আশরাফুল-মিনহাজুলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক

দেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে থাকে মিনহাজুল আবেদীন ও মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম। দুই যুগে জাতীয় দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন দুজন। এখন ক্রিকেটের জগতেও দুজনের বিচরণ দুই দিকে। মিনহাজুল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন প্রধান নির্বাচক হিসেবে, স্পট ফিক্সিংয়ের কারণে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরে আশরাফুল খেলছেন এখনও। সংবাদমাধ্যমে পাল্টপাল্টি বক্তব্য দিয়ে এই দুজন এখন মুখোমুখি। দেশের ক্রিকেটে যা জন্ম দিয়েছে তুমুল আলোচনার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2022, 03:16 PM
Updated : 3 Jan 2022, 03:16 PM

বিতর্কের সূত্রপাত আশরাফুলের একটি মন্তব্য থেকে। নির্বাচক প্যানেল নিয়ে রোববার বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টিভির একটি প্রতিবেদনে নিজের মতামত জানান সিনিয়র এই ক্রিকেটার।

“একই লোক যদি একই কাজ ১১ বছর ধরে করেন, ওই জায়গাটায় আটকে থাকবে। নির্বাচক প্রক্রিয়া আমার মনে হয় এমন হওয়া উচিত, যারাই হবেন, তিন থেকে চার বছর, এক বিশ্বকাপ থেকে আরেক বিশ্বকাপ। এভাবে হলে আপনি ভিন্ন কিছু পাবেন। ভিন্ন ভাবনা আসবে।”

উল্লেখ্য, মিনহাজুল প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করছেন ২০১৬ সালের জুন থেকে। তার আগে বছর তিনেক তিনি কাজ করেন নির্বাচক কমিটির সদস্য হিসেবে।

আশরাফুলের ওই কথার প্রেক্ষিতে যমুনা টিভিতেই একটি অনুষ্ঠানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল।

“অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক কত বছর কাজ করেছে, ওর মনে হয় আইডিয়া নেই। অস্ট্রেলিয়া কি ক্রিকেট থেকে একদম পিছিয়ে গিয়েছে? এটার উত্তর আমাদের সবার জানা উচিত। জানেন কত বছর কাজ করেছে? ৯ থেকে ১২ বছরের মতো একনাগাড়ে কাজ করেছে।”

“সেখানে সে (আশরাফুল) বিশ্বকাপ থেকে বিশ্বকাপ। কোন বিশ্বকাপ? বাংলাদেশ শুধু কি (বিশ্বকাপ খেলবে?)… কোন বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে, না ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ নাকি টেস্ট ক্রিকেট খেলবে? তাহলে কি ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, টেস্টের জন্য আলাদা নির্বাচক লাগবে? ওর তো গোছানো কথা নেই। যে সমস্ত খেলোয়াড় দেশদ্রোহী হয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে সাসপেন্ড হয়, ওদের থেকে তো বেশি কিছু বা ভালো পরামর্শ আশা করা যায় না।”

এরপর সোমবার ফেইসবুক লাইভে এসে আশরাফুল বলেন, মিনহাজুলের আক্রমণে তিনি মানসিকভাবে আহত হয়েছেন।

“আমার কাছে প্রশ্ন ছিল নির্বাচক প্যানেল নিয়ে। সেখানে আমার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছি। কোনো ব্যক্তির নাম বলিনি, আমি ওই পদের কথা বলেছি। কিন্তু নান্নু ভাই ওই যমুনা টিভিতেই দেখলাম সরাসরি আক্রমণ করলেন আমার নাম ধরে। এটা খুব দুঃখজনক। আমার কথাটা নান্নু ভাইকে নিয়ে বা কারও নাম ধরে ছিল না, আমার অভিজ্ঞতা থেকে মতামতটা দিয়েছি।”

“উনি খুব সুন্দর করে অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন। খুব চমৎকার উদাহরণ। আমি কিন্তু নান্নু ভাইকে সরানোর কথা বলিনি। আমার মতামত দিয়েছি যেটা মনে হয়েছে। আমার মতে, নির্বাচক প্যানেল একটা পেশা হতে পারে না যে এখানে থাকব ১০-১২ বছর। এটা হবে একটা সম্মানের জায়গা, ৩-৪ বছর থাকবেন।”

দুই দশকেরও বেশি আগে মিনহাজুলের মাধ্যমেই যে ঢাকা লিগে প্রথমবার সুযোগ পেয়েছিলেন আশরাফুল, এটা অবশ্য অকপটেই জানান তিনি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করেন। পাশাপাশি আশরাফুলের অভিযোগ, মিনহাজুলের কারণেই এখন আর জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন না।

“আপনি যে ইন্টারভিউ দিলেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছে আপনার গুডবুকে আমি নেই বলেই সুযোগ পাচ্ছি না। এটা এখন বোঝা যাচ্ছে।”

দেশের ক্রিকেটের দুই ব্যক্তিত্বের এমন পাল্টপাল্টি বক্তব্যে বেশ বিব্রত বিসিবি। নির্বাচক প্যানেল বিসিবির যে বিভাগের অধীনে, সেই ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের নতুন প্রধান জালাল ইউনুস সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন ব্যাপারটি।

‘আশরাফুল যেহেতু বর্তমান খেলোয়াড় ও সাবেক একজন অধিনায়ক এবং যেহেতু এখনও খেলছে, আমি মনে করি সরাসরি এভাবে আক্রমণ করা ঠিক হয়নি। এটা নিয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বোর্ড সভাপতির সঙ্গে আলাপ করব এটা নিয়ে। কোনো বা কারও ব্যাপার নিয়ে এভাবে আক্রমণ করা… যেহেতু আপনি একটা পজিশন নিয়ে আছেন বোর্ডে, ওই জায়গা থেকে এমন কিছু না করাই ভালো ছিল।”

“যেহেতু নির্বাচক কমিটি আমাদের অধীনে, আমাদের আওতায় আছে, আজকেও আমি আলাপ করেছি তাদের সঙ্গে। বোর্ড সভাপতির সঙ্গে আলাপ করব, দেখা যাক…।”