দিনের শুরুতেও ম্যাচের ভাগ্য ছিল দোদুল্যমান। কিন্তু গ্রেনাডা টেস্টের তৃতীয় দিনে শনিবার দারুণ ব্যাটিং-বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
জশুয়ার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ও লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে লড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ইনিংসে এনে দেয় ৯৩ রানের মহামূল্য লিড। দ্বিতীয় ইনিংসে মেয়ার্সের বোলিংয়ে বিধ্বস্ত ইংল্যান্ড দিন শেষ করে ৮ উইকেটে ১০৩ রান নিয়ে।
দিন শেষে তারা এগিয়ে স্রেফ ১০ রানে, উইকেট আছে মোটে ২টি।
মূলত ব্যাটিংয়ের জন্য যাকে এই টেস্টের একাদশে ফেরানো হয়েছে, সেই মেয়ার্সের বোলিং বিশ্লেষণ ১৩-৭-৯-৫!
জশুয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘুরে দাঁড়ানোর পর্ব শুরু আগের দিন থেকে। এক পর্যায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছির ৭ উইকেটে ১২৮। সেখান থেকে আলজারি জোসেফকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়েন জশুয়া, কিমার রোচের সঙ্গে নবম উইকেট জুটিতে রান আসে ৬৮।
তৃতীয় দিনের শুরুর দিকেই অবশ্য রোচকে ফেরাতে পারে ইংলিশরা। তবে শেষ উইকেটে জেডেন সিলসকে নিয়েও অসাধারণ ব্যাটিং করেন জশুয়া। ৫৪ রানে দিন শুরু করা কিপার-ব্যাটসম্যান দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান শেষ ব্যাটসম্যানকে সঙ্গী করে।
ক্রেইগ ওভারটনকে টানা দুই বলে বাউন্ডারি মেরে শতরান ছুঁয়ে দিনি মেতে ওঠেন বাঁধনহারা উদযাপনে। পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার জন্য ১৪ কেজি ওজন কমিয়ে ও ইংল্যান্ডে ক্লাব ক্রিকেট খেলে নিজেকে পোক্ত করে তোলা ক্রিকেটার মাইলফলক ছুঁয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তার চোখে চিকচিক করে জল। ১৪ টেস্ট খেলে ২৩ বছর বয়সী ক্রিকেটার পেলেন প্রথম শতক।
জশুয়ার সেঞ্চুরির পর জো রুটকে ফিরতি ক্যাচ দেন শেষ ব্যাটসম্যান সিলস। রান করেন তিনি মাত্র ১৩, তবে উইকেটে প্রায় ২ ঘন্টা কাটিয়ে খেলেন ৫৯ বল। শেষ উইকেটে জশুয়ার সঙ্গে জুটি ৫২ রানের, ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যা বড় পার্থক্য গড়ে দেয় পরে।
এই জুটির ব্যাটিংয়েই প্রমাণ, উইকেট খুব ভয়ঙ্কর কিছু নয়। খানিকটা দুইরকম গতির উইকেট হলেও টিকে থাকলে রান করা যায়। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা পারেনি টিকতেই।
ব্যাটিংয়ে অবদান রাখার পর সিলস প্রথম উইকেটও এনে দেন চতুর্থ ওভারে। জ্যাক ক্রলি ফেরেন ৮ রানে।
নবম ওভারে আক্রমণে এসে মেয়ার্স ভোগাতে থাকেন ইংলিশদের। প্রথম ওভারেই তার শিকার ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ভরসা জো রুট। প্রথম ইনিংসেও ইংলিশ অধিনায়ক ছিলেন মেয়ার্সের শিকার।
মেয়ার্সের পরের ওভারে হালকা ভেতরে ঢোকা বলে শট না খেলে বোল্ড ড্যান লরেন্স। পরে ফিরিয়ে দেন তিনি বেন স্টোকসকেও।
৩৯ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন অ্যালেক্স লিস ও জনি বেয়ারস্টোর। দুজনই চেষ্টা করেন উইকেট আঁকড়ে রাখার।
১৪৮ বলে ৪১ রানের এই জুটি ভাঙেন আলজারি জোসেফ। একটু নিচু হওয়া বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন বেয়ারস্টো (৮২ বলে ২২)। আত্মঘাতী রানিংয়ে ওই ওভারেই রান আউট বেন ফোকস।
এরপর আবার মেয়ার্সের ছোবল। প্রায় ৪ ঘণ্টা উইকেটে থাকা ওপেনার লিসের প্রতিরোধ ভাঙেন তিনি। ১৩২ বলে ৩১ রান করে একটু নিচু হওয়া বলে বোল্ড লিস। ক্রেইগ ওভারটনকে ফিরিয়ে তিনি পূর্ণ করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট।
ক্রিস ওকস আর জ্যাক লিচ দিনের শেষ সময়টুকু কাটিয়ে দেন কোনোরকমে। তবে ইংল্যান্ডের ম্যাচ বাঁচানোর কোনো উপায় আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২০৪
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৩২/৮) ১১৬.৩ ওভারে ২৯৭ (জশুয়া ১০০*, রোচ ২৫, সিলস ১৩; ওকস ২৫-৭-৫৯-৩, ওভারটন ২৩-৩-৮১-২, সাকিব ২৪-৯-৪৫-২, স্টোকস ২২-৪-৪৮-২, লিচ ২১-৬-৪৯-০, রুট ১.৩-০-১-১)।
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৫৩ ওভারে ১০৩/৮ (লিস ৩১, ক্রলি ৮, রুট ৫, লরেন্স ০, স্টোকস ৪, বেয়ারস্টো ২২, ফোকস ২, ওকস ৯*, ওভারটন ১, লিচ ১*; রোচ ৮-৪-৮-০, সিলস ১০-২-২৪-১, মেয়ার্স ১৩-৭-৯-৫, হোল্ডার ৮-৫-৬-০, জোসেফ ১২-১-৩৪-১, ব্ল্যাকউড ২-১-২-০)।