দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শনিবার ৭ উইকেটে জিতেছে ভারত। তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যেতে ১৮৩ রান পেরিয়ে গেছে ১৭ বল বাকি থাকতে।
ওপেনার পাথুম নিসানকার দায়িত্বশীল ৭৫ ও শেষ দিকে শানাকার ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে বড় সংগ্রহ গড়ে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু শ্রেয়াস, জাদেজা ও সাঞ্জু স্যামসনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সেই রান নিয়ে লড়াইও করতে পারেনি সফরকারীরা।
আগের সেরা ৬৭ ছাড়িয়ে ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন শ্রেয়াস। জাদেজা খেলেন ১৮ বলে ৪৫ রানের টর্নেডো ইনিংস।
ধর্মশালায় শেষে যে এমন ঝড় বয়ে যাবে শুরুতে একদমই বোঝা যায়নি। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের শুরুটা ছিল শান্ত। নিসানকা ও দলে ফেরা দানুশকা গুনাথিলাকা ছিলেন সাবধানী। প্রথম চার ওভারে আসে কেবল ১৫ রান। হার্শাল প্যাটেলকে দুই চার মেরে চাপ কিছুটা সরিয়ে দেন গুনাথিলাকা। এরপর প্রতি ওভারেই আসতে থাকে বাউন্ডারি।
তবে একই সঙ্গে প্রান্ত বদল করে খেলতে পারেননি দুই ব্যাটসম্যান। তাই ৮ ওভার শেষেও রান ছিলে কেবল ৫১। গুনাথিলাকার স্ট্রাইক রেট ছিল একশর নিচে, নিসানকার কিছুটা উপরে।
জাদেজাকে দুই ছক্কার সঙ্গে চার মেরে ডানা মেলার আভাস দেন গুনাথিলাকা। কিন্তু প্রথম তিন বলে ১৬ রান এসে যাওয়ার পরও বাঁহাতি স্পিনারকে স্লগ সুইপ করে ধরা পড়েন লং অনে। বলের ফ্লাইট মিস করে সুযোগ হাতছাড়া করতে বসেছিলেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। শেষ মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে বল মুঠোয় জমান তিনি। ভাঙে ৬৭ রানের জুটি।
২৯ বলে গুনাথিলাকা করেন ৩৮। এরপর চারিথ আসালঙ্কা, কামিল মিশারা, দিনেশ চান্দিমালের দ্রুত বিদায়ে ভালো শুরুর সুবিধা হারাতে বসেছিল শ্রীলঙ্কা। পাল্টা আক্রমণে সেটা হতে দেননি নিসানকা ও শানাকা।
প্রথম ৩১ বলে ৩৩ রান করা নিসানকা হাত খোলার আভাস দেন ভুবনেশ্বর কুমারকে দুই চার মেরে। যুজবেন্দ্র চেহেলকে বাউন্ডারি মেরে ৪৩ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি।
শেষ চার ওভারে ঝড় তোলেন শানাকা। তাকে সঙ্গ দেন নিসানকা। হার্শালের বলে অধিনায়কের দুই ছক্কার মাঝে চার মারেন এই ওপেনার। জাসপ্রিত বুমরাহর ওভারে তিনি মারেন তিন চার। এর শেষটি নিচু ফুলটসে, রিভার্স প্যাডল করে থার্ড ম্যানের পাশ দিয়ে।
ভুবনেশ্বর কুমারের বলে ছক্কা ও চার মেরে এগিয়ে যেতে থাকেন শানাকা। ওভারে শেষ বলে শাফল করে রিভার্স স্কুপ করার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হয়ে যান নিসানকা। ৫৩ বলে ১১ চারে তিনি করেন ৭৫ রান।
ওপেনারের সঙ্গে ২৬ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়া শানাকা দলের ইনিংস শেষ করেন টানা দুই ছক্কায়। ১৯ বলে পাঁচ ছক্কা ও দুই চারে অপরাজিত থাকেন ৪৭ রানে। শেষ ৪ ওভারে আসে ৭২ রান।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই রোহিত শর্মাকে হারায় ভারত। দুশমন্থ চামিরার বল স্টাম্পে টেনে আনেন অধিনায়ক। তবে শ্রেয়াসের ব্যাটে রান আসতে থাকে দ্রুত। আরেক ওপেনার ইশান কিষানও টেকেননি বেশিক্ষণ।
পাওয়ার প্লেতে দুই ওপেনারকে হারানো ভারত এগিয়ে যায় শ্রেয়াস ও স্যামসনের জুটিতে। বিনুরা ফার্নান্দোকে তিন চারের পর প্রভিন জয়াবিক্রমাকে টানা দুই ছক্কা হাঁকান শ্রেয়াস। পরে চামিকা করুনারত্নকে ছক্কা মেরে ৩০ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ, সবশেষ চার ম্যাচে তৃতীয়।
তখন পর্যন্ত তাকে মূলত সঙ্গই দিয়ে যাচ্ছিলেন স্যামসন। এরপর হাত খোলেন তিনিও। লাহিরু কুমারাকে চারের পর মারেন তিন ছক্কা। তবে সেই ওভারেই শেষ বলে ক্যাচ দিয়ে থামেন স্যামসন (২৫ বলে ৩৯)। ভাঙে ৪৭ বলে গড়া ৮৪ রানের জুটি।
ক্রিজে নেমেই জাদেজা চড়াও হন বোলারদের উপর। নিজের ক্রিকেট খেলে যান শ্রেয়াস। লঙ্কান বোলাররা যেন বুঝতে পারছিলেন না বল ফেলবেন কোথায়। আসতে থাকে একের পর এক বাউন্ডারি। তাতে জয় ধরা দেয় সহজেই।
ম্যাচ সেরা শ্রেয়াসের ৪৪ বলে খেলা ৭৪ রানের ইনিংস গড়া চারটি ছক্কা ও ছয়টি চারে।
তার সঙ্গে ২৬ বলে ৫৮ রানের জুটিতে জাদেজার অবদান ৪৫। তার ১৮ বলের ইনিংস সাজানো সাত চার ও এক ছক্কায়।
আগামী রোববার একই ভেন্যুতে হবে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৮৩/৫ (নিসানকা ৭৫, গুনাথিলাকা ৩৮, আসালঙ্কা ২, মিশারা ১, চান্দিমাল ৯, শানাকা ৪৭*, চামিকা ০*; ভুবনেশ্বর ৪-০-৩৬-১, বুমরাহ ৪-০-২৪-১, হার্শাল ৪-০-৫২-১, চেহেল ৪-০-২৭-১, জাদেজা ৪-০-৩৭-১)
ভারত: ১৭.১ ওভার ১৮৬/৩ (রোহিত ১, ইশান ১৬, শ্রেয়াস ৭৪*, স্যামসন ৩৯, জাদেজা ৪৫*; চামিরা ৩.১-০-৩৯-১, বিনুরা ৪-০-৪৭-০, কুমারা ৩-০-৩১-২, জয়াবিক্রমা ২-০-১৯-০, চামিকা ৩-০-২৪-০, শানাকা ২-০-২৪-০)
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ভারত ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: শ্রেয়াস আইয়ার