লিড পাওয়ার দিনে তিন সেঞ্চুরি হাতছাড়ার হতাশা

প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রাপ্তি আছে। আশা জাগিয়ে পূরণ করতে না পারার আক্ষেপও আছে। দিনজুড়ে এমনই হর্ষ-বিষাদের নানা রঙের খেলা। তবে দিন শেষের সমীকরণে ড্রেসিং রুমে হয়তো বসছে হাসিমুখের মেলা। নিউ জিল্যান্ডে আরও একটি দিন কাটাল বাংলাদেশ তৃপ্তির হিল্লোল জাগানিয়া সুন্দর।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2022, 06:27 AM
Updated : 3 Jan 2022, 07:14 AM

দাপুটে দ্বিতীয় দিনের পর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ শক্ত করে হাতে নিল ম্যাচের লাগাম। দিন শেষে রান ৬ উইকেটে ৪০১। প্রথম ইনিংসে লিড এখন ৭৩ রানের।

১৫৬ ওভার ব্যাট করা হয়ে গেছে। উপমহাদেশের বাইরে আগে কখনোই এত ওভার খেলতে পারেনি বাংলাদেশ।

নিউ জিল্যান্ডের পেস আক্রমণের চারজনের সবার ওভার ছুঁয়েছে ৩০। কেউই পারেননি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে। দলের সফলতম পেসার টিম সাউদি ও সাম্প্রতিক সময়ের ভয়ঙ্কর অস্ত্র কাইল জেমিসন মিলে ৬২ ওভার বোলিং করেও পাননি উইকেট। সাকিব-তামিমবিহীন বাংলাদেশের ব্যাটিং এমন দৃঢ়তার প্রদর্শনী মেলে ধরবে, কে ভাবতে পেরেছিল টেস্ট শুরুর আগে!

যাদের সৌজন্যে দলের এমন উজ্জ্বল ছবি, তাদের সবার সঙ্গী অবশ্য ব্যক্তিগত আক্ষেপ। সম্ভাবনা জাগিয়েও যে সেঞ্চুরি পাননি কেউ!

৭০ রান নিয়ে দিন শুরু করা মাহমুদুল হাসান জয় দিনের শুরুতে ফেরেন ৭৮ রানে। পরে দুর্দান্ত জুটিতে দলকে শক্ত অবস্থানে নেন মুমিনুল হক ও লিটন দাস। কিন্তু তারাও পাননি কাঙ্ক্ষিত শতরান।

২৪৪ বল খেলেন মুমিনুল। উপমহাদেশের বাইরে দেড়শর বেশি বল খেললেন তিনি প্রথমবার। কিন্তু উপমহাদেশের বাইরে প্রথম সেঞ্চুরি অধরাই রইল ৮৮ রানে আউট হয়ে।

লিটনও পেলেন না দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। দারুণ খেলেও বাজে শটে তার বিদায় ১৭৭ বলে ৮৬ রান করে।

প্রথম ঘণ্টার পর উইকেট দিনজুড়েই ছিল দারুণ ব্যাটিং বান্ধব। বাংলাদেশ কাজে লাগায় তা। সারাদিনে ৮৯ ওভারে উইকেট পড়েছে ৪টি। রান উঠেছে ২২৬।

রান কিছুটা কম হওয়ার মূল কারণ, প্রথম সেশনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সেখানে খানিকটা এগিয়ে ছিল নিউ জিল্যান্ডই। ওই সেশনে ২৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে রান আসে মোটে ৪৫।

আগের দিন অসাধারণ ধৈর্য ও স্থিরতা দেখিয়ে ব্যাট করা মাহমুদুল হাসান জয় নতুন দিনের শুরুতে ছিলেন পুরো উল্টো। অস্থির কিছুক্ষণের উপস্থিতি শেষে তিনি আউট হন বাজে শটে। ২১১ বল খেলে ৭৮ রানে থামে তার ইনিংস।

দ্বিতীয় নতুন বলে ট্রেন্ট বোল্ট দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে (৫৩ বলে ১২)।

