চতুর্থ দিন দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১৩৬.২ ওভারে ৪৫৩ বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৭৪.২ ওভারে ২১৭ দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৩৯.৫ ওভারে ১৭৬/৬ (ডি.) বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২৩.৩ ওভারে ৮০ |
ফের ২ বোলারেই শেষ ইনিংস
চতুর্থ ইনিংস যেন বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, সে সময় বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছেন কেশভ মহারাজ ও সাইমন হার্মার। টানা দুই টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এই দুই স্পিনার। কোনো বোলার বদল করতে হয়নি ডিন এলগারকে।
ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে টানা দুই টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ৭ উইকেট করে নিলেন বাঁহাতি স্পিনার মহারাজ। অফ স্পিনার হার্মার এবারও পেলেন ৩ উইকেট।
আগের ম্যাচের চেয়ে একটু উন্নতি করে ৫৩ রানের জায়গায় বাংলাদেশ থামল ৮০ রানে। ডারবানের সেই ম্যাচের চেয়ে আরেকটু দীর্ঘ হলো তাদের ইনিংস, এবার খেলতে পারল ২৩.৩ ওভার। সেদিন ৫৫ মিনিট টিকেছিল ইনিংস, এবার টেনেটুনে পূর্ণ হলো এক ঘণ্টা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৪৫৩
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২১৭
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ১৭৬/৬ (ডি.)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪১৩, আগের দিন ২৭/৩) ২৩.৩ ওভারে ৮০ (মুমিনুল ৫, মুশফিক ১, লিটন ২৭, ইয়াসির ০, মিরাজ ২০, তাইজুল ০, খালেদ ০, ইবাদত ০*, মহারাজ ১২-৩-৪০-৭, হার্মার ১১.৩-১-৩৪-৩)।
এক ঘণ্টায় শেষ বাংলাদেশ
ম্যাচ বাঁচাতে শেষ দুই দিনে খেলতে হতো ছয় সেশন। কিন্তু নিদারুণ ব্যর্থতায় চতুর্থ দিন স্রেফ এক ঘণ্টাতেই গুঁড়িয়ে গেল বাংলাদেশের চতুর্থ ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জিতল ২-০ ব্যবধানে।
তাইজুল ইসলামকে এলবিডব্লিউ করে বাংলাদেশকে ৮০ রানেই গুটিয়ে দেন সাইমন হার্মার। রিভিউ নিয়েছিলেন তাইজুল কিন্তু কাজ হয়নি।
মহারাজের জোড়া আঘাত
মেহেদী হাসান মিরাজকে কট বিহাইন্ড করার পর সৈয়দ খালেদ আহমেদকে ফিরিয়ে দিলেন কেশভ মহারাজ। টানা দুই টেস্টে ইনিংসে নিলেন ৭ উইকেট।
বাঁহাতি স্পিনারের বলে পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু ঠিক মতো পারেননি, বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপার কাইল ভেরেইনার গ্লাভসে।
আম্পায়ার এলবিডব্লিউ না দিলে রিভিউ নিয়ে সফল হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
মিরাজ ২৫ বরে দুই চার ও এক ছক্কায় করেন ২০।
দুই বল পরেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান খালেদ। রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে টানা দুই টেস্টে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ৭ উইকেট পেলেন মহারাজ।
স্টাম্পড লিটন
উইকেটে প্রবল টার্ন ও বাউন্স মিলছে তবুও বেরিয়ে এসে খেলার ঝুঁকি নিচ্ছিলেন লিটন দাস। শেষ পর্যন্ত দিতে হলো এর মাশুল।
কেশভ মহারাজের মহরাজের বল বেরিয়ে এসে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বলের নাগাল পাননি। বাকিটা অনায়াসে সারেন কিপার কাইল ভেরেইনা।
৩৩ বলে ৭ চারে ২৭ রান করা লিটন বাঁহাতি স্পিনার মহারাজের পঞ্চম শিকার
৬৯ রানে ৬ উইকেট হারাল বাংলাদেশ। ক্রিজে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গী তাইজুল ইসলাম।
শূন্যতেই শেষ ইয়াসির
চতুর্থ দিনের সকালটা শুরু হলো দুঃস্বপ্নের মতো। মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হকের পর দ্রুত ফিরে গেলেন ইয়াসির আলি চৌধুরিও।
