভেজা থাকায় লম্বা সময় অপেক্ষার পরও খেলা শুরু করা যায়নি। দুই দলকে পয়েন্ট ভাগ করে দেওয়া হয়।

এই দুই দল আগেই টিকে গেছে প্রিমিয়ার লিগে। তলানিতে থেকে প্রথম বিভাগে নেমে গেছে খেলাঘর সমাজ কল‍্যাণ সমিতি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৩২/৮ (সাইফ ১৩, রবিউল ০, ইমরুল ১৫, মুশফিক ১৪, সোহান ৭১, তাইবুর ৩, রাসুল ৩৭, মিরাজ ৪৭, জিয়াউর ১৫*, মৃত্যুঞ্জয় ৩*; শরিফুল ১০-১-৫৬-১, রকিবুল ১০-১-২৫-২, করিম জানাত ১০-০-৪১-১, তাইজুল ১০-১-৪২-৩, মেহেদি ৩.২-১-৯-০, নাসির ৩.৪-০-১৭-০, এনামুল ৩-০-২১-১)

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪০.২ ওভারে ২৩৪/২ (এনামুল ৫২, তামিম ৯০, শাহাদাত ৫২*, মিঠুন ৩১*; রাসুল ১০-০-৪৭-১, জিয়াউর ২-০-১১-০, রবিউল ২-০-১৮-০, মিরাজ ৫-১-২৬-০, সানজামুল ৭.২-০-৬১-০, মৃত্যুঞ্জয় ৫-০-২৩-০, সাইফ ৩-০-২০-১, ইমরুল ১-০-৯-০, তাইবুর ৫-১-১৬-০)

ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল