মাউন্ট মঙ্গানুই থেকে সেঞ্চুরিয়ন, বাংলাদেশের বিশ্বাসের জয়

নিয়মিত সফরের সুযোগ মেলে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য কঠিনতম দুই গন্তব্য নিউ জিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কিছুদিন আগেও, এই দুই দেশের কোনোটিতেই স্বাগতিকদের বিপক্ষে ছিল না কোনো জয়। সফর আসে, সফর যায়, ব্যর্থতার পাল্লাই শুধু ভারি হয়। অবশেষে ২০২২ সাল আসে যেন নতুন বার্তা নিয়ে। বছরের শুরুতেই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে মেলে এক আরাধ্য সাফল্য। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করে এবার সেঞ্চুরিয়নে কাটল দক্ষিণ আফ্রিকা গেরো।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2022, 01:03 PM
Updated : 19 March 2022, 01:34 PM

সেঞ্চুরিয়নে শুক্রবার স্মরণীয় জয়ের ম্যাচের এক পার্শ্বনায়ক ইয়াসির আলি চৌধুরি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় জয়ের বিশ্বাস জন্মেছিল নিউ জিল্যান্ডের সেই ঐতিহাসিক জয়েই।

নতুন বছরের প্রথম দিন শুরু হওয়া মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট দিয়ে বড় পরিবর্তন আসে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মনোজগতে। তার কদিন আগে দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হওয়া দলটি বিস্ময় জাগিয়ে হারিয়ে দেয় টেস্টের বিশ্ব চ‍্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ডকে।

বাংলাদেশের আগের কোনো দল যা করতে পারেনি, তাই করে দেখায় মুমিনুল হকের দল। প্রথম ইনিংসে অধিনায়ক ছিলেন দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। লড়াকু ইনিংস খেলেন মাহমুদুল হাসান জয়। ফিফটি আসে নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসের ব্যাট থেকে। তবে মূল ব্যবধান গড়ে দেন পেসার ইবাদত হোসেন চৌধুরি। ৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে গুটিয়ে দেন স্বাগতিকদের। ছোট রান তাড়ায় বাংলাদেশ পায় নিজেদের ইতিহাসের সেরা জয়।

সেই সময়ই ক্রিকেটাররা পণ করেছিলেন, এবার জিততে হবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। প্রথম ওয়ানডেতে ৩৮ রানে জেতার পর ইয়াসির ফিরে গেলেন সেই সময়টায়।

“আমাদের জয়ের বিশ্বাস ছিল কি না? হ‍্যাঁ। নিউ জিল্যান্ডকে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে যখন হারাই এরপর থেকে বাংলাদেশ দলের মধ্যে একটা বিশ্বাস কাজ করা শুরু করে, আমরা যে কোনো দেশকে বাইরের দেশেও হারাতে পারব। নিউ জিল্যান্ডে থাকতেও আমরা বলছিলাম, আমার যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় যাব তখন ওদেরও হারাতে পারব। এই বিশ্বাস অবশ্যই ছিল।”

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের অতীতের যে পরিসংখ্যান তাতে এতোটা আশাবাদী হওয়া কঠিনই ছিল। ইয়াসির জানালেন, নিউ জিল্যান্ডে পাওয়া সেই জয়ের পর এখন দল বিশ্বাস করে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

“এই সিরিজ শুরু হওয়ার আগে থেকেই সবাই মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী ছিল, আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ওদের হারাতে পারব। সিরিজ জিতব। সবার মধ্যে এই একটা বিশ্বাস ছিল যে, আমরা জিততে পারব। একই পরিকল্পনা থাকবে পরের ম্যাচে। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলব।”

সেঞ্চুরিয়নে শুক্রবার প্রথম ওয়ানডেতে ৩৮ রানের জয়ে কিছুটা অবদান আছে দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেটদেরও। অ‍্যালান ডোনাল্ড বাংলাদেশের এখন পেস বোলিং কোচ। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর আমন্ত্রণে প্রথম ওয়ানডের আগে টিম হোটেলে এসেছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। তিনি কিছুক্ষণ সময় কাটান বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে।

সাবেক প্রোটিয়া অলরাউন্ডার অ‍্যালবি মরকেল ওয়ানডে সিরিজে আছেন পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে। ইয়াসিরের মতে, তাদের সবারই অবদান আছে এই জয়ে।

“অনেক কথার মধ্যে কিছু না কিছু তো সব সময় কাজে লাগেই। অ‍্যালান ডোনাল্ড এখানে আসার পরেই আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। বোলাররা উনার ব্যাপারটা আরও ভালো বলতে পারবেন। ডি ভিলিয়ার্স টিম হোটেলে এসেছিলেন। কিছু কথা তো সব সময় কাজে লাগেই। তিনি এমন কিছু কথা বলেছিলেন, যেটা আমার জন্য খুব কাজে দিয়েছে।”

“মরকেলের সঙ্গে আমি দুই দিন একটু পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করেছি। ও শুধু একটা কথাই বলতো, যতটুকু সম্ভব সোজা মারার চেষ্টা কর। কারণ, এটাই সেরা অপশন। কারণ, তিন দিনে এতো কিছু শেখা সম্ভব না। মূল ব্যাপার যেটা ছিল, যতটা পার সোজা মারার চেষ্টা কর।”

বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক প্রথমের বছরে মিলেছে সিরিজে শুভসূচনা। রোববার জোহানেসবার্গে জিতলে আরেকটি বিশাল অর্জন ধরা দেবে হাতে। ম্যাচ জেতার পরেই তামিম বলেছিলেন, আজকের দিনটা উদযাপনের, পরের দিনটা হবে প্রস্তুতির। এবার লক্ষ‍্য সিরিজ।