সাইম হার্মারের বলে স্লগ করে চাপ সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ইয়াসির। কিন্তু টাইমিং করতে পারেননি, সীমানা থেকে বেশ ভেতরে সহজ ক্যাচ নেন ফিল্ডার।
৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি ইয়াসির।
১৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ৪৪। ক্রিজে লিটন দাসের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ।
আবার ব্যর্থ মুমিনুল
টানা দ্বিতীয় ওভারে উইকেট পেলেন কেশভ মহারাজ। বাঁহাতি স্পিনারের বলে সুইপ করার চেষ্টায় সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মুমিনুল হক।
ব্যাট হাতে দুঃস্বপ্নের মতোই কাটল বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। টানা চার ইনিংসে দুই অঙ্কে যেতে ব্যর্থ হলেন তিনি।
ব্যর্থ হলেন লড়াইয়ের মানসিকতা দেখাতেও। বাজে এক শটেই বিলিয়ে এলেন উইকেট। ঝুলিয়ে দেওয়া বলে অনেক দূর থেকে সুইপ করার চেষ্টায় খুব একটা সফল হননি, ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় আকাশে। ২৫ বরে মুমিনুল করেন ৫।
৩৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে বাংলাদেশ। ক্রিজে লিটন দাসের সঙ্গী ইয়াসির আলি চৌধুরি।
শুরুতেই শেষ মুশফিক
উইকেটের জন্য খুব একটা অপেক্ষা করতে হলো না দক্ষিণ আফ্রিকার। দিনের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারেই মুশফিকুর রহিমকে বিদায় করে দিলেন কেশভ মহারাজ।
বাঁহাতি স্পিনারের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন মুশফিক। ঠিক মতো পারেননি, ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় স্লিপে। সেখানে কোনো ভুল করেননি ডিন এলগার।
৮ বলে ১ রান করেন মুশফিক।
৩৩ রানে ৪ উইকেট হারাল বাংলাদেশ। ক্রিজে মুমিনুল হকের সঙ্গী লিটন দাস।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থ রিভিউ
দিনের প্রথম বলেই মিলল টার্ন ও বাউন্স। সেটা সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় সীমানার বাইরে। সাইমন হার্মারের করা পরের বল অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে থেকে স্পিন করে আঘাত হানে মুশফিকুর রহিমের প্যাডে। আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাড়তি বাউন্সের জন্য বল যেত স্টাম্পের উপর দিয়ে, ব্যর্থ হয় স্বাগতিকদের রিভিউ।
স্পিনে বাংলাদেশের ভোগান্তি
প্রথম টেস্টের পর মুমিনুল হক বলেছিলেন, দেশের বাইরে খেলতে এসে স্পিনারদের উইকেট দেওয়া ক্রাইম। দ্বিতীয় টেস্টেও স্পিন সামলানোয় চিত্রটা প্রায় একই। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টেও স্পিনের সামনে ধুঁকছে বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৮ উইকেট নিয়েছেন কেশভ মহরাজ ও সাইমন হার্মার।
তৃতীয় দিন শেষে খেলার যা চিত্র, তাতে বাকি ৩৮৬ রান বাংলাদেশের দৃষ্টি সীমার অনেক বাইরে। শেষ ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ পঞ্চম দিনে নিয়ে যাওয়াও অনেক দূরের পথ।
৪১৩ রানের প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য তাড়ায় রোববার শেষ বেলায় ২৭ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এর দুটি নেন মহারাজ, অন্যটি হার্মার।
দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে স্পিনে এই ভোগান্তি তাকে কষ্ট দিচ্ছে। দেশের মাটিতে স্পিন সহায়ক উইকেটে খেলার, অসংখ্য স্পিনার সামলানোর অভিজ্ঞতার ছাপ এখন পর্যন্ত রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। সেটা করার শেষ সুযোগ মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিমদের সামনে।