নেতৃত্ব হারানোর পর চট্টগ্রামে মিরাজকে ঘিরে নাটক

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে মেহেদী হাসান মিরাজের অধিনায়কত্বের অধ্যায় শেষ হওয়া নিয়ে সময়ের সঙ্গে ধোঁয়াশা কেবল বাড়ছেই। দানা বাঁধছে রহস্য, জন্ম হচ্ছে অনেক প্রশ্নের। এর মধ্যে টিম হোটেল ছাড়তে উদ্যত হয়েও শেষ পর্যন্ত রয়ে গেছেন মিরাজ। তবে তার দাবি, চট্টগ্রাম দলের এখনকার পরিবেশে সেখানে খেলার মতো অবস্থা নেই। কাঠগড়ায় তুলছেন তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান পরিচলন কর্মকর্তাকে (সিওও)।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2022, 12:24 PM
Updated : 30 Jan 2022, 01:10 PM

নেতৃত্ব হারানোর পর শনিবার সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ম্যাচটি খেলেন মিরাজ। তবে রোববার বিকেলে তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকায় ফেরার জন্য টিম হোটেল ছেড়ে নিচে নামেন। চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজির এক কর্মকর্তা তখন তাকে আবার হোটেলে নিয়ে যান। তবে মিরাজকে তখন বলতে শোনা যায়, “ইয়াসির সিওও থাকতে পারবে না, দলে থাকতে পারবে না। ও যদি চলে যায়, তাহলে আমি খেলব।”

বিপিএলে এবার চার ম্যাচ যাওয়ার পর আচমকাই অধিনায়কত্বে পরিবর্তন আনে চট্টগ্রাম। তার জায়গায় শনিবারের ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেন নাঈম ইসলাম।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নেতৃত্ব বদল আনার নজির বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক আছে। তবে মিরাজের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি কিছুটা অস্বাভাবিক মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া দল টুর্নামেন্টে বেশ ভালো শুরু করেছে। চার ম্যাচ শেষে তারা ছিল পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে। দ্বিতীয়ত, মিরাজের নিজের পারফরম্যান্সও খারাপ ছিল না।

সংশয় আরও বেড়ে যায় নেতৃত্বে বদল নিয়ে দুইরকম ব্যাখ্যায়। নতুন অধিনায়ক নাঈম শনিবার সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ম্যাচের টসের সময় বলেন, স্বেচ্ছায় নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মিরাজ। তবে দলের সিওও সৈয়দ ইয়াসির আলম ও ম্যানেজার ফাহিম মুনতাসির সুমিত জানান, ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার আগে প্রধান কোচ পল নিক্সন যে পরামর্শ দিয়ে গেছেন, সেটা অনুসরণ করেই নেতৃত্বে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নেতৃত্ব হারানোর শনিবার ম্যাচ খেললেও মিরাজের মনে ক্ষোভের রেশ রয়ে যায়। সেটির বিস্ফোরণ ঘটে রোববার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, নেতৃত্বে বদলের প্রক্রিয়ায় তার আত্মসম্মানে চোট লেগেছে।

“অধিনায়কত্ব থেকে আমাকে কেন সরাল, কিছুই বুঝলাম না। দল আমার নেতৃত্বে ভালো ফল পেয়েছে। নিজেও পারফর্ম করেছি। বাকিরাও স্বচ্ছন্দ্যে আছে, দল খুশি। কোচিং ম্যানেজমেন্ট খুশি। তাহলে কিছু না বলে কেন এই সিদ্ধান্ত?”

“দুদিন পর তো পারফর্ম করলেও আমাকে একাদশে রাখা হবে না। এটা তো স্রেফ অপমান। এখনও আমি জাতীয় দলের ক্রিকেটার। আমাদের নিজেদেরও চ্যালেঞ্জ থাকে। আমাকে সবার সেরা হতে হবে। জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে আবার ফিরতে চাই। সেভাবেই আমার মানসিকতা ঠিক রাখতে হবে। কিন্তু এমন পরিবেশে খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন।”

পরে বিকেলে স্ত্রী সন্তানসহ টিম হোটেল থেকে নিচে নেমে অপেক্ষায় থাকা সংবাদমাধ্যমের সামনে আরও ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি।