শুরুটা ভীষণ অস্বস্তিময় ছিল মুমিনুল হকেরও। ৮ রানে অল্পের জন্য তার ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি জেমিসন। ৯ রানে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েও বাংলাদেশ অধিনায়ক বেঁচে যান নিল ওয়্যাগনারের বলটি ‘নো’ হওয়ায়।

দিনের প্রথম রান করেন তিনি ৫০ মিনিট অপেক্ষা করে ২৯ বল খেলে। প্রথম সেশনে ৭২ বল খেলে করতে পারেন স্রেফ ৯ রান।

তবে দ্বিতীয় সেশনে পাল্টে যায় চিত্র। লিটন উইকেটে যাওয়ার পর থেকেই সাবলিল ব্যাটিং করতে থাকেন। কোনো বোলারই তাকে বিপাকে ফেলতে পারেনি। ক্রমে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন মুমিনুলও।

ছন্দে থাকলে যেমন খেলেন লিটন, এ দিনও উপহার দেন সেরকম দৃষ্টিনন্দন সব শট। তার ড্রাইভগুলো ছিল নান্দনিক, পুলগুলো নিয়ন্ত্রিত, কাটগুলো প্রায় নিখুঁত।

মুমিনুল কিছু বাউন্ডারি পান ব্যাটের কানায় লেগে, কিছু বল সীমানায় পাঠান নিজের জোনে পেয়ে। তার প্রথম ১০০ বলে বাউন্ডারি ছিল স্রেফ ১টি। পরের ৩৮ বলের মধ্যে বাউন্ডারি মারেন আরও ৭টি। ১৪৭ বলে তিনি স্পর্শ করেন ফিফটি, তার ক্যারিয়ারের যা মন্থরতম।

লিটন ৪১ করে ফেলেন ৪৫ বলেই। পরে বোলিংয়ের কৌশল বদলে তার শরীর সোজা শর্ট বল ও আঁটসাঁট লেংথে বল করেন কিউইরা। তিনিও ধৈর্য ধরে খেলার ধরন বদলে আঁকড়ে রাখেন উইকেট। ফিফটিতে পা রাখেন ৯৩ বল খেলে।

গত বছর টেস্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত কেটেছে তার, নতুন বছরও শুরু করলেন সেখান থেকেই।

মুমিনুলের মনোযোগ নাড়িয়ে দিতে শুধু একের পর এক শর্ট বলই নয়, স্লেজিংয়ের পথ বেছে নেন ওয়্যাগনার। মুমিনুল শুরুতে এড়িয়ে গেলেও পরে কিছুটা যোগ দেন কথার লড়াইয়ে। তবে মনোযোগে চিড় তার ধরেনি।

দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। পরের সেশনের প্রথম ঘণ্টাও দুজন কাটিয়ে দেন নির্বিঘ্নে।

যখন তারা পাচ্ছেন সেঞ্চুরির সুবাস, হারিয়ে ফেলেন দুজনই। ট্রেন্ট বোল্টের লেংথ থেকে ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ মুমিনুল। রক্ষা পাননি তিনি রিভিউ নিয়ে।

লিটনের সঙ্গে তার জুটি থামে ১৫৮ রানে।

লিটনের বিদায় আরও হতাশার। বোল্টের অনেক বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে তাড়া করে ক্যাচ দেন তিনি উইকেটে পেছনে।

দিনের বাকি সময়টা স্বস্তিতে শেষ করেন ইয়াসির আলি চৌধুরি ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ কয়েকটি শট খেলে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন মিরাজ। চতুর্থ দিনে দলের লিড আরও বাড়ানোর ভার এই দুজনের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩২৮

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: (আগের দিন ১৭৫/২) ১৫৬ ওভারে ৪০১/৬ (মাহমুদুল ৭৮, মুমিনুল ৮৮, মুশফিক ১২, লিটন ৮৬, ইয়াসির ১১*, মিরাজ ২০*; সাউদি ৩২-৪-৯৪-০, বোল্ট ৩০-১১-৬১-৩, জেমিসন ৩০-৯-৭২-০, ওয়্যাগনার ৩১-৮-৭২-৩, রবীন্দ্র ২৬-৪-৬৪-০)