“আমার এখন আসলে খেলা মন-মানসিকতা ওরকম নেই। উনারা যে জিনিসগুলো করেছেন বা সিদ্ধান্ত যেভাবে হয়েছে, হয়তো আমার সাথে উনাদের কমিনিউকেশন গ্যাপ ছিল, এজন্য… হয়তো কোচ যাওয়ার আগে অনেক কথা বলে গেছে।”

“খেলার তিন ঘণ্টা আগে বলছে, ‘তুমি আজকে অধিনায়কত্ব করছো না। সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আমি বলেছি, ‘কেন, সিদ্ধান্ত কেন আপনারা এরকম নিলেন?’ আপনাদের চিন্তা-ভাবনা থাকলে আমাকে আগে থেকেই জানিয়ে দিতেন! আমি কি বলেছি আমাকে নেতৃত্ব দেওয়া হোক? এটা একজন খেলোয়াড়ের জন্য তো অপমানজনক। এখানে ম্যানেজার যারা আছে, সিওও মিলে হয়তো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

দল ছেড়ে যেতে চাওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, “আর কোনো কারণ নেই। আমার মনে হয়ে আমি বের হয়ে গেলে রিলাক্সে থাকতে পারব।”

মিরাজ জানান, নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি বিসিবির প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলেছেন ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঢাকায় ফিরতে চাওয়ার কারণ হিসেবে পারিবারিক সমস্যার কথাও বলেন মিরাজ।

“আমার আম্মাও একটু অসুস্থ। আমার সঙ্গে থাকাটাও জরুরি। মাঝখানে উনার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল।”

তবে মায়ের অসুস্থতা যে খুব গুরুতর কারণ নেই, সেটিও পরিষ্কার হয়ে গেছে মিরাজের পরের কথাতেই।

“মালিককে নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। মালিক অনেক ভালো মানুষ। আমার কাছে মনে হয়েছে সিওও ইয়াসিরের ব্যবহার ভালো লাগেসি, সত্যি কথা যেটা।”

কোচের পরামর্শে নেতৃত্ব বদলের যে বিবৃতি চট্টগ্রাম দলের সিওও ইয়াসির করেছেন, তা ঠিক নয় বলেও দাবি মিরাজের।

“কোচ যাওয়ার আগে নাকি আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলে গেছে। আমি নাকি নিজের জন্য ক্রিকেট খেলি। আমি নাকি সেলফিশ। ও (কোচ) আমাকে ফোন দিয়েছে, প্রায় ৩০ মিনিটের মতো কথা হয়েছে। ও এরকম কোনো কিছু বলেনি। আমাকে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তে নাকি কোচ সম্পৃক্ত। আপনারা কোচকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।”

“কোচ আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন যে, ‘আমি এরকম কিছু বলিনি। ইয়াসির যে বিবৃতি দিয়েছে মিডিয়াতে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।’ আপনারা কোচকে ফোন দেন, তাহলেই শুনতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কালপ্রিট সে (সিওও)। এখানে মালিকপক্ষকে কোনো দায়… তাদেরকে ব্যবহার করা হয়। ”

ইনিংস ওপেন করতে চাওয়া নিয়ে দল পরিচালনাকারীদের সঙ্গে মিরাজের দ্বন্দ্ব হয়েছে বলেও গুঞ্জন আছে। মিরাজ বললেন, এটা স্রেফ ক্রিকেটীয় চাওয়াই ছিল।

“দেখুন, বিপিএলে গত দুই বছর আমি তো ওপেনিংয়েই ব্যাটিং করেছি। ভালোই খেলেছি। আমি স্রেফ আমার মতামত দিয়েছি। জোর করেছি, এমন তো নয়। জোর করলে তো আপনারা দেখতেনই আমি খেলতাম (ওপেনিংয়ে)।”

বিপিএল শুরুর পর থেকেই নানা বিতকে জড়ানো এই টুর্নামেন্টে নেতৃত্বে আচমকা বদল নিয়ে কলঙ্কজনক একটি অধ্যায় আছে অতীতে। ২০১২-১৩ বিপিএলে চট্টগ্রামে একটি ম্যাচের আগে হুট করে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বিশ্রামের কথা বলে নেতৃত্ব দেওয়া হয় মোহাম্মদ আশরাফুলকে। পরে প্রমাণিত হয়, স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য ওই পরিবর্তন আনা হয়েছিল।